সোমবার, ১৪ জুলাই, ২০২৫, ঢাকা

বদলগাছী কলেজে অধ্যক্ষ দ্বন্দ্ব চলছেই, পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ

জেলা প্রতিনিধি, নওগাঁ
প্রকাশিত: ০৬ জুলাই ২০২৫, ০৫:৪০ পিএম

শেয়ার করুন:

বদলগাছী কলেজে অধ্যক্ষ দ্বন্দ্ব চলছেই, পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ

নওগাঁর বদলগাছী মহিলা ডিগ্রী কলেজে অধ্যক্ষের পদ নিয়ে দুই শিক্ষকের মধ্যে জটিলতা এখনও মিটেছে না। 

আজ রোববার (৬ জুলাই) কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. ইমামুল হোসেন নিজেকে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি অভিযোগ করেন, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত থাকা মাহবুব আলম নিজেকে অধ্যক্ষ হিসেবে দাবি করে দায়িত্ব পালন করতে বাধা দিচ্ছেন। এমনকি অধ্যক্ষের কার্যালয়ে দায়িত্ব পালনের সময় শারীরিক নির্যাতন ও লাঞ্ছিত হওয়াও তার অভিযোগ।


বিজ্ঞাপন


২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর বদলগাছী মহিলা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী অবসর নেওয়ার পর কলেজ পরিচালনা কমিটির তৎকালীন সভাপতি ছলিম উদ্দিন তরফদার জ্যেষ্ঠতার ক্রমানুসারে মাহবুব আলমকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেন। কিন্তু এই নিয়োগ জ্যেষ্ঠতার বিধি লঙ্ঘন বলে অভিযোগ উঠেছিল। পরে ২০২২ সালে নিয়োগ বিধি না মেনে জালিয়াতির মাধ্যমে মাহবুব আলমকে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ ওঠে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) ২০২৪ সালের ১৭ মে মাহবুব আলমকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় এবং ৩ জুলাই তার বেতন বন্ধের নির্দেশ দেয়, যা এখনও কার্যকর রয়েছে। এরপর ৫ আগস্ট জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজ্ঞাপনের আলোকে কলেজ পরিচালনা কমিটি বাতিল হয় এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সভাপতি করা হয়।

অভিযোগের ভিত্তিতে ২৭ আগস্ট কলেজ পরিচালনা কমিটি মাহবুব আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করে এবং সহকারী অধ্যাপক মমতাজ জাহানকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেন। তবে ৭ মে বিএনপি নেতা ফজলে হুদাকে সভাপতি হিসেবে মনোনয়ন দিয়ে মাহবুব আলমকে পুনরায় অধ্যক্ষ পদে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়। এর পর মমতাজ জাহানের ওপর বিভিন্ন মানসিক চাপ প্রয়োগের অভিযোগ ওঠে।

৮ মে মাহবুব আলম অধ্যক্ষ কক্ষে প্রবেশ করে লক্ষাধিক টাকা ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র লুটের অভিযোগে মমতাজ জাহান হাইকোর্টে রিট করেন। হাইকোর্ট ওই আদেশ তিন মাসের জন্য স্থগিত করে পূর্বের কমিটির সভাপতি লুৎফর রহমানকে দায়িত্বে ফিরিয়ে দেয়। পরে ৭ জুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মমতাজ জাহান মারা যান।


বিজ্ঞাপন


২৫ জুন লুৎফর রহমান কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে ইমামুল হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেন। তবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরই ইমামুল হোসেনের ওপর হামলা ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। থানায় মামলা করতে গেলে মামলা গ্রহণ হয়নি, প্রশাসনিক স্তর থেকেও তিনি প্রতিকার পাননি। বর্তমানে তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

অন্যদিকে মাহবুব আলম সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি বদলগাছী মহিলা ডিগ্রী কলেজের বৈধ অধ্যক্ষ। আমাকে জোরপূর্বক পদত্যাগ করানো হয়েছে, যা বৈধ নয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ফজলে হুদাকে কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে অনুমোদন দিয়েছে। তবে বর্তমান কমিটি স্থগিত হওয়ায় তারা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগের অধিকার রাখে না।’

এদিকে ইমামুল হোসেনকে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট বলে মাহবুব আলম দাবি করেছেন।

বদলগাছী কলেজের অধ্যক্ষ পদ নিয়ে এই দ্বন্দ্ব এবং বিতর্ক চলছেই, যা কলেজের পরিবেশ ও শিক্ষাব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে স্থানীয়রা মনে করছেন।

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর