খেলতে যাওয়ার কথা বলে ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন লামিম হাসান। কিন্তু ফিরে এসেছিলেন একটি চোখ হারিয়ে। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নারগুন গ্রামের মমিনুল ইসলাম ও সাবিনা ইয়াসমিন দম্পতির সন্তান লামিম, অংশ নিয়েছিলেন ‘জুলাই আন্দোলনে’। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বাম চোখে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। সহযোদ্ধারা রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
চোখের আলো হারিয়ে ফেলা লামিম এখনও হার মানেননি। স্বপ্ন দেখেন একটি নতুন, ন্যায়ের বাংলাদেশ—যেখানে থাকবে না অন্যায়, দুর্নীতি কিংবা বিভেদ।
বিজ্ঞাপন
![]()
চোখ হারিয়েও আফসোস নেই লামিমের
‘আমার চোখটা এখন পুরোপুরি ছোট হয়ে গেছে, কিছুই দেখতে পাই না। মাঝে মাঝে পানি পড়ে আর ঘামে সমস্যা হয়। কিন্তু আমার কোনও আফসোস নেই। কারণ আমি তো চোখ হারিয়েছি, কিন্তু আমার অনেক ভাই শহীদ হয়েছে। আমি তাদের জন্য দোয়া করি,’—বলছিলেন লামিম।
তিনি ঢাকা মেইলকে আরও বলেন, এক বছর পার হয়ে গেছে আন্দোলনের। আমি চাই, একটা সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে উঠুক। আমার যেসব ভাই এখনও অসুস্থ, তাদের যেন ভালো চিকিৎসা হয়। যারা শরীরের অঙ্গ হারিয়েছে, তাদের যেন বিদেশে উন্নত চিকিৎসা করানো হয়—এটাই আমার প্রার্থনা।
বিজ্ঞাপন
![]()
গর্বিত পিতার, অপ্রাপ্তির হাহাকার
সন্তানের এমন আত্মত্যাগে গর্বিত বাবা মমিনুল ইসলাম বলেন, সেদিন ও আন্দোলনে গিয়েছিল আমাদের না জানিয়েই। গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পেয়ে হাসপাতালে যাই। পরে দিনাজপুর ও ঢাকায় চিকিৎসা করাই। বাড়ির জমি বন্ধক রেখে চিকিৎসা করিয়েছি। কোনো কষ্ট নেই, কারণ আজ আমরা ফ্যাসিস্টমুক্ত দেশে নিশ্বাস নিতে পারছি।
তিনি বলেন, সরকার কিছু সহযোগিতা করেছিল, তবে তা ছিল অপ্রতুল। এখন ছেলের চোখে আবার সমস্যা দেখা দিয়েছে। আমরা চাই, তাকে যেন বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করানো হয়।
বুলেট শরীরে, বিচার ও চিকিৎসার অপেক্ষায় আরও অনেকে লামিম একা নন। এখনও অনেক ‘জুলাই যোদ্ধা’ শরীরে গুলির ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন। কেউ হারিয়েছেন অঙ্গ, কেউ চোখ, কেউ এখনও শয্যাশায়ী।
![]()
সহযোদ্ধা মেহরাব হোসেন বলেন, এক বছর পার হলেও আমরা অনেকেই পর্যাপ্ত চিকিৎসা পাইনি। কেউ কেউ একবার সহযোগিতা পেলেও সেটি ছিল খুবই অল্প। আমাদের দাবি, দ্রুত উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক।
প্রশাসনের দাবি: প্রক্রিয়া চলছে
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইসরাত ফারজানা জানান, জেলায় তিন শতাধিক আহত জুলাই যোদ্ধাকে আমরা সহযোগিতা করেছি। তবে আরও অনেকে আছেন যারা এখনও তালিকার বাইরে। আমরা তাদের তালিকা প্রস্তুত করছি এবং উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছি।
প্রতিনিধি/এসএস

