‘মোরা গরিব মানু, মোগো কপালে ইলিশ নেই। এগুলা খাবে বড়লোক মানু, আমরা না।’—আক্ষেপের সুরে কথাগুলো বলছিলেন বরগুনার আমতলীর চাওড়া ইউনিয়নের কাউনিয়া গ্রামের অটোচালক মনিরুল ইসলাম।
বাংলার নদ-নদী ও সাগরে এখন ইলিশের মৌসুম। বঙ্গোপসাগর ও মোহনার নদীগুলোতে প্রতিদিনই ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালি ইলিশ। কিন্তু বাজারে গিয়ে দেখা যাচ্ছে—এই ইলিশ যেন সাধারণ মানুষের কপালেই নেই। চড়া দামে ইলিশ এখন উচ্চবিত্তের খাবারে পরিণত হয়েছে। এক সময় যে ইলিশ ছিল উৎসবের খাবার, তা এখন বিলাসিতার প্রতীক।
বিজ্ঞাপন
তালতলী মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বাজারে ইলিশের চারটি গ্রেড অনুযায়ী মূল্য ধরা হচ্ছে, ২০০–৩০০ গ্রাম: প্রতি কেজি ৮৫০ টাকা (মণপ্রতি ৩৫ হাজার টাকা)। ৪০০–৬০০ গ্রাম: প্রতি কেজি ১,৫০০ টাকা (মণপ্রতি ৬০ হাজার টাকা)। ৭০০–৯০০ গ্রাম: প্রতি কেজি ২,০০০ টাকা (মণপ্রতি ৮০ হাজার টাকা)। ১ কেজির বেশি ওজন: প্রতি কেজি ৩,০০০ টাকা (মণপ্রতি ১ লাখ ২০ হাজার টাকা)।
স্থানীয় জেলে দেলোয়ার হাওলাদার বলেন, গত দুই বছর ধরে নিজেরাই ইলিশ খেতে পারছি না। মাছ ধরি ঠিকই, কিন্তু সেগুলো চলে যায় বাইরের জেলাগুলোতে।
মাছ ব্যবসায়ী মজিবুর রহমান ফরাজী জানান, পায়রা নদীর জেলেদের ধরা ইলিশ স্থানীয় বাজারে খুব একটা বিক্রি হয় না। ঢাকা, যশোর, খুলনা, পাবনা, মাদারীপুর, শরীয়তপুরসহ বিভিন্ন জেলায় চলে যায়। সবচেয়ে বড় সাইজের ইলিশ বেশি যায় মাদারীপুরে, যেখানকার প্রবাসী পরিবারগুলো বেশি দামে কিনে নেয়।
তিনি আরও বলেন, অবতরণ কেন্দ্রের ইলিশ পাইকারদের ডাকের ভিত্তিতে বিক্রি হয়। ফলে স্থানীয় খুচরা ক্রেতাদের পক্ষে এই দামে ইলিশ কেনা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।
বিজ্ঞাপন
এ নিয়ে স্থানীয় শিক্ষক ও চাকরিজীবীদেরও রয়েছে হতাশা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, আগে বছরে একবার হলেও ইলিশ খাওয়া হতো। এখন বাজারে গিয়ে শুধু তাকিয়ে আসতে হয়। অর্থনৈতিক বৈষম্য আর বাজার সিন্ডিকেটের কারণে ইলিশ এখন আর ‘সবার মাছ’ নয়। নদীতে ধরা পড়লেও প্লেটে ওঠে শুধু বিত্তশালীদের।
আরও পড়ুন
এ বিষয়ে আমতলী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা তন্ময় কুমার দাশ বলেন, আমরা ইলিশের উৎপাদন ও সংরক্ষণে কাজ করি। দাম নির্ধারণ আমাদের কাজ নয়।
বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মহসিন মিয়া বলেন, প্রতি জেলায় একটি মূল্য নির্ধারণ কমিটি থাকে। সেই কমিটির সভায় আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রতিনিধি/টিবি

