বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

বিসিসি-পাউবোর দ্বন্দ্বে খাল খনন বন্ধ: ভোগান্তিতে বরিশালবাসী

শাওন খান
প্রকাশিত: ২০ জুন ২০২২, ১০:১০ এএম

শেয়ার করুন:

বিসিসি-পাউবোর দ্বন্দ্বে খাল খনন বন্ধ: ভোগান্তিতে বরিশালবাসী

বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দ্বন্দ্বেবন্ধ রয়েছে নগরীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ৭ খালের খনন কাজ। সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ড খাল খনন টেন্ডার কাজ সম্পন্ন করলেও এতে বাধ সাধে সিটি করপোরেশন। ফলে নগরীর খালগুলো খননে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। আর খাল খনন না হওয়ায় চরম ভোগান্তি ও দুর্ভোগ পোহাচ্ছে নগরবাসীসহ খাল পাড়ের বাসিন্দারা।

বরিশাল সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, খাল খনন ও সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য ২০১৯ সালে ২৬ কোটি টাকার একটি বড় প্রকল্প হাতে নেয় বিসিসি। যা এখনো পাশের অপেক্ষায় রয়েছে। এর ফলে পাউবোর খাল খননের এ কার্যক্রম স্থগিত রেখেছে বলে জানায় সিটি করপোরেশন।


বিজ্ঞাপন


অপরদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, নগরীর বাসীর ভোগান্তির কথা ভেবে জলাবদ্ধতা নিরসনে পাউবো ৭টি খাল খননের জন্য টেন্ডার আহবান করে। যা চলতি বছরের ১২ এপ্রিল প্রায় ৭ কোটি টাকার টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। কিন্তু পাউবোর কাজে আপত্তি তুলে চিঠি দিয়েছে সিটি করপোরেশন। ফলে কাজ শুরুর আগেই বন্ধ রয়েছে খাল খনন প্রকল্প।

রোববার (১৯ জুন) নগরীর বিভিন্ন খাল সংলগ্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, গত কয়েক বছর ধরে খনন ও সংস্কার না করায় খালগুলো প্রায় মরতে বসেছে। নগরীর সাগরদী খাল, চাঁদমারী খাল, ভাটার খাল, জেল খাল, আমানতগঞ্জ খাল, পলাশপুর খাল ও রূপাতলী খাল খনন না করায় খালগুলো আশির্বাদের পরিবর্তে ময়লা জমে ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এছাড়া খাল দখলের মহোৎসবতো রয়েছেই। স্বাধীনতার পর থেকেই বরিশালে চলে আসছে খাল দখলের মহোৎসব। ফলে চরম ভোগান্তি আর দুর্ভোগের যেন শেষ নেই নগরবাসী ও খাল পাড়ের বাসিন্দাদের।

barishal

নগরীর জেল খাল পাড়ের বাসিন্দা সাহনাজ সুমি বলেন, ‘খাল খনন না করায় ময়লা জমে এমন অবস্থা হয়েছে যে দুর্গন্ধে বাসা বাড়িতে থাকা দায়। এত পরিমাণ ময়লা জমেছে যে, এই বর্ষায়ও খালের পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে রয়েছে। ফলে চরম ভোগান্তিতে সহ্য করেও থাকতে হচ্ছে খাল পাড়ের বাসিন্দাদের।’


বিজ্ঞাপন


নগরীর বান্দ রোডের ভাটার খাল পাড়ের বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আগে খালের পানি ভালো ছিল, তখন নামাজের জন্য অযু থেকে শুরু করে গোসল পর্যন্ত করা যেত। আর এখন খালের পানিতে হাত ছোঁয়ানো যায় না। তাছাড়া জলাবদ্ধতার ভোগান্তিতো রয়েছে।’

খাল খনন ও সংস্কার করা জরুরি প্রয়োজন বলে দাবি করেন এ এলাকার বাসিন্দারা।

এদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সিটি করপোরেশনের টানা পোড়ানের দ্বন্দ্বে লোকসানে পড়বে নগরীর বাসিন্দারা বলে মনে করেন সচেতন মহল। উন্নয়ন প্রকল্পে কোনো দ্বন্দ্ব থাকা ঠিক নয় বলে জানান বরিশাল সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি শাহ্ সাজেদা।

তিনি জানান, বিশ্বে জলবায়ুর যে ভয়াবহ অবস্থা তাতে বরিশালের খালগুলো জরুরি খনন করা প্রয়োজন। তা যে আঙ্গীকেই করা হোক। কার অধীনে কাজ হবে বা কার নেতৃত্বে হবে এই দ্বন্দ্বে পরে আমাদের খাল খননের কাজ বন্ধ হয়ে আছে। উন্নয়ন প্রকল্প গ্ৰহণ করার ক্ষেত্রে কোনো দ্বন্দ্ব বা প্রতিহিংসা থাকা উচিত না।

বরিশাল নদী খাল বাঁচাও আন্দোলন সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন সিপলু জানান, বরিশাল নগরীর খালগুলো নগরবাসীর সৌভাগ্যের প্রতীক। তবে কেউ যত্ন এর নিচ্ছে না। এতে খালের শহর বরিশাল আর নেই। খালগুলো নগরীর পরিবেশ-প্রতিবেশের জন্য আশীর্বাদ। এগুলো বাঁচানো গেলে বরিশাল প্রকৃত অর্থেই প্রাচ্যের ভেনিস হতো। খালগুলোর অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ায় পানির উৎস ধ্বংস হচ্ছে। পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। খালগুলো খনন ও সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

barishal

বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ জানান, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে খালগুলো বর্ষা মৌসুমের আগে খনন করা খুবই জরুরি ছিল। খালগুলো সংস্কার করতে পারলে সিটি করপোরেশন এলাকার জলাবদ্ধতা অনেকাংশে নিরসন হবে। তাই খালগুলো খনন ও সংস্কার করা দ্রুত প্রয়োজন।

তিনি আরও জানান, খালগুলো খননের জন্য এরই মধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হলেও তা আপত্তি তুলে বন্ধ রেখেছে সিটি করপোরেশন।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মো. ফারুক আহম্মদ জানান, খালগুলো খননের জন্য আগে থেকেই প্রকল্প দেওয়া রয়েছে। কিন্তু সিটি করপোরেশনের অনুমতি না নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। তাই আপাতত খাল খনন বন্ধ রাখার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও জানান,  খাল খনন বন্ধ রাখার চিঠি দেওয়া হয়েছে তার মানে এই না যে প্রকল্প বাতিল করতে বলা হয়েছে। সমন্বয় হলে পরবর্তীতে কাজ শুরু করতে পারবে।

টিবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর