যে সাপটিকে তিনি আদর-ভালোবাসায় পাঁচ বছর ধরে লালন-পালন করেছেন, খেলা দেখিয়ে জীবিকা চালিয়েছেন—শেষ পর্যন্ত সেই সাপের ছোবলেই মর্মান্তিক মৃত্যু হলো সাপুড়িয়া শাকিলের।
ভোলার মনপুরা উপজেলার দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শাকিল (২৬) ছিলেন একজন অভিজ্ঞ সাপুড়িয়া। পরিবার জানায়, প্রায় পাঁচ বছর আগে একটি গোখরা সাপ ধরে এনে শাকিল সেটিকে পোষা শুরু করেন। সময়ের সঙ্গে সাপটি হয়ে ওঠে তার জীবনের অংশ। শাকিল নিয়মিতভাবে তা নিয়ে এলাকায় খেলাও দেখাতেন।
বিজ্ঞাপন
গতকাল শনিবার বিকেলে তালতলা বেড়িবাঁধ এলাকায় অন্যান্য দিনের মতো সাপ খেলা দেখাতে যান শাকিল। হঠাৎই সবার সামনে নিজের পোষা সাপটি তাঁর বাম পায়ের রানে ছোবল মারে। ছোবলের পর তিনি নিজেই বিষ নামানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু সফল হননি।
পরিবারের সদস্যরা সঙ্গে সঙ্গে তাকে স্থানীয় লালু ওঝার কাছে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁকে বাড়ি পাঠানো হয়। কিন্তু কিছুক্ষণ পর শাকিলের শারীরিক অবস্থা দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে। পরে তাকে মনপুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মেহেদী হাসান বলেন, ‘সাপের বিষ শরীরজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। দ্রুত এন্টিভেনম দেওয়ার পরও আমরা তাঁকে বাঁচাতে পারিনি।’
রোববার (৬ জুলাই) ভোর ৪টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাকিল মারা যান।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয়রা শোক প্রকাশ করে বলেন, ‘যে সাপটিকে সন্তানতুল্য ভালোবেসে পোষেন শাকিল, সেই সাপই আজ কেড়ে নিল তার প্রাণ। এটি আমাদের জন্য গভীর দুঃখ ও সতর্কতার বার্তা।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাপের ছোবলে আক্রান্ত হলে দ্রুত আধুনিক চিকিৎসার আওতায় যাওয়াই সবচেয়ে কার্যকরী ব্যবস্থা। স্থানীয় ওঝার চিকিৎসায় সময় নষ্ট করলে তা প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। শাকিলের মৃত্যু তাই কেবল একটি দুর্ঘটনা নয়, এটি একটি শিক্ষা—সচেতনতা আর আধুনিক চিকিৎসা জীবন রক্ষা করতে পারে।
প্রতিনিধি/একেবি