শহীদ আবু সাঈদের প্রথম শাহাদাতবার্ষিকী স্মরণে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ‘শহীদ আবু সাঈদ ও জাগ্রত চেতনার বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেমিনারে দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অবস্থা এবং জুলাই বিপ্লবের স্মৃতিচারণা করে নানা আয়োজন ছিল।
বুধবার (১৬ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
বিজ্ঞাপন
প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত এ সেমিনারে প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি এবং আলোচকবৃন্দসহ আলোচনা রাখেন অনেকেই। অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ্ হাসান নকীব।
জুলাই-আগস্টের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, মানুষের মনের মধ্যে পুষে রাখা ক্ষোভ, হাজারও না পাওয়া গল্প এবং নানা অবিচারের এক চুড়ান্ত ফলাফল আমরা জুলাই-আগস্টে দেখতে পেয়েছি। আমরা খুব ভাগ্যবান, কারণ আমরা ইতিহাসের সঠিক দিকে থাকার সৌভাগ্য পেয়েছিলাম। শহীদ আবু সাঈদের পরিবারের সঙ্গে তার কবরস্থান জিয়ারত করার সুযোগ হয়েছিল আমার। খুব সাধারণ একটা পরিবার, সেই সাধারণ পরিবারের ছেলে আবু সাঈদ যে অসাধারণ কাজ করে গেছে–আমি এ বিষয়টা যতোবারই ভাবি অবাক হই। তার এই ত্যাগ কখনই ভুলবার নয়।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান দেশের এই হতাশার সময়গুলোতেও যে বিষয়টা আমাকে আশাবাদী করে তা হলো, যারা জুলাই-আগস্ট বুকে ধারণ করে, আমি মনে করি তাদের ভেতর থেকে একটা বিষয় সম্পূর্ণ দূরীভূত হয়েছে, সেটা হলো ‘ভয়’, এ ছাত্রসমাজ আর ভয় পায় না। অনেকে কিঞ্চিৎ ভয় দেখানোর চেষ্টা করে। আমি তাদেরকে বলতে চাই, আপনি বা আপনারা কাকে ভয় দেখাচ্ছেন? আমরা হলাম জিন্দা শহীদ। আমরা যখন ঘর থেকে বের হয়েছি, এমন চিন্তা করে বের হইনি যে আমরা আবার ফিরে আসবো। তাই আজকে যখন আপনারা আমাদেরকে নতি স্বীকার করাতে চান, আমি এটাকে বলবো অরণ্যে রোদন। আমরা শুধু কোটার জন্য লড়িনি, আমরা লড়েছি ইনসাফের জন্য, আমাদের সংগ্রাম ছিলো ইনসাফের। ১৬ বছর ধরে হাসিনা যে তরিকায় দেশ শাসন করেছে সেই তরিকায় এখন আর কেউ ৬ মাসও টিকতে পারবে না।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান জুলাই যোদ্ধাদের সালাম জানিয়ে বলেন, ৮ আগস্ট আমি যখন তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ছিলাম, তখন সেখানকার টিভি চ্যানেল টিআরটি টিভিতে বলেছিলাম এই জুলাই বিপ্লবের নায়ক শহীদ আবু সাঈদ। আমি উল্লেখ করেছিলাম, কীভাবে তিনি দুই হাত প্রসারিত করে বুলেটের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। এই বিপ্লব কখনো বৃথা যেতে পারে না। প্রায় ষোলোশো তরুণ জনতা শহীদ হয়েছেন কিন্তু এর টার্নিং পয়েন্ট ছিল আবু সাঈদের শাহাদাত। শহীদ আবু সাঈদসহ সকল শহীদের রক্তের বিনিময়েই আমরা এই স্বাধীনতা পেয়েছি।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, আজ গোপালগঞ্জে ফ্যাসিবাদের প্রেতাত্মারা জুলাই যোদ্ধাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এর আগে আমি বলেছিলাম যদি জুলাই যোদ্ধারা বিভক্ত হয়ে পড়ে, তবে ফ্যাসিবাদ আবার মাথাচাড়া দেবে। সেটির বাস্তব প্রমাণ আজ গোপালগঞ্জে মিলেছে। এখানে রাজনীতিবিদ ও সরকারের ব্যর্থতা রয়েছে। সরকার জানত এনসিপি কর্মীরা গোপালগঞ্জে যাবে, তবু তারা সেভাবে আগাম ব্যবস্থা নেয়নি। এই ব্যর্থতার পরে সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দায়িত্বে যিনি আছেন, তিনি কী আর ক্ষমতায় থাকতে পারে কিনা সেটি নিয়েও এখন চিন্তা করার দরকার। আজকের এ ঘটনা আমাদের জন্য এক ধরনের ওয়েক-আপ কল। আমাদের আবার ঐক্যবদ্ধভাবে রাস্তায় নামতে হতে পারে। এটি বারবার প্রমাণিত যে যখন তরুণরা রুখে দাঁড়ায় তখন সেই রাষ্ট্রকে আর পদানত করা যায় না। আমি মনে করি, আমাদের আর স্পার্টাকাস আর চে গুয়েভারার গল্প পড়ার দরকার নাই। আমরা আজ থেকে পড়বো শহীদ আবু সাঈদ, মুগ্ধ, নাফিজদের গল্প।
সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন এবং উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) প্রফেসর ড. মোহা. ফরিদ উদ্দীন খান। এছাড়াও সেমিনারে আলোচক হিসেবে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারীজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. মোস্তাফিজুর রহমান মন্ডল, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ এবং আইসিটি সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক মো. ছাইফুল ইসলামসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীবৃন্দ।
এসময় জুলাই বিপ্লবের ওপর নির্মিত একটি তথ্যবহুল ভিডিও ডকুমেন্টরি প্রদর্শন করা হয়, যেখানে আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলো তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি জুলাই যোদ্ধারা তাদের অভিজ্ঞতা, ত্যাগ ও সংগ্রামের কথা আবেগঘনভাবে বর্ণনা করেন।
প্রতিনিধি/টিবি

