ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী সাজিদ আবদুল্লাহর রহস্যজনক মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও নিরাপদ ক্যাম্পাসসহ ১৫ দফা দাবিতে প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (১৯ জুলাই) বেলা ১১টার দিক থেকে বিক্ষোভ শুরু হয়। কর্তৃপক্ষ থেকে লিখিতভাবে আশ্বাস পাওয়ার পর বিকেল সাড়ে চারটার দিকে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।
বিজ্ঞাপন
এর আগে এদিন বেলা ১১টা থেকে শিক্ষার্থীরা প্রশাসন ভবনের সামনে জড়ো হতে শুরু করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরাও এতে অংশ নেন। পরে শিক্ষার্থীরা পৌনে ১২টার দিকে প্রশাসন ভবনের দু’পাশই আটকে দেন। এতে উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রার, প্রক্টরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তারা সেখানে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন।

এদিকে দুপুর দেড়টার দিকে উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টর শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলতে আসেন। তবে শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিয়ে তাদের ঘিরে ধরেন এবং লিখিত আশ্বাস ছাড়া আন্দোলন থেকে পিছু হটবেন না বলে জানিয়ে দেন। পরে প্রশাসনের ব্যক্তিরা স্থান ত্যাগ করলে শিক্ষার্থীরা প্রধান ফটকে তালা দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।
বিজ্ঞাপন
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো
হল ও প্রশাসনের তদন্ত কমিটিতে ২ জন করে শিক্ষার্থী অন্তর্ভুক্ত করা, ২৪ ঘণ্টার ভেতর প্রাথমিক রিপোর্ট ও আগামী ৬ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবহেলা এবং নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতে ব্যর্থতার দায়ভার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নিতে হবে এবং এর ক্ষতিপূরণ স্বরূপ দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাজিদের পরিবারকে কমপক্ষে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া ও সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে আগামী ৬ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া নতুন হলের নাম ‘সাজিদ আব্দুল্লাহ’র নামে নামকরণ, তদন্ত কমিটিতে নিরপেক্ষ শিক্ষকদেরকে অন্তর্ভুক্ত, প্রত্যেকটি আবাসিক হলে শিক্ষার্থীদের এন্ট্রি ও এক্সিট শতভাগ মনিটরিংয়ের আওতায় আনা, বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশে পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তাবেষ্টিত বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ, ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত স্ট্রিট লাইট স্থাপন ও সক্রিয় রাখা, ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা, উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার, হল প্রভোস্ট, প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা তাদের সবাইকে নিয়মিতভাবে ক্যাম্পাসে উপস্থিত থাকা ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও সমস্যা সমাধানে সরাসরি জবাবদিহিতার আওতায় আনা এবং ক্যাম্পাসের মেইন গেটের পাশাপাশি সব এন্ট্রি পয়েন্টে নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ ও এসব সমস্যা সমাধানে নির্দিষ্ট সময়সীমা ঘোষণা করে তার বাস্তবায়নের নিয়মিত অগ্রগতি প্রকাশ করার দাবি করেন তারা।

পরে বিকেল চারটার দিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি বাস্তবায়নের লিখিত আশ্বাস দেওয়া হয়। রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মনজুরুল হক স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবিসমূহ মেনে নেওয়া হলো।
শিক্ষার্থীরা জানান, দাবিসমূহ ৬ দিনের ভেতর বাস্তবায়ন করতে হবে এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। দাবি না মানলে আবারও আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
উল্লেখ্য, গত ১৭ জুলাই বিকেলে শাহ আজিজুর রহমান হলের পুকুর থেকে আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী সাজিদ আবদুল্লাহর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি শহীদ জিয়াউর রহমান হলের ১০৯ নম্বর কক্ষে থাকতেন। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও হল কর্তৃপক্ষ পৃথক দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
প্রতিনিধি/এসএস

