বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

অনড় শিক্ষার্থীরা

সংকট সমাধানে ছুটে গেলেন সেনাবাহিনী পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা

জেলা প্রতিনিধি, রংপুর
প্রকাশিত: ২৫ জুন ২০২৫, ০৮:৩২ পিএম

শেয়ার করুন:

সংকট সমাধানে ছুটে গেলেন সেনাবাহিনী পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা

টানা চতুর্থ দিনের মতো ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করেছেন কারমাইকেল কলেজের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায়ে কলেজের প্রবেশ ফটক, প্রশাসনিক ভবনসহ সব বিভাগের ফটকে তালা ঝুলিয়ে রাখা হয়। সংকট সমাধানে ছুটে গেলেন সেনাবাহিনী, পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তবে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনে অনড় শিক্ষার্থীরা।

বুধবার (২৫ জুন) আন্দোলনের চতুর্থ দিনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে কারমাইকেল কলেজের প্রবেশ ফটকের সম্মুখে উপস্থিত হন জেলা প্রশাসক, পুলিশ কমিশনার ও সেনা কর্মকর্তারা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ রবিউল ফয়সাল, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মজিদ আলী ও সেনাবাহিনীর ৭২ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুম। এ সময় তারা শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং শান্তিপূর্ণভাবে আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানের আশ্বাস দেন।


বিজ্ঞাপন


তবে শিক্ষার্থীরা বলেন, আর আশ্বাস নয়-চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এবং লিখিত প্রতিশ্রুতি চাই। সৃষ্ট সংকট সমাধানে শিক্ষা উপদেষ্টা ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে সশরীরে অনতিবিলম্বে কারমাইকেল কলেজে আসার জন্য শিক্ষার্থীদের পক্ষ  থেকে দাবি জানানো হয়। এ ছাড়া এই আন্দোলন স্থগিত করা হবে না বলেও জানান শিক্ষার্থীরা।

পরে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দলকে সঙ্গে নিয়ে কলেজ ক্যাম্পাস পরিদর্শন করেন সেনাবাহিনী, পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

এর আগে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে চতুর্থ দিনের মতো কলেজের প্রবেশ ফটকের সামনে অবস্থান নেয় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

555


বিজ্ঞাপন


আন্দোলরত শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আমরা ক্লাসে ফিরতে চাই। কিন্তু তার আগে চাই সমস্যার স্থায়ী সমাধান। প্রশাসনের কর্মকর্তারা এসেছেন, এটা ভালো উদ্যোগ। কিন্তু আমরা শিক্ষা উপদেষ্টার সরাসরি আগমন এবং লিখিত আশ্বাস ছাড়া আন্দোলন স্থগিত করব না।

আরেক শিক্ষার্থী আসাদ বলেন, ১৯১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত শতবর্ষী কারমাইকেল কলেজ দীর্ঘসময় ধরে অবহেলিত। বর্তমানে এখানে ২৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। অথচ ছাত্রাবাসে জায়গা মাত্র ৮০০ শিক্ষার্থীর। আমাদের শ্রেণিকক্ষগুলো জরাজীর্ণ, নেই ফ্যান-নেই পর্যাপ্ত আলো। এমন বাস্তবতায় দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের দুর্ভোগ  পোহাতে হচ্ছে। বর্তমান শিক্ষার্থীর পাশাপাশি প্রাক্তন শিক্ষার্থীদেরও দেখা যায় আন্দোলনে অংশ নিতে। এই আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ কলেজের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল বলেন, ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়ে কথা হয়েছে। সময় ঠিক করে মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষা উপদেষ্টা এই কলেজে আসবেন। যে দাবিগুলো শিক্ষার্থীরা তুলেছেন, তা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের জন্য শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানিয়ে সেনাবাহিনীর ৭২ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুম বলেন, আমি প্রথমে স্যালুট জানাতে চাই কারমাইকেল কলেজের সব শিক্ষার্থীদের। কেননা, আপনারা চার দিন আন্দোলন করে প্রমাণ করেছেন যে, শান্তিপূর্ণভাবে ও সহনশীলতার সাথে আন্দোলন করেও দাবি আদায়ের পথ খোলা থাকে। আপনাদের দাবিগুলো নিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে কথা বলার চেষ্টা করা হচ্ছে। 

আরও পড়ুন

‘শিক্ষা উপদেষ্টা ও ইউজিসির ভিসি না আসা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে’

কারমাইকেল কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর যৌক্তিকতা স্বীকার করি। ইতিমধ্যে বেশকিছু দাবি বাস্তবায়নে লিখিত প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যেহেতু শিক্ষা উপদেষ্টার সরাসরি উপস্থিতি চাইছে, সেহেতু তার একান্ত সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। দাবি পূরণে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় গত রোববার থেকে কলেজে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের প্রধান দাবিগুলো হলো কলেজের সব খাতে আর্থিক বরাদ্দ বৃদ্ধি করা, নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণ, মানসম্মত অডিটরিয়াম নির্মাণে পূর্ণ বরাদ্দ নিশ্চিত করা, কলেজের দখলকৃত জমি উদ্ধার এবং কলেজ চত্বরে অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করে রাস্তা প্রশস্ত করা ও সৌন্দর্যবর্ধনমূলক ফটক নির্মাণ, কলেজের জমি অন্য কোথাও না দেওয়ার লিখিত নিশ্চয়তা, হল সংখ্যা বৃদ্ধি এবং পুরোনো হলগুলোর সংস্কার, শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য অন্তত ছয়টি বাস সরবরাহ, প্রতিটি শ্রেণিকক্ষ স্মার্ট ক্লাসরুমে রূপান্তর, কলেজে পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ, বিজ্ঞান বিভাগের জন্য আধুনিক ল্যাবরেটরি ও উন্নত সরঞ্জাম প্রদান। এই সব দাবি আদায়ের লক্ষ্যে গত রোববার থেকে কলেজের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর