বরগুনার আমতলী উপজেলায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) আমন মৌসুমের ধানবীজ সরবরাহ নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও কৃত্রিম সংকট তৈরির অভিযোগ উঠেছে। সরকারি নির্ধারিত মূল্য ৬৭০ টাকা হলেও ১০ কেজির বীজ বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকায়।
অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন উপজেলার উত্তর সোনাখালী এলাকার ডিলার মো. মধু প্যাদা। স্থানীয় কৃষকদের দাবি, বিএডিসির অনুমোদন ছাড়াই বরিশালের জননী ট্রেডার্সের মালিক ফরিদ মিয়ার কাছ থেকে প্রায় ৬০ মেট্রিক টন ধানবীজ সংগ্রহ করে নিজের গোডাউনে মজুত করেন তিনি। পরে ওই বীজ আমতলী, তালতলী, রাঙ্গাবালী ও কলাপাড়া উপজেলার বিভিন্ন দোকানে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন

কৃষকরা জানান, গত বছরও মধু প্যাদার সরবরাহ করা বীজ থেকে আশানুরূপ ফলন হয়নি। এ নিয়ে তখন কচুপাত্রা ও গুলিশাখালী বাজারে মানববন্ধন করেছিলেন তারা। স্থানীয় কৃষকরা অবিলম্বে বাজারে পর্যাপ্ত বীজ সরবরাহ ও নির্ধারিত মূল্য নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেন, এই সিন্ডিকেট ভাঙা না হলে আমন মৌসুমে ফসল উৎপাদনে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে।
চলতি মৌসুমে আমতলী উপজেলায় ২৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে প্রয়োজন প্রায় ৫৮০ মেট্রিক টন বীজ। অথচ বিএডিসি মাত্র ৫৫ মেট্রিক টন বীজ সরবরাহ করেছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
রায়বালা গ্রামের কৃষক জুয়েল হাওলাদার বলেন, বিআর-২৩ জাতের ১০ কেজির বীজ ৭৫০ টাকায় কিনেছি।
বিজ্ঞাপন
কাউনিয়ার নজরুল ইসলাম বলেন, কয়েকটি দোকানে ঘুরেও বীজ পাইনি। শেষ পর্যন্ত খালি হাতে ফিরেছি।
আড়পাঙ্গাশিয়ার কৃষক আফজাল হোসেন শরীফও একই অভিযোগ করেছেন। সিন্ডিকেট করছে মধু প্যাদা।

বিএডিসির আরেক ডিলার হুমায়ুন ঢালী অভিযোগ করে বলেন, মধু প্যাদা অনুমোদন ছাড়াই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বীজ এনে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছেন। এমনকি মুদি ও কসমেটিকস দোকানেও এসব বীজ পাওয়া যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা ডিলার হয়ে লোকসানে বিক্রি করছি।
অন্যদিকে, অভিযুক্ত ডিলার মধু প্যাদা বলেন, আমি সরকার থেকে মাত্র ৪ মেট্রিক টন বীজ পেয়েছি। চাহিদা মেটাতে ফরিদ মিয়ার কাছ থেকে বাড়তি বীজ এনেছি। সব বিষয়ে কর্মকর্তারা জানেন।
বরিশালের ফরিদ মিয়া বলেন, আমি মধু প্যাদার কাছে অনেক বীজ বিক্রি করেছি। তবে ব্যবসায়িক স্বার্থে সব কিছু বলা যাবে না।
এ বিষয়ে আমতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাসেল মিয়া বলেন, বেশি দামে বীজ বিক্রি করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে এক ডিলারের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।
আরও পড়ুন
তবে বরিশাল বিএডিসির উপ-পরিচালক মো. আসাদুজ্জামান বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। তিনি বলেন, মধু প্যাদা বাইরে থেকে বীজ কিনলে সমস্যা কী? এত বাড়াবাড়ি করছেন কেন?
এ বিষয়ে আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রোকনুজ্জামান খান বলেন, কেউ যদি বিএডিসির বীজ নিয়ে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাড়তি দামে বিক্রি করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রতিনিধি/এসএস

