বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলার উপকূলবর্তী সংরক্ষিত বনাঞ্চলে প্রতিনিয়তই গাছ কেটে বন উজাড় ও জমি দখলের ঘটনা ঘটছে। কোথাও গড়ে উঠছে অবৈধ করাতকল, কোথাও আবার ভুয়া উন্নয়ন প্রকল্পের নামে নির্মাণকাজ চালিয়ে চলছে কোটি টাকার অবৈধ বাণিজ্য। এসব অপকর্মে বন বিভাগের একাংশ কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টদের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।
জেলার কুমীরমারা, গোড়াপদ্মা, নিশানবাড়িয়া, চরদুয়ানী, তালতলী ও আমতলী এলাকার সংরক্ষিত বনাঞ্চলে সরেজমিনে দেখা গেছে, বনের ভেতর প্রশস্ত কাঁচা রাস্তা নির্মাণ, ঘের খনন, বসতবাড়ি ও কৃষি প্রকল্পের নামে জমি দখলের প্রতিযোগিতা চলছে। এমনকি সাগর সংলগ্ন বনেও গাছ কেটে মাছ ধরার জন্য খুঁটি ও জাল বসানো হয়েছে, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করছে।
বিজ্ঞাপন
করাতকল লাইসেন্স বিধিমালা-২০১২ অনুযায়ী সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে করাতকল স্থাপন নিষিদ্ধ থাকলেও বরগুনা জেলায় এমন অন্তত ২৫টি এবং পটুয়াখালীসহ আশেপাশে অর্ধশতাধিক অবৈধ করাতকল চালু রয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব করাতকল থেকে মাসিক মাসোহারা নেন বন বিভাগের একাংশ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুমীরমারা খালের পাশে ১৫ ফুট প্রশস্ত একটি কাঁচা রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে, যা স্থানীয়দের মতে, ভুয়া উন্নয়ন প্রকল্পের আড়ালে বন উজাড়ের একটি বড় উদাহরণ। আওয়ামী লীগের সর্বশেষ নির্বাচনের পরই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়। গহীন বনের ভেতর এখন তৈরি হচ্ছে মাছের ঘের, কৃষি খামার ও পশুর খামার। যেখানে এক সময় বন্য প্রাণীর বিচরণ ছিল, এখন তা ব্যবহৃত হচ্ছে মাদক পাচার ও আস্তানার জন্য। কুমীরমারা ও গোড়াপদ্মা এলাকায় দেখা গেছে, সড়কের পাশে গবাদিপশুর অবাধ চারণভূমি।
সরকারি ‘সুফল প্রকল্প’-এও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। প্রকৃত সুবিধাভোগীদের বাদ দিয়ে উৎকোচের বিনিময়ে বনবহির্ভূত লোকদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকল্পের অর্থ ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন বিট অফিসার, রেঞ্জার ও ডিএফও।
সাবেক এক ইউপি সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রতিবাদ করেও কোনো লাভ হয়নি। বরং বনবিভাগের কিছু কর্মকর্তা নিজেরাই এর সুবিধাভোগী।
বিজ্ঞাপন
পরিবেশবাদী সংগঠন ‘ধরা’র সদস্য আরিফুর রহমান বলেন, পাথরঘাটার লালদিয়া চরে গাছ কেটে মাছ ধরার খুঁটি ও জাল বসানো হয়েছে। এতে প্রতিদিন এক থেকে দুই টন মাছের পোনা ধ্বংস হচ্ছে। তিনি এসব অনিয়মে বন বিভাগের সরাসরি সম্পৃক্ততার অভিযোগ করেন।
সুন্দরবন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি মনির হোসেন কামাল বলেন, বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে বহুবার প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও বাস্তবে কোনো পরিবর্তন আসেনি। বরং বনবিভাগের উদাসীনতায় দিন দিন পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য চরম হুমকিতে পড়ছে।
বরগুনা অঞ্চলের রেঞ্জার আখতারুজ্জামানের বিরুদ্ধেও রয়েছে মাসোহারা গ্রহণের গুরুতর অভিযোগ। স্থানীয় সূত্র জানায়, তিনি প্রতি মাসে লক্ষাধিক টাকা আদায় করেন অবৈধ করাতকল, ঘের এবং জেলেদের ট্রলার থেকে।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সফিকুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
প্রতিনিধি/টিবি

