সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

‘ভোক্তা সচেতনতাই নিরাপদ খাদ্যের মূল চাবিকাঠি’

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, বাকৃবি 
প্রকাশিত: ১০ জুলাই ২০২৫, ০৪:৪৬ পিএম

শেয়ার করুন:

‘ভোক্তা সচেতনতাই নিরাপদ খাদ্যের মূল চাবিকাঠি’
অধ্যাপক ড. মোছা. মিনারা খাতুন।

নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে ভোক্তাদের সচেতন অংশগ্রহণ অপরিহার্য বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক। তিনি বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা কেবল উৎপাদক বা সরকারের একক দায়িত্ব নয়, বরং সাধারণ ভোক্তারাও এই প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।

বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) ময়মনসিংহে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোছা. মিনারা খাতুন বলেন, ‘আমরা যদি সচেতনভাবে খাদ্য নির্বাচন করি এবং সঠিক অভ্যাস গড়ে তুলি, তাহলে নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব।’


বিজ্ঞাপন


তিনি বলেন, ‘নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন কেবল কৃষক, উৎপাদক বা সরকারের একক দায়িত্ব নয়; একজন ভোক্তা হিসেবেও আমাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আমরা যদি সচেতন হই, ভালো পণ্য বাছাই করি এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলি, তাহলে পুরো খাদ্য ব্যবস্থাই নিরাপদ হয়ে উঠতে পারে।’

ভোক্তারা কীভাবে নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থায় ভূমিকা রাখতে পারেন সে বিষয়ে অধ্যাপক ড. মোছা. মিনারা খাতুন কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর আলোকপাত করেন।

তিনি বলেন, ‘ভোক্তাদের সচেতনতা ও শিক্ষা এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি। কোন কোন খাদ্য বিপজ্জনক হতে পারে—যেমন: ব্যাকটেরিয়াযুক্ত, কীটনাশক বা রাসায়নিকযুক্ত খাবার—তা সম্পর্কে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। এসব সম্পর্কে সচেতন হলে সিদ্ধান্ত গ্রহণও নিরাপদ হবে। খাবার কেনার সময় পণ্যের লেবেল দেখে নেওয়া উচিত—যেমন: জৈব, ভেজালমুক্ত, মেয়াদোত্তীর্ণ কি না ইত্যাদি। ক্ষতিগ্রস্ত বা খোলা প্যাকেট এড়িয়ে চলাই ভালো।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্থানীয় কৃষক বা উৎপাদকের কাছ থেকে খাবার কিনলে উৎপাদন পদ্ধতি সম্পর্কে সহজেই জানা যায়, যা স্বচ্ছতা ও আস্থা বৃদ্ধি করে। ভোক্তারা চাইলে প্রশ্ন করতে পারেন—খাবারটি কীভাবে প্রস্তুত হয়েছে, কী উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে ইত্যাদি। এতে উৎপাদনকারীরাও সচেতন হন।’


বিজ্ঞাপন


খাদ্য সংরক্ষণ ও প্রস্তুতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সঠিকভাবে খাবার সংরক্ষণ ও প্রস্তুত করার নিয়ম সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। যেমন: খাবার ফ্রিজে সংরক্ষণ, রান্নার আগে-পরে হাত ধোয়া, কাঁচা ও রান্না করা খাবার আলাদা রাখা—এই সাধারণ নিয়মগুলো মেনে চললে অনেক রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকু খাবার কেনা উচিত, যাতে অপচয় না হয়। এর ফলে পরিবেশ রক্ষা হয় এবং খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থাও টেকসই হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘পচা বা নষ্ট খাবার সঠিকভাবে অপসারণ না করলে পরিবেশ দূষণের ঝুঁকি থাকে। তাই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সচেতনতা এবং প্রয়োজনে পুনর্ব্যবহার করা জরুরি।’

অধ্যাপক মিনারা খাতুন বলেন, ‘ভোক্তা হিসেবে প্রত্যেকের সচেতন আচরণই গড়ে তুলতে পারে একটি নিরাপদ, স্বাস্থ্যসম্মত ও টেকসই খাদ্য পরিবেশ। খাদ্য নিরাপত্তা কেবল উৎপাদনকারীদের দায়িত্ব নয়; এটি আমাদের সবার সম্মিলিত দায়িত্ব। ভোক্তারা যদি সচেতনভাবে খাদ্য নির্বাচন করেন, তাহলে উৎপাদকরাও মানসম্মত ও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে উৎসাহ পান।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেকোনো খাদ্যে দুর্গন্ধ, অস্বাভাবিক রঙ বা স্বাদ থাকলে তা অবহেলা না করে স্থানীয় প্রশাসন বা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ জানানো উচিত। সচেতন ভোক্তারা চাইলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সচেতনতামূলক বার্তা ছড়িয়ে দিতে পারেন কিংবা স্থানীয় সভা-সেমিনারে অংশগ্রহণ করে অন্যদের সচেতন করতে পারেন। এতে সম্মিলিত প্রচেষ্টা গড়ে উঠবে। পাশাপাশি, সরকারের খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক আইন ও উদ্যোগকে সমর্থন করা এবং অন্যদের সচেতন করাও জরুরি।’

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর