রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

বালিয়াডাঙ্গী বিএনপির সম্মেলন বানচালের অভিযোগ, জড়িত জেলার নেতারা

জেলা প্রতিনিধি, ঠাকুরগাঁও
প্রকাশিত: ১৪ জুলাই ২০২৫, ০৮:৪০ এএম

শেয়ার করুন:

‘বালিয়াডাঙ্গী বিএনপির সম্মেলন বানচালের অভিযোগ, জড়িত জেলার নেতারা’

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের নির্বাচনী ফলাফল বানচালের অভিযোগ করেছেন সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ড. টিএম মাহবুবর রহমান। তিনি দাবি করেন, জেলা বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা এই ষড়যন্ত্রে জড়িত।

রোববার (১৩ জুলাই) রাত ৯টায় ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীনের গাড়িতে হামলার প্রতিবাদ এবং সম্মেলনে অনিয়মের অভিযোগে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি।


বিজ্ঞাপন


এর আগে, নির্বাচনের ফলাফল স্থগিতের প্রতিবাদে চৌরাস্তায় বিক্ষোভ করেন সভাপতি পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট সৈয়দ আলমের সমর্থক ও নেতাকর্মীরা।

সংবাদ সম্মেলনে ড.  টিএম মাহবুবর বলেন, ‘সাড়ে তিন বছর ধরে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠনে জেলা নেতৃবৃন্দ বারবার হস্তক্ষেপ করেছেন। ওয়ার্ড কমিটিতে এখনো আওয়ামী লীগ ও জামায়াতপন্থী লোকজন রয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ও সেক্রেটারির গঠনতান্ত্রিক ক্ষমতা প্রয়োগ করতেও দেওয়া হয়নি।’

তিনি অভিযোগ করেন, ‘জেলা কমিটির অভ্যন্তরীণ গ্রুপিং ও ভবিষ্যৎ পদ-পদবি লাভের লোভে বালিয়াডাঙ্গীকে নষ্ট করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইতিমধ্যে উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নের কমিটি নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। সেখানেও একটি ওয়ার্ডের সদস্য কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখনো সেই ইউনিয়ন কমিটিতে আওয়ামী লীগের ও জামাতের লোকজন আছে। এমনকি ওয়ার্ডের দায়িত্বে আছে বাস্তুহারা লীগের সাধারণ সম্পাদক। তাদেরকে অপসারণ করা হয়নি।’


বিজ্ঞাপন


ড. মাহবুবর প্রশ্ন তোলেন, ‘ভোট গণনার পরে ২৪৪ ভোট কেটে ২৪২ কেন করা হলো? ব্যালট ব্যাগ কেন লুকিয়ে রাখা হলো? কেন পুনরায় গণনা করতে দেওয়া হয়নি?’ তিনি দাবি করেন, “সিডিউল অনুযায়ী ১২ জুলাই ভোট গ্রহণ এবং ফলাফল ঘোষণার কথা থাকলেও তারা এখন বলছেন ফলাফল ঘোষণা হয়নি—এটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। বিএনপি'র কোন গঠনতন্ত্রে লেখা আছে যে, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করবে জেলা বিএনপির একজন যুগ্ম সম্পাদক পয়গাম আলী। যিনি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলারও সদস্য এবং এই প্রত্যেকটি ঘটনার সাথে তিনি জড়িত। তিনি জেলার সাধারণ সম্পাদক হওয়ার জন্য এই কাজগুলো করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘জেলা কমিটি যদি কোন হটকারি সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে সেটা প্রত্যাহার করতে হবে। ২০১৭ সালের নির্বাচিত কমিটির পর আবার এখানে কমিটি হচ্ছে। আপনারা জানেন এই উপজেলা সম্মেলনে যেভাবে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হয়েছে মনে হয় বাংলাদেশের আর অন্য কোথাও এভাবে নির্বাচন হয়নি। এটাকে জেলা কমিটির সেক্রেটারির হওয়ার স্বার্থে কোন ব্যক্তি যদি এই বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা কে নিয়ে ছিনিমিনি খেলার চেষ্টা করে আমরা সেটা মেনে নিব না।’ 

সভাপতি পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট সৈয়দ আলম বলেন, ‘১২ জুলাই শনিবার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা সম্মেলন সুস্থভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। প্রথমে সভাপতি পদে ফলাফলে ২৪৪ ভোট পেয়ে আমাকে বেসরকারিভাবে ঘোষিত করা হয়। জেলা কমিটি ও নির্বাচন কমিশনের যারা ছিলেন তারা পরে সেটা কেটে দিয়ে ২৪২ করা হয়। তানিয়া পরবর্তীতে নিয়ে ঝামেলা তৈরি হয়। এই ঝামেলা নিরসনের জন্য জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সাল আমিন আসে দেখে ও পর্যালোচনা করে আমাকে সভাপতি নির্বাচিত ঘোষণা করেন।’

তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘ফলাফল ঘোষণার পর মির্জা ফয়সল আমীনের গাড়িবহরে হামলা চালানো হয়, এতে জামায়াতপন্থী ও আমার প্রতিপক্ষ জড়িত থাকতে পারে। এই ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা জানাই ও দোষীদের শাস্তির দাবি করছি। আর এই ঘটনার সাথে আমি বা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সহ আমাদের কোন লোকজন জড়িত ছিল না।’

সভাপতি পদের আরেক প্রার্থী আবু হায়াত নুরুন্নবী বলেন, ‘ভোট গণনার সময় প্রতিপক্ষের কর্মীরা অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে। পরে আমি শুনি, দু’পক্ষই ২৪২ করে সমান ভোট পেয়েছে। কিন্তু এরপর গণনা কক্ষে জেলা নেতাদের জোর করে স্বাক্ষর নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। আমি এই আচরণের তীব্র নিন্দা জানাই।’

তিনি বলেন, ‘জেলা সাধারণ সম্পাদকের ওপর হামলার ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’

উল্লেখ্য— রোববার (১৩ জুলাই) বিকালে ঠাকুরগাঁও শহরের কালীবাড়িতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বাড়িতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মো. পয়গাম আলী লিখিত বক্তব্যে জানান, ‘নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণার আগেই অ্যাড. সৈয়দ আলম ও ড. মাহবুবর রহমানের নেতৃত্বে তাদের সমর্থকরা গণনা কক্ষে প্রবেশ করে ব্যালট ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে এবং নেতাদের জোর করে ফলাফল ঘোষণায় বাধ্য করতে চায়।’

তিনি আরও জানান, ‘এই সময় নেতৃবৃন্দকে প্রায় চার ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। গণনাকক্ষে উপস্থিত মির্জা ফয়সল আমীন পরিস্থিতি বিবেচনায় কৌশলে নেতৃবৃন্দকে উদ্ধার করেন।’

তিনি নিশ্চিত করেন, ‘এই নির্বাচন সংক্রান্ত এখনো কোনো স্বাক্ষরিত চূড়ান্ত ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়নি। বর্তমান অবস্থা অনুযায়ী ফলাফল স্থগিত রয়েছে।’

প্রতিনিধি/এজে

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর