নিম্নচাপের প্রভাব ও মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় চট্টগ্রামে মাঝারি থেকে ভারী টানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এর মধ্যে সাগরের প্রবল জোয়ারে কর্ণফুলী ও হালদা নদী উপচে পড়ে ডুবে গেছে চট্টগ্রাম মহানগরীর কিছু নিচু এলাকা ও সড়ক।
এতে চট্টগ্রাম নগরীসহ আশপাশের এলাকায় লোকজন চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। বিশেষ করে অফিস-আদালতে যেতে কর্মজীবীদের এবং স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের সড়কে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। গন্তব্যে পৌঁছাতে বাড়তি ভাড়া গুণতে হচ্ছে নগরবাসীকে।
বিজ্ঞাপন
নগরবাসীর তথ্যমতে, বৃষ্টির কারণে রোববার (২৭ জুলাই) সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন সড়ক ডুবে যাওয়ায় রিকশা, অটোরিকশা, টেম্প্যু, বাসসহ আরও বিভিন্ন গণপরিবহণ একেবারে কম দেখা যায়। এতে সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসের সকালে কর্মস্থলমুখী যাত্রীদের বিপাকে পড়তে হয়।
গণপরিবহন না পেয়ে অনেকে বাড়তি ভাড়ায় রিকশা-অটোরিকশা নিয়ে কর্মস্থলে যান। এছাড়া স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদেরও ভোগান্তিতে পড়তে হয়। বৃষ্টিপাতের সময় সাগরের প্রবল জোয়ারের চাপে কর্ণফুলী ও হালদা নদীতে পানিপ্রবাহ বেড়ে গিয়ে খাল দিয়ে নগরীর বিভিন্ন নিচু এলাকা ও সড়ক ডুবে যায় বলে জানান নগরবাসীরা।
![]()
নগরীর চান্দগাঁও থানার বলীরহাট এলাকার বাসিন্দা নুরুল আমিন জানান, জোয়ারের পানি কর্ণফুলী ও হালদাসহ বিভিন্ন খাল-নালা উপচে নগরীর মোহরা, বাকলিয়া, রাহাত্তারপুল এলাকা ডুবে গেছে। আগ্রাবাদসহ আরও কয়েকটি এলাকা ডুবে গেছে। এতে সড়ক এবং সড়কের আশপাশের দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
বিজ্ঞাপন
চট্টগ্রামের পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, জোয়ারের সময় কর্ণফুলী নদীর পানি একেবারে বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছিল। রোববার বিকেল তিনটায় নগরীর কালুরঘাট এলাকার কর্ণফুলী নদীতে জোয়ারের উচ্চতা ছিল ৩ দশমিক ৬৫ মিলিমিটার। সেখানে ৪ দশমিক ১৫ মিলিমিটার জোয়ারের উচ্চতাকে বিপদসীমা হিসেবে ধরা হয়। এ হিসেবে পানি বিপদসীমার মাত্র আধা মিলিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এছাড়া চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার পাঁচপুকুরিয়া এলাকায় বিকেল ৩টায় হালদা নদীর পানি ৪ দশমিক ৭৮ মিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। বিপদসীমা হচ্ছে ৮ দশমিক ৪২ মিলিমিটার। এ হিসেবে পানি এখনও বিপদসীমা থেকে ৪ মিলিমিটার নিচে আছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের চট্টগ্রামের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আনিস হায়দার খান বলেন, কর্ণফুলী নদীর পানি জোয়ারের সময় একেবারে বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছে। হালদা নদীর পানি এখনও স্বাভাবিক আছে। জোয়ারের সময় কিছু কিছু এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। তবে ভাটার সময় আবার পানি নেমে যাচ্ছে।
এদিকে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা মো. ইসমাইল ভূঁইয়া বলেন, বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে ও মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। শনিবার (২৬ জুলাই) রাত থেকেই বন্দরনগরীজুড়ে টানা বৃষ্টিপাত শুরু হয়, যা রোববার বিকেল পর্যন্ত অব্যাহত আছে।
আবহাওয়া অধিদফতরের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, শনিবার বিকেল ৩টা থেকে রোববার বিকেল ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১০৭ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। নিম্নচাপ উপকূল পেরিয়ে গেলেও বায়ুচাপের তারতম্য বিরাজ রয়েছে।
আগামী অন্তত ৪৮ ঘণ্টা ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। বৃষ্টিপাতে চট্টগ্রাম নগরের কোথাও কোথাও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে। পাশাপাশি পাহাড় ধসের আশঙ্কাও আছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
প্রতিনিধি/এসএস

