ঢাকা—এ শহর যেন স্বপ্নের এক জঞ্জালখচিত রাজপ্রাসাদ। উঁচু উঁচু ভবন, চোখ ধাঁধানো শপিং মল, বিলাসবহুল গাড়ির শোভাযাত্রা—এই শহরে কেউ দিনে পাঁচবার কফি খায়, আবার কেউ দিনে একবেলা খেতে পায় না।
রাতে ঝলমলে আকাশচুম্বী ভবনের আলোয় সেজে ওঠে শহর। অন্যপাশে শিশুকে বুকে চেপে ধরে ফুটপাতে তপ্ত পিচে ঘুমিয়ে থাকে ছিন্নমূল মা।একজনের ঘরে ঠান্ডা এসির বাতাস, আরেকজন বৃষ্টির রাতে ছেঁড়া পলিথিনে ঢেকে রাখে মাথা।
বিজ্ঞাপন

এই শহরে কেউ ‘বিলাসিতা’ শব্দটা ভালোভাবে বোঝে, কেউ দিনে পাঁচবার কফি পান করে, আর একজন—সারাদিনে একমুঠো ভাত জোটাতে ব্যর্থ হয়। কারও চোখে জ্বলজ্বলে স্বপ্ন—বিদেশে যাওয়ার, বড় অফিসার হওয়ার; আবার কারও চোখে শুধুই কান্না—যেখানে জীবন মানে শুধু বেঁচে থাকা।
টাওয়ারের ছাদে হেলিপ্যাড, আর নিচে নর্দমার পাশে বসে কেউ খালি চোখে চায় জ্যোৎস্না। ঢাকার বাতাসে গন্ধ—পারফিউমের, আবার সেই একই বাতাসে গন্ধ—পচা খাবারের।

বিজ্ঞাপন
এ শহর ভালোবাসে ধনীকে, ছবির মতো করে তাকে তুলে ধরে বিজ্ঞাপনে। কিন্তু এই শহর চেনে না গার্মেন্টসের মেয়েটাকে, যে রাত ১১টায় ফিরছে ক্লান্ত শরীরে, ক্ষুধার যন্ত্রণায়।
ঢাকা যেন দুধ আর বিষ একসাথে বয়ে যাওয়া নদী। এই শহর কাউকে সব দেয়, কাউকে কিছুই দেয় না।কারও জীবন রঙিন পোস্টারে, কারও জীবন ফেলে দেওয়া খবরের কাগজে মোড়ানো।

কিন্তু তারপরও এই শহরেই মানুষ বাঁচে, হাসে, স্বপ্ন দেখে। এই ঢাকা আমাদের—সবাইকে নিয়েই। হোক সে বিলাসী, হোক সে ছিন্নমূল, ঢাকা সবার—সে ধনী হোক বা দরিদ্র, ছোট হোক বা বড়, তিনতলার ছাদে হোক, কিংবা ফুটপাথে সবার জন্য একটাই শহর, একটাই ভালোবাসার নাম—ঢাকা।
লেখা: সাংবাদিক মো. জাহিদ হাসান মিলু।

