রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

শিশুদের দুধ আনতে বলায় স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া, এরপর হত্যা

জেলা প্রতিনিধি, মুন্সিগঞ্জ 
প্রকাশিত: ০৯ জুলাই ২০২৫, ০৭:৩৩ পিএম

শেয়ার করুন:

শিশুদের দুধ আনতে বলায় স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া, এরপর হত্যা
শান্তা বেগমের হাতে দুই সন্তান খুন, মুন্সিগঞ্জে চাঞ্চল্য

মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরে মাত্র পাঁচ মাস বয়সী জমজ দুই কন্যাশিশুকে পানিতে ফেলে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তাদের মা শান্তা বেগমের বিরুদ্ধে। ঘটনার পর প্রাথমিকভাবে স্বামীকে দোষারোপ করলেও শেষ পর্যন্ত আদালতে গিয়ে সব স্বীকার করেছেন তিনি।

বুধবার (৯ জুলাই) বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে মুন্সিগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন শান্তা।


বিজ্ঞাপন


অভাব, কলহ আর হতাশা— পেছনের গল্প
পুলিশ জানায়, শান্তা বেগম ও মো. সোহাগ শেখের বিয়ে হয় দুই বছর আগে। শুরু থেকেই দাম্পত্য কলহ লেগেই ছিল। সন্তান জন্মের পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। সোহাগের স্বল্প আয়ে সংসার চালানো, সন্তানদের দুধ ও ওষুধ জোগাড় করা নিয়ে প্রায়ই ঝগড়া লেগে থাকত।

জানানো হয়, গর্ভাবস্থায় শান্তা অধিকাংশ সময় বাবার বাড়িতে কাটান। জমজ কন্যা সন্তান— লামিয়া ও সামিয়া— জন্ম নেওয়ার পর পরিবারের ব্যয় বহুগুণ বেড়ে যায়। প্রায় দুই মাস আগে শান্তা তার সন্তানদের নিয়ে বাবার বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়িতে ফিরে আসেন। অভাব-অনটনের কারণে তখন থেকেই পারিবারিক কলহ আরও তীব্র হয়।

ss

৭ জুলাইয়ের সেই ভয়াল সন্ধ্যা
গত ৭ জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টার দিকে শান্তা তার স্বামী সোহাগকে শিশুদের জন্য দুধ, ওষুধ এবং কিছু খাবার আনতে বলেন। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে ফোনে তীব্র ঝগড়া হয়।


বিজ্ঞাপন


পুলিশের ভাষ্যমতে, ঝগড়ার পর রাত সাড়ে সাতটার দিকে শান্তা ঘুমন্ত অবস্থায় তার দুই কন্যাশিশুকে কোলে নিয়ে ঘরের মধ্যে হাঁটতে থাকেন। হঠাৎ তিনি প্রথমে লামিয়াকে ঘরের উত্তর পাশের দরজা দিয়ে পুকুরে ফেলে দেন। এরপর একইভাবে সামিয়াকেও ফেলে দেন।

স্বামীকে ফাঁসাতে নতুন নাটক
পুলিশ জানায়, ঘটনার পর ভয় পেয়ে যান শান্তা। প্রথমে কাউকে কিছু না বলে নিজেকে সামলে নেন। পরে সু-কৌশলে স্বামীকে দোষারোপ করে বিষয়টি আড়াল করতে চেষ্টা করেন। পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন এবং স্থানীয়দের কাছে তিনি দাবি করেন— সোহাগ শেখই নাকি সন্তানদের হত্যা করেছেন।

তবে তদন্তের একপর্যায়ে পুলিশ নিশ্চিত হয়, ঘটনার সময় সোহাগ বাড়িতে ছিলেন না। এরপর শান্তাকে পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি ভেঙে পড়েন এবং হত্যার দায় স্বীকার করেন।

পুলিশের তদন্ত ও আলামত উদ্ধার
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিরাজদিখান থানার পুলিশ পরিদর্শক মো. আমিনুল ইসলাম জানান, শান্তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ঘটনাস্থল থেকে শিশুদের সঙ্গে ফেলে দেওয়া কাপড়সহ বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করা হয়েছে।

নিহত দুই শিশুর চাচা আল আমিন শ্রীনগর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। বর্তমানে শান্তাকে আদালতের নির্দেশে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে।

ft

অনুশোচনায় ভাঙা এক মা
শান্তা পুলিশকে জানান, ঘটনার পর থেকেই তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। সন্তান হত্যার দায়ে নিজেকে ক্ষমা করতে পারছেন না। যে রাগ মুহূর্তেই সন্তানদের জীবন কেড়ে নিল, সেই রাগ আজ অনুশোচনায় পরিণত হয়েছে। স্থানীয়রা এমন নির্মম ঘটনায় হতবাক। তারা বলছেন, পারিবারিক কলহ ও মানসিক চাপ থেকে এমন মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে— যা সমাজে গভীর দাগ রেখে যাবে। এই ঘটনা পারিবারিক সহিংসতা ও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে নতুন করে ভাবনার সুযোগ এনে দিয়েছে।

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর