রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ফেনীর ফুলগাজী-পরশুরামের নদী রক্ষা বাঁধের ৪ স্থানে ভাঙন

নুর উল্লাহ কায়সার, ফেনী
প্রকাশিত: ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৮:৩৯ পিএম

শেয়ার করুন:

ফেনীর ফুলগাজী-পরশুরামের নদী রক্ষা বাঁধের ৪ স্থানে ভাঙন

বিগত বছরের ন্যায় এবারও ফেনীর পরশুরামে বল্লারমুখায় নির্মিত নতুন বাঁধটি ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। এর বাইরে আরও ৩ স্থানে নদী রক্ষা বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে সব কিছু তলিয়ে যেতে শুরু করেছে।

1000444797


বিজ্ঞাপন


মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ফেনীর মুহুরি, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। হু হু করে বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে থাকায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জনসাধারণকে রাতের বেলায় সতর্ক থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে।

FB_IMG_1751964367828

এদিকে মঙ্গলবার রাত আটটা পর্যন্ত ফেনী শহরের শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কের  পুলিশ ফাঁড়ির সামনে ৪ ফুটের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তবে বৃষ্টি বন্ধ হলে রাতের মধ্যেই ফেনী শহরের পানি নেমে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

thumbnail_20250708_172351


বিজ্ঞাপন


জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল সাতটার দিকে ফুলগাজী বাজার সংলগ্ন রাজেশপুর সড়কে মুহুরি নদীতে ধসে ভেসে যায় তিনটি দোকান ঘর। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে সকাল থেকে রাজসপুর সড়কটি বন্ধ রাখা হয়। দুপুর ও বিকালের দিকে পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নে সিলোনিয়া নদীর মেলাঘর, গদানগর ও মনিপুর গ্রামে বেড়িবাঁধ ভেঙে অন্তত ছয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টার দিকে বল্লারমুখা নবনির্মিত বাঁধের পূর্ব রাঙ্গামাটিয়া এলাকায় ভয়াবহ ভাঙন দেখা দেয়। এতে করে মুহুরি নদীর পানি নদী দিয়ে প্রবাহিত না হয়ে লোকালয় দিয়ে ঢুকতে থাকে। বল্লারমুখা বাঁধসহ ৪ স্থানে ভাঙনে রাতের মধ্যে পরশুরাম ও ফুলগাজীর বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

thumbnail_20250708_180144

পরশুরামের শালধর গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস বলেন, বল্লামুখা বাঁধ নির্মাণের সময় আমরা বারবার নিম্নমানের কাজের কথা বলে আসছিলাম। কিন্তু আমাদের কথায় কেউ গুরুত্ব দেয়ন। এখন বল্লামুখা বাঁধ ভেঙে গতবারের মতো এবারও সবকিছু তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এদেশের সবাই চোর। কেউ কারো বিচার করতে চায় না বলেই প্রতি বছর আমাদেরকে বন্যায় তলিয়ে দিচ্ছে।

thumbnail_20250708_180636

পানি উন্নয়ন বোর্ডের গ্রেজ রিডার নেপাল সাহা বলেন, মঙ্গলবার বিকেল ৪টার পর থেকে মুহুরি নদীর পানি বিপদসীমার ৯৬ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হয়। এরপর থেকেই নদী রক্ষা বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন শুরু হয়। রাতের মধ্যে আরও কয়েকটি স্থানে ভাঙন দেখা দিতে পারে।

ফেনীর আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, সোমবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ফেনীতে ৪৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা পূর্বে ফেনীতে সব রেকর্ডকে অতিক্রম করেছে। দেশজুড়ে মঙ্গলবার এটি সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত।

তবে আগামী ২৪ ঘণ্টায় পূর্বাভাসে বৃষ্টিপাত কমতে পারে বলে বলা হয়েছে।

1000444795

এদিকে সোমবার (৭ জুলাই) বিকেল থেকে মঙ্গলবার দিনভর ফেনী শহরে ভারী বৃষ্টি বর্ষণের কারণে ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। পর্যাপ্ত ড্রেন না থাকা এবং অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে ফেনী শহরের প্রধান সড়ক শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কটি ৩ থেকে ৫ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায়। এ সময় ফেনী শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, পরীক্ষার্থী এবং বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনরা পানিতে আটকা পড়ে। সড়কের দুই পাশের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালামাল পানির নিচে তলিয়ে যায়।

ফেনী পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক গোলাম মো. বাতেন বলেন, টানা ভারী বর্ষণের কারণে ফেনী পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার পানি জমে যায়। পর্যাপ্ত ড্রেন না থাকা এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে ড্রেন দখল হওয়ায় পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা সরে জমিনে থেকে পানি দ্রুত সরানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছি। ২-৩ ঘণ্টা বৃষ্টি বন্ধ থাকলে ফেনী শহর থেকে পানি নেমে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

thumbnail_20250708_180802

ফেনী জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত ফুলগাজী ও পরশুরামে নদী রক্ষা বাঁধের ৪টি স্থানে ভেঙে যাওয়ার খবর পেয়েছি। ভাঙনকবলিত স্থান দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। কবলিত এলাকার মানুষকে আতঙ্কিত না হয় সতর্ক থাকার অনুরোধ করে মাইকিংসহ যাবতীয় প্রচারণা করা হচ্ছে।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর