শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

মুহূর্তেই বিলীন হলো জয়নালদের বসত ঘর

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২২ জুন ২০২২, ০২:১৬ পিএম

শেয়ার করুন:

মুহূর্তেই বিলীন হলো জয়নালদের বসত ঘর

মহারশি নদীর বাঁধের পাশে জয়নাল মিয়ার একখানা বাড়ি ছিল। পরিবার-পরিজন নিয়ে এখানেই থাকতেন তিনি। সুন্দর চলছিল তাদের সংসার। কিন্তু পাহাড়ি এক ঢলে মুহূর্তেই সবকিছু লন্ডভন্ড হয়ে গেল। এখন বাড়ির চিহ্ন হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে কিছু গাছ-পালা আর বাকিসব ঢলে ভেসে গেছে।

শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার সদর ইউনিয়নের মহারশি নদ-সংলগ্ন রামেরকুড়া গ্রাম। এ গ্রামে নদীর বাঁধের পাশে একটি বাড়িতে বসবাস করতেন জয়নাল মিয়া। একই বাড়িতে থাকতেন তার মা ও ছোট ভাই। খুব একটা স্বচ্ছল পরিবার নয় তাদের। কাজ না করলে সংসারে দেখা দেয় টানাপোড়েন।


বিজ্ঞাপন


বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) রাতে ভারি বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় মহারশি নদীর বাঁধ ভেঙে যায়। ভাঙনের তোড়ে জয়নাল মিয়ার বাড়িটি ভেসে যায়। চোখের সামনে বিলীন হয়ে যায় দুটি টিনের দুচালা বসত ঘর, একটি রান্না ঘর, টিউবওয়েলসহ সব স্থাপনা। এরপর জয়নালের মা ও তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একই গ্রামের খালার বাড়িতে উঠেন।

তিনি বলেন, ‘মাথা গোঁজার একমাত্র ঠাঁই বাড়িটি বন্যায় ভেসে গেছে। দুই চোখ যেন অন্ধকার! কিছুই ভালো লাগছে না। নতুন করে বাড়ি-ঘর তৈরি করব সেই সামর্থ্য নাই। সরকারিভাবে খাদ্যের প্যাকেট ছাড়া আর সাহায্য পাইনি।’

sherpur

জয়নাল মিয়ার মতো এবারের বন্যায় সোবাহান, সামিউল, আবু হারেজ, ফুলু মিয়ার ঘরের মত ৩০ ঘর বিলীনসহ অন্তত চার শতাধিক ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।


বিজ্ঞাপন


উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় উপজেলার ১ হাজার ৩০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া বন্যায় ১৮টি কাঁচা ও পাকা সড়ক এবং মহারশি নদীর বিভিন্ন স্থানে দেড় কিলোমিটার অংশ ক্ষতি হয়েছে। ১৫০ পুকুরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। ঢলের পানিতে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। তবে জনপ্রতিনিধির ভাষ্য মতে, ক্ষতির পরিমাণ হবে কয়েকগুণ।

ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়নের বৈরাগী পাড়া এলাকার বাঢু মিয়া জানান, ভারি বর্ষণ ও ঢলে শুক্রবার সকালে তার একমাত্র বসত ঘর মাটির দালানটি পড়ে যায়। এ সময় তার বসত ঘররের আসবাবপত্রও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সদর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য ও ঝিনাইগাতী বণিক সমিতির নেতা জাহিদুল হক মনির ঢাকা মেইলকে জানান, বন্যার পানির স্রোতে তার ইউনিয়নের ১, ২, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তত ১০ ঘর বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া কমপক্ষে ৮০ ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া মহারশি নদীর বাঁধের দুই কিলোমিটার অংশের ক্ষতি হয়েছে। একই সঙ্গে কাঁচা-পাকা রাস্তা-ঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং দেড় শতাধিক পুকুরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে।

কাংশা ইউপির চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমান জানান, পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট দু-দফা বন্যায় তার ইউপির ৫০ থেকে ৬০ বাড়ি-ঘরে ক্ষতি হয়েছে। কাঁচা-পাকা ১১ সড়কের আংশিক ক্ষতি হয়েছে। পানিতে ভেসে গেছে দেড় শতাধিক পুকুরের মাছ।

sherpur

ধানশাইল ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম জানান, ইউপির বিভিন্ন গ্রামে ৮-১০ ঘর পড়ে গেছে ও শতাধিক বাড়ি-ঘরের আংশিক ক্ষতি হয়েছে। উত্তর অঞ্চলের সব পুকুরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। সব কয়টি কাঁচা সড়কের কমবেশি ক্ষতি হয়েছে এবং দুই-তিনটি পাকা সড়কেরও ক্ষতি হয়েছে।

মালিঝিকান্দা ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোজাম্মেল জানান, বন্যায় ১ থেকে ১০টি বাড়ি-ঘর, পাকা সড়ক ২টি ও ৯টি ওয়ার্ডেই কাঁচা সড়কের আংশিক ক্ষতি হয়েছে। একই সঙ্গে ভেসে গেছে ২৫ থেকে ৩০টি পুকুরের মাছ।

হাতিবান্দা ইউপি চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, তার ইউপির সব কয়টি কাঁচা সড়কেই ক্ষতি হয়েছে।

ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারুক আল মাসুদ ঢাকা মেইলকে জানান, পাহাড়ি ঢলে ক্ষয়-ক্ষতির তালিকা নিরুপণ শেষে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার দফতরে পাঠানো হবে।

টিবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর