বরগুনার আমতলী উপজেলার আমড়াগাছিয়া বাজার সংলগ্ন গুলিশাখালী খালের ওপর নির্মিত ৬ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয়ের গার্ডার সেতুটি আজ কার্যত অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
দীর্ঘ ১১ মাসেও সেতুর উভয় পাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণ না হওয়ায় এটি জনসাধারণের চলাচলের জন্য ব্যবহার উপযোগী হয়নি। ফলে আশপাশের তিনটি ইউনিয়নের অন্তত ২০টি গ্রামের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ প্রতিদিন কাঠ ও বাঁশের তৈরি অস্থায়ী মই ব্যবহার করে ঝুঁকি নিয়ে সেতু পারাপার করছে, যা তাদের দৈনন্দিন জীবনে চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে।
বিজ্ঞাপন
প্রকল্পের অবস্থা ও সমস্যা
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের মে মাসে বরিশালের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স কহিনুর এন্টারপ্রাইজ ও ত্রিপুরা জেভিকে মূল সেতুর নির্মাণকাজের জন্য কার্যাদেশ দেয়া হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ের আগেই মূল সেতুর নির্মাণ শেষ করলেও, সেতুর উভয় পাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়নি। ফলে সেতুটি শুধু নামেই সেতু হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুর পশ্চিম পাশে পূর্ব খেকুয়ানী গ্রামের একটি অভ্যন্তরীণ সড়ক রয়েছে, যা সেতুর উচ্চতার কারণে সংযোগ সড়ক নির্মাণে বাধা সৃষ্টি করছে। এই কারণেই এলজিইডি কর্তৃপক্ষ সেখানে আন্ডারপাস নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে। তবে প্রকল্প অনুমোদন ও দরপত্র প্রক্রিয়ার দীর্ঘস্থায়ীতার কারণে কাজ শুরু হয়নি।
জনজীবনে প্রভাব
স্থানীয়রা জানান, এই সেতুটি গুলিশাখালী, কুকুয়া ও চাওড়া ইউনিয়নের প্রধান সংযোগস্থল। প্রতিদিন এখানে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, কৃষক, ব্যবসায়ী, রোগী এবং সাধারণ মানুষ পণ্য ও জীবনের প্রয়োজনে চলাচল করেন। কিন্তু সেতুর অপর্যাপ্ত সংযোগ সড়কের কারণে যানবাহন চলাচল সম্ভব না হওয়ায় পণ্য পরিবহনে দ্বিগুণ ভাড়া গুণতে হয়, আর মরদেহ বহনে পর্যন্ত বড় ধরনের সমস্যা হচ্ছে।
অস্থায়ী কাঠের মই ব্যবহার করে ঝুঁকি নিয়ে সেতু পারাপারের ফলে স্থানীয়দের মধ্যে নিরাপত্তা সংকট তৈরি হয়েছে। অনেকেই নিরাপত্তার অভাবে জরুরি কাজে যেতে পারছেন না, যা জীবন ও জীবিকার উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
বিজ্ঞাপন
দায়িত্বশীলদের বক্তব্য
ঠিকাদার মো. কাওছার মিয়া বলেন, ‘আমরা চুক্তি অনুযায়ী মূল সেতুর কাজ নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ করেছি। সংযোগ সড়কের জন্য আলাদা দরপত্র প্রয়োজন হবে।’
অন্যদিকে, আমতলী উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মো. ইদ্রিস মিয়া জানান, ‘সেতুর উচ্চতার কারণে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করলে পাশের সড়কটি বন্ধ হয়ে যাবে। এজন্য সেখানে আন্ডারপাস নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নকশা ও বাজেট অনুমোদনের জন্য প্রকল্প পরিচালক বরাবর পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন মিলে গেলে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।’
জনগণের প্রত্যাশা
স্থানীয়রা আশা করছেন, এই কোটি কোটি টাকা ব্যয়ের সেতুটি দ্রুত কার্যকর হয়ে ওঠুক এবং ঝুঁকিপূর্ণ কাঠের মই দিয়ে চলাচলের চরম দুর্ভোগ থেকে তারা মুক্তি পাক। সেতুটি যেন জনকল্যাণের প্রকৃত উপযোগী হয় এবং তাদের জীবনযাত্রা সহজ হয়।
প্রতিনিধি/একেবি

