উত্তরবঙ্গের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) আজও তার গৌরবময় পথচলায় এগিয়ে চলেছে দৃপ্ত পদক্ষেপে। ১৯৫৩ সালের ৬ জুলাই যাত্রা শুরু করে এই বিদ্যাপীঠ, যেটি আজ শুধু একটি বিশ্ববিদ্যালয় নয়—বরং একটি স্বপ্ন, একটি পরিচয়, একটি ইতিহাস। আর একদিন পর রাবির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, এই শুভ লগ্নে ফিরে দেখা যাক রাবির পথচলার কিছু মাইলফলক।
পাকিস্তানি শাসনামলের শুরুর দিকে ঢাকার বাইরে উচ্চশিক্ষার সুযোগ ছিল না বললেই চলে। সেই সময় রাজশাহীর বিদ্বান সমাজের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন সরকার রাজশাহীতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৫৩ সালের ৬ জুলাই মাত্র ১৬১ শিক্ষার্থী ও ৬ শিক্ষক নিয়ে যে যাত্রা শুরু হয়েছিল, তা আজ বিস্তৃত হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থী, ১১শ শিক্ষক এবং হাজারের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারির এক বিশাল পরিবারে।
বিজ্ঞাপন
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে দেশের অন্যতম বৃহৎ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে রয়েছে ১২টি অনুষদ, ৫৯টি বিভাগ এবং একাধিক ইনস্টিটিউট। গবেষণায় বরাবরই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে অনন্য অবদান। আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্র, নবীন গবেষকদের অংশগ্রহণ এবং সেমিনার সিম্পোজিয়ামের মাধ্যমে দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় রাবি রেখেছে বিশিষ্ট ভূমিকা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেবলমাত্র অ্যাকাডেমিক পরিসরে নয়, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেও অনন্য। সবুজে ঘেরা এ ক্যাম্পাসে রয়েছে সারি সারি সুবিশাল গগনশিরিষ, খোলামেলা মাঠ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ, যা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি মানসিক বিকাশেও সহায়ক। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে রাবি দেশের অন্যতম প্রাণবন্ত ক্যাম্পাস, যেখানে নাট্যচর্চা, কবিতা আবৃত্তি, বিতর্কসহ নানা সৃজনশীল কর্মকাণ্ড নিয়মিত আয়োজিত হয়।
বিজ্ঞাপন
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে রয়েছে গণতন্ত্র ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোর সাহসী ঐতিহ্য। ভাষা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, ২৪ এর জুলাই বিপ্লবসহ বিভিন্ন সময়ে রাবির শিক্ষার্থীরা সাহসী ভূমিকা রেখেছে। এই প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে প্রতিবাদী চেতনার প্রতীক।
প্রতিবছরের মতো এবারও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন করা হচ্ছে নানা আয়োজনে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন সকাল থেকে রয়েছে র্যালি, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বৃক্ষরোপণ ও আলোকসজ্জাসহ নানা আয়োজন। পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারি ও প্রাক্তন রাবিয়ানদের অংশগ্রহণে এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী হয়ে উঠছে স্মরণীয় ও অর্থবহ।
প্রতিনিধি/টিবি