ঢাকার সাভারে জমি দখলের উদ্দেশে এক রংমিস্ত্রির বসতবাড়িতে হামলা চালিয়ে ঘর-বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা। এসময় ভাঙচুরে বাধা দেওয়ায় কুপিয়ে এবং পিটিয়ে নারী-শিশুসহ বেশ কয়েকজনকে আহত করা হয়।
আহতদের উদ্ধার করে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে স্থানীয়রা। খবর পেয়ে সাভার মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার (১ আগস্ট) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সাভারের ফুলবাড়িয়ার নয়াপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী আনোয়ার হোসেন সাভার মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কাউকেই গ্রেফতার ও মামলা নথিভুক্ত করেনি পুলিশ।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৩০ বছর আগে আনোয়ার হোসেনের বাবা মৃত তাজুল ইসলাম ২৪ শতাংশ জমি কিনে বাড়ি করেন। কিন্তু জমি রেজিস্ট্রি করার সময় দাগ ও খতিয়ান ভুল হওয়ার সুযোগে ৫-৬ বছর আগে থেকে আব্দুর সাত্তার ও বাবুলের নির্দেশে দ্বীন ইসলাম, সজিব, মো. সৈকত, শাকিল, রাহুলসহ বেশ কয়েকজন তাদের জমি দাবি করে হুমকি দিতে থাকে। পরবর্তীতে দাগ খতিয়ান ভুল সংশোধনের দেওয়ানি মামলা করেন আনোয়ার। যা আদালতে চলমান। এমন অবস্থায় জমি দখলে নিতে শুক্রবার সকাল থেকে প্রায় ৫০ জন সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে বাড়িঘর ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়।
বিজ্ঞাপন

রোববার (৩ আগস্ট) সরেজমিনে দেখা যায়, আনোয়ার হোসেনের চার কক্ষের টিনশেড বাড়ির পুরোটাই গুঁড়িয়ে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। শুধু তাই না, বাড়ির কোনো জিনিসপত্রও সরাতে দেয়নি। খাট, শোকেস, আলমারি ঘরের মধ্যে ভাঙা অবস্থায় রয়েছে। আর ফ্রিজ, সেলাই মেশিন, ঘরে থাকা চাল-ডালসহ খাদ্যসামগ্রী পার্শ্ববর্তী নদীতে ফেলে দিয়েছে। এমনকি পানির মোটরও খুলে নিয়ে গেছে তারা।
ভুক্তভোগী আনোয়ার হোসেন বলেন, এর আগেও আমার জমি ও বাড়ি দখলে নিতে তারা চেষ্টা চালায়। এর মধ্যে কিছু জমি তারা দখলে নিয়ে নেয় এবং গত বছর আমার একটি বাড়িতে ভাঙচুর চালায়। এরপর আদালত থেকে স্থিতাবস্থা জারি হয়। যে যেখানে আছে, সেভাবেই থাকবে। কিন্তু আমার ওপর থেকে হুমকি-ধমকি কমেনি। বিষয়টি থানা পুলিশকে জানালে তারা বিচারের সমাধানের আশ্বাস দেয়। কিন্তু সন্ত্রাসীরা কোনো কিছু না মেনে আমার বাড়িতে হামলা চালায়।

এসময় কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। রংমিস্ত্রির কাম কইরে খাই। সারাজীবনের সবকিছু ওরা আমার শেষ কইরা দিল। আমার এহন ঘুমানোর জায়গা নাই। কিন্তু আমার মামলা এখনও পর্যন্ত নেয় নাই।’
হেমায়েতপুর ট্যানারি ফাঁড়ির ইনচার্জ আমির হোসেন হামলায় নির্দেশদাতাদের নাম বাদ দিতে পরামর্শ দেন বলে জানান আনোয়ার। বলেন, ‘আমির স্যার কইছে যারা ঘটনাস্থলে আইছিল খালি তাগো নাম দেন। নির্দেশদাতাগো নাম বাদ দেন’।
আনোয়ারের স্ত্রী মোসা. মাকসুদা বেগম বলেন, ‘হামলার সময় আমি বাজারে গেছিলাম। খবর পাইয়া আইসা দেখি আমার ঘর ভাইঙা তছনছ কইরা ফালাইছে। আমি ওগো ঠেকাইতে গেলে ওরা লোহার রড দিয়া আমার মাথায় বাড়ি মারতে যায়। আর দ্বীন ইসলাম ও সৈকত আমার বড় মেয়ে আরিফারে মাথার চুল ধইরে এলোপাতাড়ি মারে। আর কাউরে যাতে ফোন দিতে না পারে, ওর ফোন নিয়া যায়।’
এদিকে হামলার ঘটনায় বাঁধা দিলে গেলে বেশ কয়েকজনকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করে সন্ত্রাসীরা। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জানা যায়, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা এক সময় আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে চলাফেরা করত। ৫ আগস্টের পর থেকে তারা আবার বিএনপি নেতাদের সঙ্গে চলাফেরা শুরু করে এবং একইভাবে মানুষের জমি-বাড়ি দখল করতে থাকে।
এ বিষয়ে ট্যানারি ফাড়ির ইনচার্জ আমির হোসেন তিনি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তবে অভিযোগ থেকে নির্দেশদাতাদের নাম বাদ দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি। বলেন, ‘আমি বলছি যারা প্রকৃত অপরাধী, তাদের নাম দিতে। খোঁজ নিয়ে দেখছি সাত্তার, বাবুল ঘটনাস্থলে ছিল না। ওইদিন তারা হাসপাতালে ছিল’।
আর সাভার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহিনুর কবির দ্রুত এ ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
প্রতিনিধি/এসএস

