মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কখনোই মুজিবনগরে আসেননি। মুজিবনগরের আগের নাম ছিল বৈদ্যনাথতলা। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল, এই বৈদ্যনাথতলাকেই অস্থায়ী সরকারের শপথস্থল হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছিল। তাহলে প্রশ্ন উঠতেই পারে—এই ঐতিহাসিক স্থানটির নাম ‘মুক্তিপুর’ বা ‘মুক্তিনগর’ কেন রাখা হয়নি? বিষয়টি আমার বোধগম্য নয়। আমি এ প্রশ্ন রেখে যাচ্ছি মেহেরপুরবাসী এবং গোটা দেশের মানুষের কাছে।’
শনিবার (১৯ জুলাই) দুপুরে গাংনী উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে একটি মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় দলীয় প্রতিনিধি, সকল সরকারি কর্মকর্তা এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অংশ নেন। আলোচনার বিষয় ছিল উপজেলার সমস্যা ও সম্ভাবনা।
বিজ্ঞাপন
মনির হায়দার আরও বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাস করি। বাংলাদেশকে একটি রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে সহিষ্ণু রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চাই, যেখানে সকলের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত থাকবে, কেউ বঞ্চিত হবে না। কিন্তু আমরা জানি, বিগত ১৬ বছরে এ দেশে এমন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের অধিকার ছিল জিম্মি। মানুষ ততটুকু অধিকার পেত, যতটুকু দয়া করে দেওয়া হতো। কে কতটুকু অধিকার পাবে, সেটাও আরেকজন নির্ধারণ করে দিত। এ পদ্ধতি গোটা দেশকে জিম্মি করে ফেলেছিল। এটিই ছিল ফ্যাসিবাদ, একটি মাফিয়া-তান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা।’
তিনি বলেন, ‘এমন এক শাসকগোষ্ঠী আমাদের ওপর চেপে বসেছিল, যারা শুধু আমাদের অধিকার কেড়ে নেয়নি, বরং আমাদের নানাভাবে নিপীড়ন-নির্যাতনের দিকে ঠেলে দিয়েছিল। আমরা নাগরিক হিসেবে নিজের পরিচয়টাই যেন ভুলে যাচ্ছিলাম। তারা প্রতি পাঁচ বছর পর একটি ভুয়া নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে বলত, ‘আমরাই বিজয়ী’। এরপর পাঁচ বছরের জন্য তারা নিজেদের রাজত্ব কায়েম রাখত।’
‘আমরা তখন এক ধরনের হতাশা ও অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিলাম। কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমতে, আমাদের ভাবনার সীমা ছাড়িয়ে গিয়ে বাস্তবে একটি ‘জুলাই অভ্যর্থনা’ নামক অধ্যায়ের সূচনা হয়, যা জুলাই ও আগস্ট মাসজুড়ে বিস্তৃত। এটা ছিল এক মুক্তির উপলক্ষ।’
মনির হায়দার আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের মূল লক্ষ্যই ছিল শাসন-শোষণ থেকে মুক্তি। সেই মুক্তিযুদ্ধ না হলে এ ভূখণ্ড পেতাম না। অতএব, মুক্তিযুদ্ধকে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। এটি তার মহিমায় চিরকাল উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। তবে তাই বলে কি ৫ আগস্টের গণঅভ্যর্থনার কথা আমরা বলতে পারব না? দুটো ঘটনাই ছিল মুক্তির চেতনায় উদ্বুদ্ধ। তাই দুটিকেই আমরা জাতি হিসেবে স্মরণ করব।’
বিজ্ঞাপন
সভা শুরুতেই প্রধান অতিথি ভাষা আন্দোলন (১৯৫২), মহান মুক্তিযুদ্ধ (১৯৭১), ও বিগত ৫৩ বছরের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বিশেষভাবে তিনি শ্রদ্ধা জানান ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে যারা ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে জীবন উৎসর্গ করেছেন সেই তরুণ শহীদদের প্রতি। পাশাপাশি প্রায় ৩০ হাজার গুরুতর আহত এবং অঙ্গহানি হওয়া যোদ্ধাদের সুস্থতা কামনা করেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ। সভা সঞ্চালনা করেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোতালেব হোসেন।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন—সাবেক এমপি ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন; উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি রেজাউল হক; বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর গাংনী শাখার প্রতিনিধি জিল্লুর রহমান; মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার শামসুল আলম সোনা; বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবলু; জাতীয় যুব শক্তির সংগঠক মুজাহিদুল ইসলাম; গাংনী মহিলা ডিগ্রি কলেজের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক; কাথুলী ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান হোসাইন মোহাম্মদ; বামন্দি ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান শাহ আলম; বাঁশবাড়িয়া টেকনিক্যাল কলেজ অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্টের অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ স্বপন; গাংনী আলিয়া মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট আহসান হাবীব; গাংনী দারুচ্ছালাম জামে মসজিদের ইমাম রুহুল আমিন; গাংনী উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি জুলফিকার আলী কানুন; গাংনী প্রেসক্লাবের সভাপতি তৌহিদ উদ দোলা রেজা; গাংনী বাজার কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার সালাউদ্দিন শাওন।
অনুষ্ঠান শেষে মাননীয় প্রধান অতিথিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
প্রতিনিধি/একেবি

