রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

সমুদ্র জোয়ারে সেন্টমার্টিনে তলিয়ে যাচ্ছে ঘরবাড়ি ও হোটেল-রিসোর্ট

জেলা প্রতিনিধি, কক্সবাজার 
প্রকাশিত: ২৯ জুলাই ২০২৫, ০৫:১৩ এএম

শেয়ার করুন:

সমুদ্র জোয়ারে সেন্টমার্টিনে তলিয়ে যাচ্ছে ঘরবাড়ি ও হোটেল-রিসোর্ট
  • বেড়েছে পানির উচ্চতা, দুর্ভোগে হাজারো মানুষ

অমাবস্যার জোয়ারের পানি ও সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে সেন্টমার্টিন দ্বীপে প্রায় ২০টি ঘরবাড়ি এবং হোটেল-রিসোর্ট পানিতে তলিয়ে গেছে। একই সঙ্গে শতাধিক ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রলার চলাচলে বাধার সৃষ্টি হয়েছে, ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। জোয়ারের আঘাতে অন্তত ১১টি সমুদ্র তীরবর্তী হোটেল-রিসোর্ট ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।


বিজ্ঞাপন


স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কাশেম জানান, টানা চার দিন ধরে বৈরী আবহাওয়ার কারণে সাগরের উত্তাল ঢেউ দ্বীপের সুরক্ষা বাঁধে আঘাত হানছে। অনেকের ঘরবাড়ি সাগরের পানিতে বিলীন হয়ে গেছে। ‘প্যারাডাইজ’ নামে তিনতলা বিশিষ্ট একটি রিসোর্ট সম্পূর্ণভাবে পানিতে ডুবে গেছে। গাছপালা উপড়ে পড়েছে, এবং পানির তোড়ে বিভিন্ন স্থাপনায় ফাটল দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য ছৈয়দ আলম বলেন, ঢেউয়ের আঘাতে বাঁধের চারপাশে ভাঙন ধরেছে। বিভিন্ন অংশ দিয়ে লবণাক্ত সমুদ্রের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে। জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে সেন্টমার্টিন দ্বীপ বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

অন্যদিকে, গত ২৪ জুলাই থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত টানা চার দিন বৈরী আবহাওয়ার কারণে যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রলার চলাচল পুরোপুরি বন্ধ ছিল। ২৮ জুলাই সোমবার স্থানীয়দের কথা বিবেচনায় নিয়ে ৭০ জন যাত্রী ও কিছু মালামাল বহন করে ট্রলার চলাচল শুরু হয়। তবে সাগর উত্তাল থাকায় ট্রলার চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। ঝুঁকি নিয়েই টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে পৌঁছাতে হয়েছে ট্রলারগুলোকে।

সেন্টমার্টিন বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান বলেন, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে দ্বীপের বাসিন্দারা খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকটে পড়েন। এবারও নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় বাজারে এসব পণ্যের সরবরাহ কমে আসছে। এই অবস্থায় আবহাওয়া বৈরী থাকলে দ্বীপের প্রায় ১২ হাজার মানুষ চরম কষ্টে পড়বে।


বিজ্ঞাপন


সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম বলেন, অমাবস্যার জোয়ারের পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হওয়ায় অন্তত ১৫-২০টি ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে এবং শতাধিক ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতির মুখে পড়েছে ১১টি হোটেল-রিসোর্ট। এতে দ্বীপবাসীর ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। অন্যদিকে, নৌযান চলাচলে বাধা থাকায় সেন্টমার্টিন বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এভাবে আবহাওয়ার পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে দ্বীপে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত দুই দিনে জোয়ারের পানিতে সেন্টমার্টিনের চারপাশে লণ্ডভণ্ড অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দ্বীপকে রক্ষায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ ছাড়া বিকল্প নেই।

পরিবেশবাদীরা বলছেন, যে হোটেলগুলো জোয়ারের পানির আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলোর বেশিরভাগই সরকারি অনুমোদন ছাড়া নির্মিত। এছাড়া, কয়েকটি হোটেলের বিরুদ্ধে বালিয়াড়ি দখলের অভিযোগও রয়েছে।

sts

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, সেন্টমার্টিনে জোয়ারের পানির আঘাতে কিছু হোটেল ও ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এমন খবর পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর