ভাঙা টিনের ঘর নেই বিদ্যুৎ, নেই চলাচলের রাস্তা। অন্যের জমিতে কোনো রকমে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন নীলফামারী সদর উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের পালপাড়া গ্রামের প্রলাত পাল। বয়সের ভার আর রোগের যন্ত্রণায় এখন একেবারেই অচল তিনি। দীর্ঘদিন ধরে ফাইলেরিয়া বা গোদ রোগে আক্রান্ত এই বৃদ্ধ একসময় ভিক্ষা করেই ছয় সদস্যের পরিবার চালাতেন। এখন সেটুকুও আর সম্ভব হয় না।
পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছেলে রিপন পালও অসুস্থ। শারীরিক সমস্যার কারণে কোনো ভারি কাজ করতে পারেন না তিনি। তার স্ত্রী মিনতি রানী মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। ঘরে তিনটি অবুঝ শিশু সন্তান। অনাহারে-অর্ধাহারে কেটে যায় দিনের পর দিন।
বিজ্ঞাপন
কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রলাত পাল বলেন, ‘ভিক্ষা কইরা কোনো রকমে পোলাপান নিয়া চলতাম। এখন শরীর আর সয়ে উঠে না। পা ফুলে গেছে, চলতে পারি না। বেশি হাঁটলে খুব ব্যথা করে। কষ্টের কথা বলতে গেলেও গলা ধরে আসে।’
ছেলে রিপনের কথায় অসহায়তার ছবি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে ‘একবেলা খাইলে আরেক বেলা না খেয়ে থাকতে হয়। ভারি কাজ করতে পারি না বলে কেউ কাজে নিতে চায় না। এমনও দিন গেছে যেদিন ভাতের হাড়ি চুলায় ওঠে না’।
স্থানীয় বাসিন্দা শামসুল হক বলেন, ‘এই পরিবারটার দুর্দশা দেখে মনটা ভেঙে যায়। সমাজের সামর্থ্যবান মানুষরা একটু পাশে দাঁড়ালেই ওরা বাঁচতে পারবে।’
বিজ্ঞাপন
করুণ বাস্তবতা যে জমিতে কোনোরকমে আশ্রয় নিয়েছে এই পরিবার, সেখান থেকেও সরতে হতে পারে যেকোনো মুহূর্তে। জমির মালিক সরে যেতে বললেই ছেড়ে দিতে যেতে হবে সেই জায়গা।
সোনারায় ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমরা ইউনিয়ন বিএনপির পক্ষ থেকে যতটা সম্ভব সাহায্য করেছি। তবে এটি শুধু রাজনৈতিক দায়িত্ব নয়, মানবিক দায়িত্ব। সমাজের বিত্তবান মানুষদের এগিয়ে আসা উচিত।
পালপাড়ার এই ভাঙা ঘর যেন আজ ছয়টি মানুষের বেঁচে থাকার শেষ লড়াইয়ের নিদর্শন। সহায়-সম্বলহীন এই পরিবারের একটিমাত্র চাওয়া সামান্য সহযোগিতা, যাতে অন্তত দুই বেলা খাবার জোটে আর মাথার ওপর একটা নিরাপদ ছাঁদ থাকে।
প্রতিনিধি/এসএস

