রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

১১ বছর গোবিপ্রবির ক্যাম্পাসে রিজেন্ট বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয় না

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, গোবিপ্রবি
প্রকাশিত: ৩০ জুন ২০২৫, ০৬:৪৭ পিএম

শেয়ার করুন:

১১ বছর গোবিপ্রবির ক্যাম্পাসে রিজেন্ট বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয় না

দীর্ঘ ১১ বছর ধরে গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (গোবিপ্রবি) রিজেন্ট বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হয়নি নিজ ক্যাম্পাসে।

সম্প্রতি নবগঠিত রিজেন্ট বোর্ড সদস্যদের নিয়ে রিজেন্ট বোর্ডের ৪০তম সভা সোমবার (৩০ জুন) সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ ইন সায়েন্সেসের কনফারেন্স রুমে (২য় তলা) অনুষ্ঠিত হয়।


বিজ্ঞাপন


২০০১ সালে  বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলেও ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষ থেকে চারটি অনুষদের ৫টি বিভাগের মোট ১৬০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে গোবিপ্রবি। বর্তমানে প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থী এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। গোবিপ্রবি আইন ২০০১ এর ২০ নং ধারা অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়টির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম হলো রিজেন্ট বোর্ড। বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ, নিয়োগ, পরীক্ষা আয়োজন, ফলাফল ঘোষণা, এবং কারও বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় সিদ্ধান্ত রিজেন্ট বোর্ডেই চূড়ান্ত হবে। আইনের ১৯ ধারা অনুযায়ী প্রতি ৬ মাস পর রিজেন্ট বোর্ডের একটি সভা আয়োজন বাধ্যতামূলক।

images

তবে অভিযোগ পাওয়া গেছে আইনে উল্লেখ থাকলেও সঠিক সময়ে অনুষ্ঠিত হয় না গোবিপ্রবির রিজেন্ট বোর্ড। তদন্ত প্রতিবেদনসহ অনেক বিষয়ই রিজেন্ট বোর্ডের এজেন্ডাভুক্ত করা হয় না।

এমনকি গত ১০ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো রিজেন্ট বোর্ডের সভায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হয়নি। ফলে রিজেন্ট বোর্ডের অনেক সদস্যই বছরের পর বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে সশরীরে আসেননি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কেও অবগত নন।


বিজ্ঞাপন


_108837491_img_20190702_141851

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন উপাচার্য অধ্যাপক খাইরুল আলম দায়িত্বে থাকাকালীন ২০১৪ সালে সর্বশেষ গোবিপ্রবি  ক্যাম্পাসে রিজেন্ট বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টির রিজেন্ট বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে (এফআইইউ)। বেসরকারি এই বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান শেখ কবির গোবিপ্রবির রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য হওয়াতেই মূলত এখানে রিজেন্ট বোর্ডের সভা আয়োজন করা হয়।

আরও পড়ুন

ববির বাজেট প্রত্যাখ্যান করে বরাদ্দ বৃদ্ধির আহ্বান ছাত্র কাউন্সিলের

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতা তাসনীম বিল্লাহ বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণকারী স্থান হলো রিজেন্ট বোর্ড। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কেউ কোনো বিষয়ে তার সিদ্ধান্ত দেওয়ার আগে সেই বিষয়ে তাকে পূর্ব থেকে দেখা, জানা প্রয়োজন। একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ড সদস্য যারা হয়েছেন তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে না আসলে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যাগুলো কীভাবে বুঝবেন? যিনি বোর্ড সদস্য হবেন তিনি যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতেই না চান তাহলে তিনি বোর্ড সদস্য হওয়ার যোগ্যতা রাখে কিনা তা প্রশ্ন থেকে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যাগুলো বোর্ড সদস্যরা সরাসরি এসে দেখলে সমস্যার সমাধান সহজে হয়ে যেত। ফলে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা কর্মচারীদের সমস্যা নিয়ে বার বার আন্দোলন করা লাগতো না।

তিনি আরও বলেন, রিজেন্ট বোর্ড সভা করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশ না থাকলে পরিবেশ তৈরি করার আহ্বান জানাই। সব শিক্ষার্থীদের চাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ড মিটিং বিশ্ববিদ্যালয়ে হওয়া। তাই স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সকল মিটিং এখন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে করতে হবে। কোনো সদস্য ক্যাম্পাসে আসতে না চাইলে তাকে বাদ দিয়ে প্রয়োজনে নতুন বোর্ড করতে হবে।

1748971474_b3a71a704a61b9981cbe

গোবিপ্রবি ছাত্রদলের সভাপতি দুর্জয় শুভ বলেন, ২৪ পরবর্তী নতুন বাংলাদেশে আমরা চাই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ড আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে হোক। রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য যারা হয়েছেন, তাদের অনেকেই হয়ত আমার বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে জানেনই না। আমার বিশ্ববিদ্যালয় কি কি সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, কি কি দরকার বিশ্ববিদ্যালয়ে,  শিক্ষার্থীদের চাওয়া-পাওয়া কি? বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার ও ম্যামদের চাওয়া-পাওয়া কি? কোনটা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জরুরি, তার কোনো কিছুই জানেন না হয়ত উনারা। তাই যারা রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য হয়েছেন, আপনারা আমাদের ৫৫ একরে আসুন, দেখুন কি কি দরকার এই বিশ্ববিদ্যালয়ের। তাই আমরা চাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ড এই বিশ্ববিদ্যালয়েই হোক।

এ বিষয়ে উপাচার্য  অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর বলেন, আমরা রিজেন্ট বোর্ডের সদস্যদের নাম দিয়েছি  কিন্তু ইউজিসি তাদের ইচ্ছে মতো সদস্য নির্বাচিত করেছে। তারা অধিকাংশ নামই ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং খামারবাড়ি বাস করে। আমরা তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সভা করার কথা বলছিলাম কিন্তু ভালো গেস্ট হাউজ, কনফারেন্স রুম,অডিটরিয়াম না থাকায় তারা  রিজেন্ট বোর্ডের সভা বিশ্ববিদ্যালয়ে করতে চায়নি। আবার ৩০ তারিখের মধ্যে মিটিং করার বাধ্যবাধকতা ছিল সেজন্য আমরা আপাতত ঢাকায় রিজেন্ট বোর্ডের সভার আয়োজন করেছি।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর