সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

৩ দিনেও উদ্ধার হয়নি দুই কিশোরী

গণমাধ্যমে কথা বলায় রংপুর শিশু পুনর্বাসনে নির্যাতনের শিকার স্মৃতি

জেলা প্রতিনিধি, রংপুর
প্রকাশিত: ২৫ জুন ২০২৫, ০৯:৩৫ পিএম

শেয়ার করুন:

গণমাধ্যমে কথা বলায় রংপুর শিশু পুনর্বাসনে নির্যাতনের শিকার স্মৃতি

পুনর্বাসন কেন্দ্রে শিশুদের শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের তথ্য গণমাধ্যমে বলায় রংপুর সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন (বালিকা) কেন্দ্রে ফের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন স্মৃতি আক্তার (১৬)। তার অভিযোগ, চুল কেটে দিয়েছে কেন্দ্রের দায়িত্বরতরা। অন্যদিকে ওই শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে নিখোঁজের ১৩ দিনেও দুই নিবাসী আশা ও নিতু উদ্ধার না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সচেতনরা।

বুধবার (২৫ জুন) পুনর্বাসন কেন্দ্রের নির্যাতন থেকে মেয়েকে রক্ষায় রংপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এ নিজ জিম্মায় নিতে আবেদন করেন নিবাসী স্মৃতি আক্তারের মা মুক্তি বেগম। পরে সকাল ১১টায় রংপুর সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন (বালিকা) থেকে স্মৃতিকে আদালতে আনার কথা থাকলেও বিকেল ৫টার দিকে তাকে আনা হয়। আদালতের বিচারক সোয়েবুর রহমান স্মৃতির জবানবন্দি নেন এবং এজলাসে শুনানি করে তাকে মা মুক্তি বেগমের জিম্মায় দেন।


বিজ্ঞাপন


আদালতে ভুক্তভোগী স্মৃতি আক্তার জানান, সকাল ১১টায় তাকে আদালতে উপস্থাপন করার কথা থাকলেও পুলিশ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের কর্মকর্তারা তাকে দু’বার থানায় নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। সেই সাথে পালিয়ে আত্মরক্ষার সময় যে বাড়িতে গিয়ে উঠেছিল সেই বাড়িতে তাকে নিয়ে গিয়ে সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর বিকেলে তাকে আদালতে উপস্থাপন করে পুলিশ। সেই সাথে জিজ্ঞাসাবাদের নামে বারবার হয়রানি ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের অনিয়মের তথ্য গোপন করার জন্য চাপ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ওই কিশোরী দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

স্মৃতি আক্তার আরও বলেন, পুনর্বাসন কেন্দ্রে শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের কারণে আমিসহ ৪ জন পালিয়ে গিয়েছিলাম। আমাকে আবারও সেই কেন্দ্রেই পাঠানো হয়েছে। কেন্দ্রে যাওয়ার পর সেখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে আমার কারণে তাদের পুনর্বাসন কেন্দ্রের দুর্নাম হয়েছে বলে জানায়। আমি ঘুমিয়ে থাকলে তারা আমার চুল কেটে দিয়েছে। আমি অসুস্থতা অনুভব করলে তারা শুধু নাপা ট্যাবলেট খেতে দেয়। পুনর্বাসন কেন্দ্রের নিবাসীদের সাথে যারা শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন করেছে আমি তাদের বিচার চাই।

আরও পড়ুন

অবহেলায় প্রসূতির মৃত্যু: ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতালকে ২ লাখ টাকা জরিমানা

স্মৃতি আক্তারের মা মুক্তি বেগম বলেন, জীবন বাঁচাতে আমার মেয়ে পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে পালিয়ে গিয়েছিল। পুলিশ আদালতের মাধ্যমে আবারও সেই পুনর্বাসন কেন্দ্রে আমার মেয়েকে পাঠিয়েছে। মেয়ে কেমন আছে জানতে আমি পুনর্বাসন কেন্দ্রে গেলে সেখানকার কর্মকর্তারা আমার সাথে দুর্ব্যবহার করেন। আমার মেয়ের চুল কেটে দেওয়াসহ নির্যাতনের ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করব।


বিজ্ঞাপন


এ ব্যাপারে অ্যাডভোকেট জোবাইদুল ইসলাম বলেন, পুনর্বাসন কেন্দ্রের নিবাসী স্মৃতি আক্তারকে তার মায়ের জিম্মায় দিতে আদালতে স্মৃতিকে উপস্থাপন করা হয়েছিল। আদালত স্মৃতির জবানবন্দি নিয়ে তাকে তার মায়ের জিম্মায় দিয়ে দিয়েছে। তবে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা শিশুকে নিরাপদে থাকার জন্য রাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠানে রাখা হয়েছে। সেখানে নিবাসীরা যদি শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়, তাহলে রক্ষকই ভক্ষক হয়ে যায়। সমাজসেবা উপ-পরিচালক অনিল চন্দ্র বর্ম্মন নিবাসী শিশুদের ধর্ষণের সহযোগিতা করেছে। তিনিসহ পুনর্বাসন কেন্দ্রের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে রংপুর সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন (বালিকা) কেন্দ্রের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম সন্ধ্যায় বলেন, ‘নির্যাতনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। মেয়েরা নিজ ইচ্ছায় পালিয়ে গেছে।’ পালানোর সময় আউটসের্সিংয়ে কর্মরত রুমা বেগমের কাছে চাবি ছিল। সে কারণে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ওই ঘটনায় তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

এর আগে নগরীর দেওডোবা ডাংগীরপাড় এলাকার রংপুর সমন্বিত শিশু পূনবার্সন কেন্দ্র থেকে গত ১২ জুন রাতে নিখোঁজ হন নিবাসী নিতু, স্মৃতি, কৃতি ও আশা নামে চার কিশোরী। ১৫ জুন পরিবারের সদস্যরা স্মৃতি ও কৃতিকে নগরীর চিড়িয়াখানা এলাকা থেকে উদ্ধার করে পুলিশকে জানায়। পরে পুলিশ তাদের আদালতের মাধ্যমে পুনরায় পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠায়। এ ঘটনায় পরিবারের সদস্যরা উদ্ধার হওয়া কিশোরীদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠাতে অস্বীকৃতি জানায়। আপত্তির কারণ হিসেবে তারা পুনর্বাসন কেন্দ্রে মেয়েদের ওপর নির্যাতন ও তার জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত বলে গণমাধ্যমকে জানান।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর