সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কে ১৭টি মৃত্যুফাঁদ, ৬ মাসে শতাধিক দুর্ঘটনা

জেলা প্রতিনিধি, বরগুনা
প্রকাশিত: ২২ জুলাই ২০২৫, ০২:২১ পিএম

শেয়ার করুন:

পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কে ১৭টি মৃত্যুফাঁদ, ৬ মাসে শতাধিক দুর্ঘটনা

পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের আমতলী উপজেলার শাখারিয়া থেকে বান্দ্রা পর্যন্ত ৩৭ কিলোমিটার সড়কজুড়ে রয়েছে ১৭টি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক। এসব বাঁকে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসেই ঘটেছে শতাধিক দুর্ঘটনা, প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১০ জন। আহত হয়েছেন চার শতাধিক। স্থানীয়দের অভিযোগ, দুর্ঘটনা রোধে কর্তৃপক্ষের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই।

barguna_1


বিজ্ঞাপন


সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকের তালিকা দীর্ঘ, সংকেত বা আলোর ব্যবস্থা নেই। দুর্ঘটনাপ্রবণ বাঁকগুলোর মধ্যে রয়েছে: শাখারিয়া, ব্রিকস ফিল্ড, কেওয়া বুনিয়া, মহিষকাটা, চুনাখালী, আমড়াগাছিয়া খানকা, ডাক্তার বাড়ি, ঘটখালী, তুলাতলী, একে স্কুল চৌরাস্তা, ছুটিকাটা, মানিকঝুড়ি, খুড়িয়ার খেয়াঘাট, খলিয়ান, কল্যাণপুর ও বান্দ্রা।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে এসব দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন প্রায় ৪৫০ জন। এর মধ্যে শতাধিক ব্যক্তি স্থায়ী পঙ্গুত্বে ভুগছেন। দুর্ঘটনায় নিঃস্ব হয়েছেন বহু পরিবার।

barguna_2

আরো জানা যায়, জুলাই মাসেই ১২টি দুর্ঘটনা, প্রাণ হারিয়েছে ২ জনের। ২১ জুন কেওয়াবুনিয়া বাঁকে একটি ইজিবাইককে চাপা দেয় ইকরা লাক্সারি পরিবহণ। এতে এক শিশুসহ একই পরিবারের চারজন নিহত হয়েছিলেন। ১৩ জুলাই চুনাখালী সেতুতে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান হিমাদ্রী কুন্ডু নামের এক ব্যক্তি। ২০ জুলাই মহিষকাটা বাঁক ঘুরতে গিয়ে উল্টে যায় হানিফ পরিবহণ, আহত হন ৫ জন। ১১ জুলাই ছুরিকাঁটা ও মহিষকাটা বাঁকে পৃথক সংঘর্ষে আহত হন অনেকে। সর্বশেষ ১ জুলাই থেকে ২০ জুলাই—মাত্র ১৯ দিনে ১২টি দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটে আরও ২ জনের।


বিজ্ঞাপন


barguna_3

এ বিষয়ে চালকদের অভিযোগ, এসব বাঁকে অনেক জায়গায় কোনো সতর্কতামূলক চিহ্ন নেই, আর যেটুকু আছে, তাও ম্লান ও অস্পষ্ট। ফলে হঠাৎ বাঁকে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে যানবাহন।

একাধিক চালক বলেন, সিগন্যাল লাইট নেই, যেগুলো ছিল তাও এখন অকেজো। রাতে এসব বাঁকে দুর্ঘটনার ঝুঁকি দ্বিগুণ হয়ে যায়।

barguna_4

ভুক্তভোগী দেলোয়ার হাওলাদার বলেন, আমার ভাই সড়ক দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে গেছে। চিকিৎসা আর ওষুধের খরচ চালাতে গিয়ে জমিজমা সব বিক্রি করে ফেলেছি। এখন পথে বসতে হয়েছে।

খুড়িয়ার খেয়াঘাট এলাকার বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম বলেন, প্রায় প্রতিদিনই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। অথচ সঠিক চিহ্ন, গতি নিয়ন্ত্রণ বা আলোর কোনো ব্যবস্থা নেই। বাঁকগুলো পুনর্গঠন করে প্রয়োজনীয় সংকেত স্থাপন করা জরুরি।

barguna_5

বরগুনা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কুমারেশ বিশ্বাস বলেন, সড়কের কিছু স্থানে সিগন্যাল বাতি বসানো হয়েছে। বাকিগুলোতেও বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি মুছে যাওয়া চিহ্নগুলো পুনরায় আঁকা হবে।

বাংলাদেশ নিরাপদ সড়ক আন্দোলন (নিসআ) বরগুনা জেলা শাখার সভাপতি সোহেল তানভির বলেন, এসব বাঁক বহুদিন ধরেই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত। কিন্তু সড়ক বিভাগ কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তাদের এই উদাসীনতা অমার্জনীয়। এভাবে চলতে থাকলে দুর্ঘটনা কমবে না, বরং বাড়তেই থাকবে।

প্রতিনিধি/ এজে

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর