সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

খুলনায় ৯ মাসে ৯৫ শতাংশ অপরাধের রহস্য উদঘাটন

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা
প্রকাশিত: ০২ জুলাই ২০২৫, ০৮:২৮ পিএম

শেয়ার করুন:

খুলনায় ৯ মাসে ৯৫ শতাংশ অপরাধের রহস্য উদঘাটন
  • কেএমপির কঠোর অবস্থানে কমেছে অপরাধপ্রবণতা, স্বস্তিতে নগরবাসী

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) কঠোর অবস্থানে বিগত ৯ মাসে শহরে অপরাধপ্রবণতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। পুলিশি অভিযানে ২৬টি হত্যাকাণ্ডের মধ্যে ২২টির রহস্য উদঘাটিত হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে শতাধিক আসামি। কেএমপি কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দারের নেতৃত্বে অপরাধ দমনে জিরো টলারেন্স নীতির ফলেই এ সাফল্য এসেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।


বিজ্ঞাপন


২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পরবর্তী অস্থির সময়ের মধ্যে খুলনার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রেক্ষাপটে কেএমপি কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নেন জুলফিকার আলী হায়দার। শুরুতে কিছুটা বেগ পেতে হলেও সময়ের সঙ্গে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে। গ্রেফতার হয়েছে শীর্ষ সন্ত্রাসী, মাদক কারবারি ও চাঁদাবাজরা। নিয়মিত পরিচালিত হচ্ছে বিশেষ অভিযান।

মামলা ও রহস্য উদঘাটন
কেএমপি’র তথ্য মতে, গেল ৯ মাসে খুলনায় ২৬টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় এজাহারভুক্ত ৪৬ জন এবং তদন্তে পাওয়া আরও ৮৪ জনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে ২২টি মামলার রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়েছে। দুটি মামলা এখনো রহস্যাবৃত; অন্য দুটি নৌ-পুলিশের তদন্তাধীন।

এছাড়া:

ইজিবাইক/ভ্যান চুরি সংক্রান্ত ৫টি হত্যা মামলায় সবগুলোর রহস্য উন্মোচিত, ৫ জন আটক, ১৬ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।


বিজ্ঞাপন


মাদক নিয়ন্ত্রণে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ৭টি হত্যাকাণ্ডে ৭৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

চুরি সংক্রান্ত ১টি হত্যা মামলায় ২ জন আটক থাকলেও রহস্য অমীমাংসিত।

পরকীয়াজনিত ৫টি হত্যার মামলায় ২২ জন গ্রেফতার।

পারিবারিক কলহে ৩টি হত্যার মধ্যে ২টির রহস্য উদঘাটিত, ১টি তদন্তাধীন; এ মামলায় ৭ জন গ্রেফতার, ৫ জন জামিনে।

অন্যান্য ৫টি হত্যা মামলার মধ্যে ৩টির রহস্য উন্মোচিত হয়েছে, ২টি তদন্ত করছে নৌ-পুলিশ। এসব মামলায় আটক ৬ জন।

শীর্ষ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান
কেএমপি কমিশনার জানান, খুলনায় তালিকাভুক্ত ১২ জন শীর্ষ সন্ত্রাসীর মধ্যে ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রতিদিনের অভিযানে উদ্ধার করা হচ্ছে অবৈধ অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ মাদক। হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্তদের গ্রেফতারসহ মামলার রহস্য উদঘাটন নিয়মিত হচ্ছে বলে জানান তিনি।

kmp-ss
কেএমপি কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার

ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় নতুন উদ্যোগ
নগরীতে যানজট নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে ৬ হাজার ইজিবাইক চালককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এ কার্যক্রম চলমান থাকবে বলে জানান কেএমপি কমিশনার।

আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ও পুলিশের অবস্থান

এর মধ্যেই গত ২৪ জুন পুলিশের এসআই সুকান্ত দাশকে স্থানীয়রা মারধর করে খানজাহান আলী থানা পুলিশের হাতে তুলে দেন। রাতেই তাকে ছেড়ে দেওয়ায় ক্ষোভ তৈরি হয়। পরদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটামসহ আন্দোলন শুরু হয়। এরপর পুলিশ সুকান্তকে গ্রেফতার করে।

তবে আন্দোলনকারীরা কমিশনারের অপসারণের দাবিতে অনড় থাকায় আন্দোলনের নতুন ধারা তৈরি হয়। আন্দোলনের প্রথম সারিতে থাকলেও সুকান্ত গ্রেফতারের পর ছাত্র আন্দোলনকারীদের উপস্থিতি কমে যায়। এখন আন্দোলনের নেতৃত্বে ‘খুলনার সাধারণ ছাত্র-জনতা’ ব্যানারে মিছিল, সমাবেশ ও টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে কেএমপি কমিশনার বলেন, ‘সুকান্ত দাশকে আটক করা হয়েছে। এরপরও আন্দোলনের নামে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে, যা পুলিশের মনোবলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং অপরাধীরা উসকে উঠবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশ অত্যন্ত ধৈর্য ও নমনীয়তা দেখাচ্ছে। কোনো রকম দমন-পীড়নে না গিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তবে অনৈতিকভাবে পুলিশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া হলে শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আবার অবনতির আশঙ্কা রয়েছে।’

kmp

আন্দোলনকারীদের বক্তব্য
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা কমিটির সদস্য সচিব সাজিদুল ইসলাম বাপ্পী বলেন, ‘সুকান্তকে গ্রেফতারের পরও কমিশনারের অপসারণ দাবি করছি। দাবি আদায়ে আমরা অনড়।’

বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণ
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর খুলনা জেলা সভাপতি আইনজীবী কুদরত-ই-খুদা বলেন, ‘খুলনার চলমান আন্দোলন জটিল রূপ নিয়েছে। প্রশাসনের জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ হলো নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করা এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনা।’

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর