সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

সুন্দরগঞ্জে মোবাইল নেটওয়ার্ক বিভ্রাট, যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত

জেলা প্রতিনিধি, গাইবান্ধা
প্রকাশিত: ২৪ জুন ২০২৫, ০২:৩১ এএম

শেয়ার করুন:

সুন্দরগঞ্জে মোবাইল নেটওয়ার্ক বিভ্রাট, যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কঞ্চিবাড়ি ইউনিয়নের বজরা কঞ্চিবাড়ি বাজার ও আশপাশের গ্রামগুলোতে মোবাইল নেটওয়ার্ক বিভ্রাট চরমে উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে এই নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।

বিশেষ করে মোবাইল ব্যাংকিং গ্রাহক, চিকিৎসক ও সাধারণ মানুষসহ সবাই নানা ধরনের দুর্ভোগে পড়েছেন। এসব এলাকার মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ও জরুরি যোগাযোগ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এই অবস্থায় তারা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান বরাবর লিখিতভাবে জরুরি হস্তক্ষেপ চেয়ে আবেদন জানিয়েছেন।


বিজ্ঞাপন


স্থানীয় বাসিন্দা হারুন উর রশিদের পক্ষ থেকে বিটিআরসিতে পাঠানো আবেদনে বলা হয়েছে, বজরা কঞ্চিবাড়ি বাজারসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে রবি, গ্রামীণফোন, টেলিটক, বাংলালিংক ও এয়ারটেলসহ সব মোবাইল অপারেটরের নেটওয়ার্ক সংকট প্রবল। ঘরের ভেতর মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রায় নেই বললেই চলে, বাইরে গেলেও কল কেটে যাওয়া এবং ইন্টারনেট সংযোগ নষ্ট হওয়ার ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে। ফলে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে যোগাযোগ ও ডিজিটাল সেবা গ্রহণ অনেকটাই কঠিন হয়ে পড়েছে।

আবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, বাজার এলাকায় মোবাইল টাওয়ারগুলোর দূরত্ব দীর্ঘ হওয়ায় মোবাইল সিগনাল কার্যকরভাবে পৌঁছায় না। পশ্চিমে মজুমদার হাটের মোবাইল টাওয়ার বাজার থেকে প্রায় ২.৫ কিলোমিটার দূরে, দক্ষিণে ছিলামনি বাজারের টাওয়ার ৩ কিলোমিটার দূরে, পূর্বে সীচা বাজারের টাওয়ার ২.৫ কিলোমিটার দূরে এবং উত্তরে পাঁচপীর বাজারের টাওয়ার ৪.৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই দীর্ঘ দূরত্বের কারণে মোবাইল নেটওয়ার্ক দুর্বলতা এবং সিগনাল কেটে যাওয়া প্রতিদিনের ব্যাপার হয়ে উঠেছে।

বজরা কঞ্চিবাড়ি বাজার ও আশপাশের এলাকায় রয়েছে একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেমন: প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কোচিং সেন্টার। এছাড়া আছে মসজিদ-মাদরাসা, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, কৃষি সেবা কেন্দ্র, ওষুধের দোকান ও মোবাইল ব্যাংকিং সেবা কেন্দ্র। এই সব স্থানে মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকার কারণে শিক্ষা কার্যক্রম থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য ও ডিজিটাল আর্থিক লেনদেন সবক্ষেত্রেই সংকট তৈরি হয়েছে।

এলাকাবাসী দাবি করেন, মোবাইল নেটওয়ার্ক সংকট অব্যাহত থাকলে তারা ডিজিটাল সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে অবহেলিত অঞ্চলের তালিকায় পড়ে যাবে। তাই দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা জরুরি।


বিজ্ঞাপন


স্থানীয়রা জানান, মোবাইল অপারেটররা শুধুমাত্র ব্যবসার কথা ভাবছে, গ্রাহকদের সমস্যা তাদের কাছে খুব কম গুরুত্ব পায়। নেটওয়ার্ক দুর্বল হলে আমরা বারবার অভিযোগ করলেও কোনো স্থায়ী সমাধান নেই। আমাদের ব্যবসা ও দৈনন্দিন কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। মোবাইল নেটওয়ার্ক যেন সরকারের নজরে আসে এবং গ্রাহকদের ভোগান্তি কমাতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

স্থানীয় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মমিনুল ইসলাম বলেন, বজরা কঞ্চিবাড়ীতে প্রাইমারি-হাইস্কুলসহ চারটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এখানে ঘরের ভিতর একদম নেটওয়ার্ক পায় না। সাধারণত ফোনে কথা বলা যায় না। ইন্টারনেট চালানো তো স্বপ্ন। অনেক শিক্ষার্থী-চাকরি প্রত্যাশী যারা ঘরে বসে প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে অনলাইন ক্লাসসহ বৈশ্বিক খবরাখবর নিয়ে আপডেট থাকতে পারে না। ফলে এই প্রতিযোগিতার বাজারে পিছিয়ে থাকছে। জরুরি মুহূর্তে মোবাইলে কারো সাথে যোগাযোগ করা যায় না। সিম কোম্পানিগুলোর উচিত নেটওয়ার্ক সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

বজরা কঞ্চিবাড়ী বাজারের মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবসায়ী মতিউর রহমান বলেন, গ্রাহকরা টাকা পাঠালে তারা মেসেজ পায় না। আবার টাকা তুলতে গেলে লেনদেন আটকে যায়। এতে গ্রাহকরা ক্ষুব্ধ হন আর আমাদের কাজ ব্যাহত হয়। নিয়মিত সেবা দিতে না পারলে ব্যবসায়ও প্রভাব পড়বে।

স্থানীয় প্রবাসী পরিবারের সদস্য আব্দুল হাই বলেন, আমার ছেলে দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে থাকে। আমরা প্রতিদিন ভিডিও কলের মাধ্যমে তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখি। কিন্তু মোবাইল নেটওয়ার্ক সংকটের কারণে ভিডিও কল প্রায়ই কেটে যায়। এতে কথা বলা কঠিন হয়ে পড়ে। ডিজিটাল যুগে এমন সমস্যা চলতে পারে না, সরকারের উচিত দ্রুত এই সংকটের সমাধান করা।

এ বিষয়ে আবেদনকারী হারুন উর রশিদ জানান, সরকার ডিজিটাল সেবা নিশ্চিতের কথা বলছে; কিন্তু আমাদের এলাকায় সিগন্যাল পেতে আজও তেমন কোনো সুবিধা হয়নি। আমরা বিটিআরসির কাছে লিখিতভাবে আবেদন করেছি যাতে দ্রুত একটি টাওয়ার স্থাপন করা হয়। এতে আমাদের যোগাযোগের সমস্যা দূর হবে এবং আমরা ডিজিটাল দুনিয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারব।

গ্রামীণফোনের কাস্টমার সার্ভিস প্রতিনিধি ফাতেমা তুজ জোহরা বলেন, আমরা এই অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। ইতোমধ্যে বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে নিয়েছি এবং নেটওয়ার্ক সেবা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। সমস্যার স্থায়ী সমাধানে সংশ্লিষ্ট টেকনিক্যাল টিম কাজ করে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) উপ-পরিচালক (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিকেশনস উইং) জাকির হোসেন খান বলেন, সংশ্লিষ্ট মোবাইল অপারেটরদের সঙ্গে সমন্বয় করে এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানে কাজ করা হবে।

প্রতিনিধি/এফএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর