শুক্রবার, ১১ জুলাই, ২০২৫, ঢাকা

বরগুনায় ডেঙ্গুর ভয়াবহ অবনতি: একদিনে রেকর্ড ১০২ রোগী ভর্তি

জেলা প্রতিনিধি, বরগুনা
প্রকাশিত: ০৬ জুলাই ২০২৫, ০২:৩৮ পিএম

শেয়ার করুন:

বরগুনায় ডেঙ্গুর ভয়াবহ অবনতি: একদিনে রেকর্ড ১০২ রোগী ভর্তি

বরগুনায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। সংক্রমণের মাত্রা এতটাই বেড়েছে যে, তা নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে রেকর্ড ১০২ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন, যা চলতি বছরের মধ্যে একদিনে সর্বোচ্চ ভর্তির সংখ্যা।

স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, ৫ জুলাই সকাল ৮টা থেকে ৬ জুলাই সকাল ৮টা পর্যন্ত সময়ে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ৭৬ জন, পাথরঘাটা উপজেলায় ১২ জন, তালতলীতে ৭ জন এবং বামনায় ৭ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর আগে, গত ২৩ জুন সর্বোচ্চ ৯৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছিল।


বিজ্ঞাপন


সরকারি হিসাবে বরগুনায় ডেঙ্গুতে এখন পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ৬ জন। তবে বেসরকারি বিভিন্ন সূত্র বলছে, চলতি বছর ডেঙ্গুতে জেলার অন্তত ৩০ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে ৬ জন স্থানীয় হাসপাতালে এবং বাকিরা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন অথবা হাসপাতালে নেওয়ার পথেই মৃত্যুবরণ করেছেন।

বরগুনা জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগীর চাপ এতটাই বেড়েছে যে, স্বাভাবিক চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বেডের সংকট চরমে পৌঁছেছে। অনেক রোগীকে মেঝে, সিঁড়ি ও রিসেপশন এলাকায় চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের সিঁড়ি, করিডোর ও ব্যালকনিও এখন রোগীদের চিকিৎসার জায়গায় পরিণত হয়েছে।

সাধারণ মানুষের অভিযোগ, পৌরসভা ও স্থানীয় প্রশাসন মশক নিধন কার্যক্রমে গড়িমসি করছে। জনসচেতনতা তৈরির উদ্যোগও অত্যন্ত সীমিত। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় পরিস্থিতি দিন দিন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।

জেলা স্বাস্থ্য অধিকার ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন কামাল বলেন, “শহরের ভেতরে কিছুটা কার্যক্রম দেখা গেলেও গ্রামাঞ্চলে মশক নিধন কার্যক্রম নেই বললেই চলে। এখনই ইউনিয়ন পরিষদগুলোকে সক্রিয় হতে হবে। না হলে বর্ষা শেষে ডেঙ্গু ভয়াবহ মহামারির রূপ নিতে পারে।”


বিজ্ঞাপন


স্বাস্থ্য বিভাগের সতর্কবার্তা
বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আবুল ফাত্তাহ বলেন, “দিন দিন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসছে না। চিকিৎসাসেবা দিতে আমরা কঠিন চাপে আছি। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, “এই সংকট কাটিয়ে উঠতে স্থানীয়দের সচেতনতা, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম এবং ব্যাপক মশক নিধন অভিযান চালানো জরুরি।”

ডেঙ্গুর ভয়াবহ সংক্রমণ রোধে দ্রুত ও সমন্বিত পদক্ষেপ না নিলে বরগুনায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সময় থাকতেই প্রশাসন ও সাধারণ মানুষকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর