রাত হলেই সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার রানীরহাট-বেড়খালী আঞ্চলিক সড়কটি চলে যায় ডাকাতদের দখলে। সন্ধ্যার পর থেকেই আনা গোনা বেড়ে যায় ডাকাতদের। তাই সন্ধ্যা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডাকাত আতঙ্ক বেড়ে যায় ওই সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী পথচারী ও স্থানীয়দের মাঝে।
কথায় আছে ‘যে যাবে বেড়খালী তার হবে পকেট খালি’। গত ৫ আগস্টের পর থেকে ওই আঞ্চলিক সড়কে মাঝে মধ্যে ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।গত ১১ মাসে ওই সড়কে প্রায় শতাধিকের বেশি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। সব জেনেও কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না স্থানীয় প্রশাসন। তবে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন বলছে, সড়কের আগাছা জঙ্গল পরিষ্কার পরিচ্ছিন্ন, পর্যাপ্ত সোলার প্যানেল স্থাপন ও পুলিশি টহল বৃদ্ধি আর পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা গেলে ডাকাতির ঘটনা অনেকটা কমে যাবে।
বিজ্ঞাপন
জানা যায়, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলা সাথে বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলা, নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলার যোগাযোগের একমাত্র আঞ্চলিক সড়ক এই রানীরহাট-বেড়খালী সড়কটি। তিনটি জেলার সাথে যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হওয়ার কারণে বেড়খালী এলাকাটি সিমান্তবর্তী হওয়ায় ডাকাতদের নিরাপদ আশ্রয় স্থলে পরিণত হয়েছে। যুগের পর যুগ ধরে এই সড়কে ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও গত ১১ মাসে ঘটেছে রেকর্ড পরিমাণ ডাকাতির ঘটনা। ৫ আগস্টের পর থেকে পুলিশি কার্যক্রম কম থাকার কারণে নিরাপদে ডাকাত দল সড়কে গাছের গুড়ি ফেলে মানুষ ও যানবাহনের পথ রোধ করে মানুষের কাছে থাকা নগদ অর্থ ও মালামাল ডাকাতি করে নিচ্ছে প্রতিনিয়ত। যে কারণে সন্ধ্যার পর আর কোন মানুষ বা যানবাহন এই সড়কে চলাচল করতে অনেক ভয় পায়। তাই সাধারণ মানুষ ভোরে ও সন্ধ্যার পর থেকে আতঙ্কের মধ্যে দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।
ডাকাতের কবলে পড়া স্থানীয় দৈনিক ইত্তেফাকের সাংবাদিক গোলাম মোস্তফা বলেন, গত রমজানের ঈদে আমি বগুড়া থেকে আমার বাড়ি আসানবাড়ি যাচ্ছিলাম রাত এগারটার দিকে তখর আমিও ডাকাতির কবলে পড়ি। ওই সময় আমার বেশ কিছু অর্থ খোয়া যায়। ওই সময় আমার গাড়ি চালককে দেশীয় অস্ত্র হাসুয়া দিয়ে কোপ দিয়ে আহত করে। এখানে আশেপাশে গ্রাম ও বসতবাড়ি না থাকায় যে কারণে ডাকাতদল এখানে ডাকাতি সংঘটিত করার সুবিধা পায়।এই সড়কটিতে মাঝারি আকারের গাছ ফেলে ডাকাতির ঘটনা ঘটানো হয়।
স্থানীয় আরেক যুবক সুমন হোসেন বলেন, সন্ধ্যার পর কোনোদিন রাত দশটা আবার কোন সময় মাগরিবের পরে রাস্তায় চলাচলকারী যে ব্যক্তিকে পায় ডাকাতরা তাদের ধরে মারপিট করে টাকা পয়সা, মোবাইলসহ অন্যান্য সকল কিছু ছিনতাই করে নিয়ে চলে যায়। এতোদিন ধরে এই স্থানে ওই সকল অপকর্ম ঘটলে এখন পর্যন্ত পুলিশ প্রশাসন কাউকে আটক করতে পারেনি।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দল কাদের নামে একজন বলেন, সড়কে আশেপাশে কোনো ঘরবাড়ি নাই যার কারণে এই ডাকাতিগুলো হচ্ছে। অনেক সময় দূরে কোথাও গেলে গ্রামে ফিরতে রাত হলে আমরা এই সড়ক দিয়ে রাতের বেলায় আসতে আর সাহস হয় না। অনেক দূর দিয়ে ঘুরে বাড়ি ফিরতে হয়। রাত হলেই ডাকাত আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। এখানে পুলিশ ফাঁড়ি করলে কিছুটা সমাধান হতে পারে।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় ভ্যান চালক সোরহাব আলী বলেন, রাত হলেই রানিহাট থেকে বেড়খালি এই সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। কারণ সড়কের উপরে গাছ ফেলে ডাকাতি, ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।অনেক সময় চলাচলকারীরা তাদের কাছে থাকা সম্পদ দিতে না চাইলে ধস্তাধস্তি করে মারপিট করে সবকিছু কেড়ে নিয়ে পালিয়ে যায় ডাকাতরা।
এ ব্যাপারে তাড়াশ উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আমিনুর রহমান টুটুল জানান, সন্ধ্যার পর থেকে রাত ১১ মধ্যে ডাকাতি ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি ঘটে। আমরা এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন অবহিত করেছি। আমরা বেড়খালীর আশপাশের গ্রামে গ্রামে মানুষকে সচেতন করার জন্য বৈঠক করেছি যাতে করে আর কোন ডাকাতির ঘটনা না ঘটে।যারা ওই সকল অপকর্মের ঘটনার সাথে জড়িত সে বিষয়ে তাদের প্রতি নজর রাখার জন্য বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে তাড়াশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জিয়াউল রহমান জানান, মূলত বেড়খালী ও হাসান ব্রিজ মধ্যেবর্তী সংলগ্ন এলাকায় ডাকাতি হয়ে থাকে। সেখানে ঘরবাড়ি বা কোন বসতি না থাকায় ডাকাতরা সুযোগগুলো পায়।সেক্ষেত্রে যদি রানীরহাট থেকে বেড়খালী পর্যন্ত আঞ্চলিক ওই সড়কটির দুই পাশে আগাছা জঙ্গল পরিষ্কার পরিচ্ছিন্ন করে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থাসহ একটি যাত্রী ছাউনি ও অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প করা হলে ডাকাতিটা অনেকটা কমে আসবে এবং স্থানীয় জনসাধারণের চলাচল অনেকটা নিরাপদ হবে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে সহায়তা কামনা করছি।
এ বিষয়ে তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত জাহান জানান, আমরা এই মাসে আইনশৃঙ্খলা মিটিং-এ এই বিষয়ে আলোচনা করেছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে এই সড়কে আগাছা পরিষ্কার, পর্যাপ্ত সোলার লাইট ও পুলিশি টহল বৃদ্ধি করার জন্য কাজ করা হচ্ছে। আশা করছি সবার সহযোগিতায় ওই সড়কটিতে যে সমস্যা রয়েছে সেটা নিরসন করা সম্ভব হবে।
প্রতিনিধি/ এজে

