রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ফেনীর বন্যা: কমেছে বৃষ্টি ও নদীর পানি, চরম ভোগান্তিতে দুর্গতরা

জেলা প্রতিনিধি, ফেনী
প্রকাশিত: ১১ জুলাই ২০২৫, ১২:০৮ পিএম

শেয়ার করুন:

ফেনীতে বন্যা: কমেছে বৃষ্টি ও নদীর পানি, চরম ভোগান্তিতে দুর্গতরা

ভারত থেকে থেকে নেমে আসা বাঁধভাঙা পানি পরশুরাম ও ফুলগাজী থেকে গড়িয়ে ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ঢুকে পড়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২১টি স্থানে ভেঙে অন্তত শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। কবলিত গ্রামের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। কমেছে বৃষ্টি ও নদীর পানি এমতাবস্থায় পরশুরামে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও ফুলগাজীতে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত স্থিতি অবস্থা দেখা গেছে। এতে সীমান্তবর্তী ফুলগাজী ও পরশুরাম, ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদরের আংশিক নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। বিভিন্ন সড়ক পানিতে তলিয়ে গিয়ে বন্ধ রয়েছে যানচলাচল। বন্যার্ত এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ ও নেটওয়ার্ক না থাকায় বিপাকে পড়েছে মানুষজন।

thumbnail_1000449000


বিজ্ঞাপন


তবে বাঁধভাঙা পানিগুলো নিম্নাঞ্চল ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ঢুকে নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টার বৃষ্টি কমে আসায় নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রশাসন, বিভিন্ন সংগঠন ও স্বেচ্ছাসেবীরা দুর্গত এলাকাবাসীর পাশে থেকে মানবিক সেবা দিয়ে যাচ্ছে। আজ শুক্রবার এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ফেনী-ফুলগাজী ও ফেনী-ছাগলনাইয়া আঞ্চলিক সড়কের ওপর দিয়ে ১ থেকে ২ ফুট পর্যন্ত পানির প্রবাহ রয়েছে।

1000449002

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, গত সোমবার থেকে ভারী বর্ষণের কারণে শুক্রবার পর্যন্ত ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরামে মুহুরি, কহুয়া ও সিলোনীয়ায় নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২১টি স্থান ভেঙে যায়। এতে করে ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর উপজেলার অন্তত শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বুধবার থেকে বৃষ্টি কমতে শুরু করায় সকাল থেকে পরশুরাম উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হতে থাকে। তবে বন্যার পানি নিম্নাঞ্চল ফুলগাজী গড়িয়ে ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর উপজেলায় ঢুকতে শুরু করে।

thumbnail_1000448999


বিজ্ঞাপন


বৃহস্পতিবার সকালে ফেনী-ছাগলনাইয়া সড়কের রেজুমিয়া থেকে পৌরসভা পর্যন্ত অংশে এক থেকে দুই ফুট ওপর দিয়ে গড়িয়ে যেতে দেখা গেছে। এতে করে নতুনভাবে ছাগলনাইয়া উপজেলার পাঠান নগর, রাধা নগর, ছাগলনাইয়া পৌরসভার অন্তত ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পানিগুলো ফেনী সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ঢুকে পড়ছে। বৃহস্পতিবার রাতে পর্যন্ত বাঁধভাঙা পানি ঢুকে ফেনী সদর উপজেলার কাজিরবাগ, মোটবী, ছনুয়া, ফাজিলপুর ইউনিয়নের অন্তত ২০টি গ্রাম নতুনভাবে প্লাবিত করেছে। এসব এলাকার পুকুর ডুবে মাছ ভেসে গেছে।

1000449006

ফুলগাজী দৌলতপুর এলাকার বয়োবৃদ্ধ রেজিয়া বেগম বলেন, গেল বছরের বন্যার বছর না ঘুরতেই আবারও পানিতে ডুবতে হয়েছে। সব জিনিসপত্র ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। এ অঞ্চলে জুলাই-আগস্ট মাসে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ভাঙন এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। সবমিলিয়ে মাঝেমধ্যে মনে হয়, এখানে জন্মগ্রহণ করে ভুল করেছি।

thumbnail_1000449004

উত্তর শ্রীপুর এলাকার বাসিন্দা আলী আজ্জম বলেন, বাঁধের ভাঙন স্থানে তীব্র স্রোতে পানি ঢুকছে। সময়ের সঙ্গে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। গেল বছরের বন্যার মতো এবারও বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক সমস্যা নিয়ে ভুগতে হচ্ছে। রাজনৈতিক দল বা ক্ষমতা পরিবর্তন হলেও আমাদের ভাগ্য কখনো পরিবর্তন হয় না।

আরও পড়ুন

নদী ভাঙনে ধসে পড়ল সোনাগাজীর ৩ সড়ক

1000449014

গাইনবাড়ি এলাকার বাসিন্দা পুষ্পিতা রাণী বলেন, ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে গেছে। পরিবারের শিশু ও বয়স্কদের নিয়ে অবর্ণনীয় কষ্ট করতে হচ্ছে। নিরাপদ পানির সংকটে আরও বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু কর্মকর্তার দায়সারা কাজের জন্য প্রতিবছর এ জনপদে ভাঙন নিয়মে পরিণত হয়েছে। আমাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য একমাত্র টেকসই বাঁধই সমাধান।

1000449013

ফেনী সদরের মোটবী ইউনিয়নের নজরুল ইসলাম বলেন, বুধবার রাত থেকে আমাদের ইজ্জতপুর গ্রামে পানি বাড়তে থাকে। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত সড়কের কোথাও কোথাও ৩ থেকে ৪ ফুট পর্যন্ত ডুবে গেছে। এলাকার সবগুলো পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। অনেকেই গরু-ছাগল নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছেন।

1000449010

ফেনীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৮ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ক্রমান্বয়ে বৃষ্টিপাত কমছে। তাই আজ শুক্রবার থেকে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে।

1000449011

পানি উন্নয়ন বোর্ড ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী আকতার হোসেন মজুমদার বলেন, মুহুরি নদীর পানি ১ দশমিক ৯৩ মিটার বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফুলগাজী এলাকার বন্যা কবলিত গ্রামগুলোতে পানির অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। পানির চাপ কমে যাওয়ায় নতুন করে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভাঙার আশঙ্কা নেই। পানি কমে গেলেই ভাঙ্গনকবলিত স্থানগুলো মেরামত করা হবে। 

1000449009

ফেনী জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ফেনীতে কবলিত ৪ উপজেলার মধ্যে পরশুরামে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। ফুলগাজীতেও কিছুটা ভালোর দিকে রয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার বন্যার পানি ছাগলনাইয়ার প্রধান সড়ক গড়িয়ে বিভিন্ন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। আশা করি শুক্রবার পর্যন্ত জেলাজুড়ে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি শুরু হবে। এখন পর্যন্ত ৫০টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৪ উপজেলায় প্রায় ৭ হাজার মানুষ আশ্রিত রয়েছে। ২০ হাজারের ওপরে কবলিত জনসাধারণের মাঝে খাবার সরবরাহের জন্য প্রশাসনের সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতারাও কাজ করে যাচ্ছে। 

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর