রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

কবি-প্রাবন্ধিক ও লোকসংস্কৃতি গবেষক মহিবুর রহিম আর নেই

জেলা প্রতিনিধি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
প্রকাশিত: ১৭ জুলাই ২০২৫, ০৯:১১ পিএম

শেয়ার করুন:

কবি-প্রাবন্ধিক ও লোকসংস্কৃতি গবেষক মহিবুর রহিম আর নেই
গবেষক মহিবুর রহিম

কবি, প্রাবন্ধিক ও লোকসংস্কৃতি গবেষক মহিবুর রহিম আর নেই। বুধবার (১৬ জুলাই) রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার কাউতলীতে নিজ বাসভবনে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫২ বছর।

বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) সকাল সাড়ে আটটায় কাউতলী জামে মসজিদে তার প্রথম জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। পরে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী উপজেলার ছাতিরচর গ্রামে—সেখানে বাদ জোহর দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।


বিজ্ঞাপন


কবি মহিবুর রহিম স্ত্রী, তিন পুত্র এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তিনি দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপজনিত রোগে ভুগছিলেন।

মহিবুর রহিম ছিলেন বাংলা একাডেমির আজীবন সদস্য। কাব্যচর্চার পাশাপাশি তিনি সাহিত্য বিশ্লেষক ও লোকসংস্কৃতি গবেষক হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেন। পেশাগত জীবনে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চিনাইর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কলেজে বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

১৯৭৩ সালের ১৫ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী উপজেলার ছাতিরচর গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবেই তার সাহিত্যচর্চার সূচনা হয়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৯৭ সালে বাংলা একাডেমির তরুণ লেখক প্রকল্পে প্রশিক্ষণ লাভ করেন।

সাহিত্যজীবনে তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ ও গবেষণাগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে: অতিরিক্ত চোখ, হে অন্ধ তামস, অনাবাদি কবিতা, দুঃখগুলো অনাদির বীজপত্র, সবুজ শ্যামল মন, শিমুল রোদে রঙিন দিন, হৃদয়ে আমার কোন মন্দা নেই, হাওর বাংলা এবং গবেষণামূলক গ্রন্থ ভাটি বাংলার লোকভাষা ও লোকসাহিত্য।


বিজ্ঞাপন


লোকসাহিত্য ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়েও তার গবেষণা ছিল বিস্তৃত। কুমিল্লা অঞ্চলের লোকসংগীত, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লোকসাহিত্য, ভাটি বাংলার লোকঐতিহ্য নিয়ে তিনি দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তার গবেষণা স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির জাতীয় সাংস্কৃতিক সমীক্ষা গ্রন্থমালা-য়। বাংলা একাডেমির লোকজ সংস্কৃতির বিকাশ কর্মসূচি-র অধীনে ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লোকসাহিত্য’ নিয়েও তিনি গবেষণা করেন।

সাহিত্য ও গবেষণায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মহিবুর রহিম পেয়েছেন: প্রজ্ঞা শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি পদক; স্মৃতি ৫২ সম্মাননা; রকি সাহিত্য পদক ২০১১; মেঠোপথ সাহিত্য পদক ২০১৩; শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সাহিত্য পদক ২০১৪; সুকুমার রায় সাহিত্য পুরস্কার ও সম্মাননা ২০১৮; আল মাহমুদ সাহিত্য সম্মাননা ২০২৪—এছাড়াও তিনি বহু সাহিত্য ও গবেষণা সংস্থার পক্ষ থেকে বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হন।

কবি মহিবুর রহিম তার দীর্ঘ সাহিত্যজীবনে বাংলা সাহিত্যের প্রধান কবি আল মাহমুদের সান্নিধ্য লাভ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী এবং এক্বামাতে দীনের আন্দোলনের একজন সক্রিয় সহযোগী।

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর