সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

মাদারীপুরে শহরের জলাবদ্ধতা দূর করতে ‘বরিশাল খাল’ খনন শুরু

জেলা প্রতিনিধি, মাদারীপুর
প্রকাশিত: ০৪ জুলাই ২০২৫, ০১:৪৯ পিএম

শেয়ার করুন:

মাদারীপুরে শহরের জলাবদ্ধতা দূর করতে ‘বরিশাল খাল’ খনন শুরু

দুই যুগ আগেও মাদারীপুরের ‘বরিশাল খাল’ দিয়ে চলাচল করতো ছোট-বড় অসংখ্য নৌযান। কিন্তু দখল ও দূষণে খালটি অস্তিত্ব সংকটে পড়ে। ফলে বন্ধ হয়ে যায় পানিপ্রবাহ, ছড়িয়ে পড়ে দুর্গন্ধ, বাড়তে থাকে রোগবালাই। বৃষ্টির সময় শহরের বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। ময়লা-আবর্জনায় ভরাট হয়ে যাওয়া ঐতিহাসিক এই খালটি পুনরুদ্ধারে খনন কার্যক্রম শুরু করেছে মাদারীপুর পৌরসভা। এতে খুশি স্থানীয় বাসিন্দারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, খালটি যেন এক সময়ের জলপথ নয়, বরং একটি ময়লার ভাগাড়। কচুরিপানা ও আবর্জনায় বন্ধ হয়ে গেছে পানিপ্রবাহ। অথচ এ খাল দিয়েই এক সময় মাদারীপুর শহর থেকে বরিশাল পর্যন্ত নৌপথে চলাচল হতো।


বিজ্ঞাপন


জানা যায়, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রয়োজনে স্থানীয়রা বরিশালে যাতায়াত করতেন এই খালপথে। এ কারণেই এর নাম হয়েছে ‘বরিশাল খাল’। প্রায় ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই খালটির বেশিরভাগ অংশ দখল ও দূষণে ভরাট হয়ে গেছে। অবশিষ্ট অংশেও আশপাশের লোকজন ময়লা ফেলার কারণে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। পানিপ্রবাহ বন্ধ থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই শহরের বিভিন্ন স্থানে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা।

এই জনদুর্ভোগ কমাতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পর খাল খননের উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। শহরের ইটেরপুল থেকে কুমার নদ পর্যন্ত খাল খনন কার্যক্রম শুরু হয়েছে, যা নিয়ে সন্তুষ্ট স্থানীয়রা।

একাধিক সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক বিভাগ এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) যৌথ উদ্যোগে খালের দুই পাড়ে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। তখনই খালটি খননের পরিকল্পনা করা হলেও অজানা কারণে কার্যক্রমটি বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে পৌরসভার নিজস্ব উদ্যোগে পুনরায় খনন শুরু করা হয়েছে, যা জলাবদ্ধতা নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ।


বিজ্ঞাপন


ইটেরপুল এলাকার বাসিন্দা দুলাল মণ্ডল বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে খালটির পানিপ্রবাহ বন্ধ ছিল। এখন পৌর কর্তৃপক্ষ খালটি খনন শুরু করায় জলাবদ্ধতার সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে। বৃষ্টির পানি দ্রুত ড্রেন হয়ে যাবে, ফলে মশা-মাছির উৎপাতও কমবে।’

স্থানীয় তরুণ কুমার দে বলেন, ‘ময়লা-আবর্জনায় খালটি একেবারে ভরাট হয়ে গিয়েছিল। এখান দিয়ে চলাচল তো দূরের কথা, প্রচণ্ড দুর্গন্ধে দাঁড়ানো যেত না। এখন পরিষ্কার হওয়ায় আমরা অনেকটাই স্বস্তি পাচ্ছি।’

ব্যবসায়ী রফিক মিয়া বলেন, ‘ইটেরপুল এলাকার খালটি ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছিল। পলি পড়ে পুরো খাল ভরাট হয়ে গিয়েছিল। খাল খননের ফলে এখন জনগণ উপকৃত হবে। জলাবদ্ধতা ও দুর্গন্ধ—দুই সমস্যারই সমাধান হবে।’

sr

মাদারীপুর পৌরসভার প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুল আলম জানান, ‘প্রাথমিক পর্যায়ে পৌরসভার আওতাধীন খালের অংশ খননে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ভবিষ্যতে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের পাশাপাশি, যারা খালে ময়লা ফেলবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শুরুতে নিজস্ব অর্থায়নে কাজ হলেও, সামনে বড় পরিসরে পরিকল্পনা নেওয়া হবে যাতে এই ঐতিহ্যবাহী 'বরিশাল খাল' তার নাব্য ফিরে পায়।’

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর