চৌগাছা পশুহাট থেকে বিগত চার বছরে প্রায় দেড় কোটি টাকা রাজস্ব লোপাট করার অভিযোগ উঠেছে পৌরসভার সাবেক মেয়র নূর উদ্দীন আলম মামুন হিমেল বিরুদ্ধে।
অভিযোগ রয়েছে, ইজারাদার আবিদুর রহমান তৎকালীন মেয়র হিমেল এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও বিএনপির প্রভাবশালী নেতাদের যোগসাজশে এই অর্থ আত্মসাৎ করে। এ চক্রটি আবারও চৌগাছা পশুহাট দখলে নেয়ার পাঁয়তারা করছে।
বিজ্ঞাপন
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, বাংলা ১৪২৮ সনে ইয়ামুল অর রশীদ টিটো ৫৬ লাখ ২৮ হাজার ৫০০ টাকা হাট ডাক নেন। কিন্তু ২৬ লাখ ৪ হাজার ২০০ টাকা এখনও পাবে পৌরসভা। অন্যদিকে ১৪২৯ সনে শামীম রেজা ৫৮ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ইজারা নেন, কিন্তু তার কাছে ৫৫ লাখ ১২ হাজার টাকা পাবে পৌরসভা। অন্যদিকে ১৪৩০ সনে আসিফ ইকবাল ভুট্টো ৫৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা ডাক নেন। তাদের কাছে পৌরসভা ৩৩ লাখ ৩৮ হাজার টাকা পাবে। ১৪৩১ সনে মিজানুর রহমান ৮০ লাখ ১৫ হাজার টাকায় ইজারা নেন। কিন্তু পৌরসভাকে ৯ লাখ ৫৮ হাজার ৭৫০ টাকা পাবে। অর্থাৎ বিগত চার বছরে এক কোটি ২৪ লাখ ১২ হাজার ৯৫০ টাকা রাজস্ব লোপাট করার তথ্য পাওয়া গেছে। আর এ রাজস্ব লোপাট সাথে জড়িত আওয়ামী লীগে নৌকা নিয়ে পৌরসভার সাবেক মেয়র নূর উদ্দীন আলম মামুন হিমেল, ইয়ামুল অর রশীদ টিটো, শামীম রেজা, আসিফ ইকবাল ভুট্টো, মিজানুর রহমান, আবিদুর রহমান ও চৌগাছায় বিএনপির প্রভাবশালী নেতা পাতিবিলা ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান লাল। তবে পৌর প্রশাসক এখনও পৌর অনাদায়ের টাকা আদায়ের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সব পৌর মেয়র ও কাউন্সিলরদের অপসারণ করে প্রশাসকদের নিয়োগ দেওয়া হয়। চৌগাছা পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে প্রথমে সহকারী কমিশনার গুঞ্জন বিশ্বাস এবং পরে প্রকৌশলী তাসমিন জাহান নিয়োগ পান।
নতুন পৌর প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েই তাসমিন জাহান পৌরসভার কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনার উদ্যোগ নেন। তিনি ২০২৫ সালের জন্য চৌগাছা পৌরসভার সাধারণ হাট ও পশুহাটের প্রকাশ্য টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করেন।
বিজ্ঞাপন
এরপর শুরু হয় চৌগাছার পশুহাট নিয়ে রশি টানাটানি। সাবেক মেয়র হিমেলের লোকজন আবারও হাট দখল নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে। টেন্ডার বাদেই হাট ইজারা নিতে ঝিনাইদহে আবিদুর রহমান বিএনপি নেতাদের সাথে নিয়ে বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করছে। পরে হাটের দখল নিয়ে কোর্টে মামলা চলছে। উচ্চ আদালতের পরবর্তী আদেশের ভিত্তিতে চৌগাছা পৌরসভার পশুহাটের কার্যক্রম পরিচালিত হবে এবং উচ্চ আদালতের আদেশ না আসা পর্যন্ত হাটের সব রাজস্ব আদায় কার্যক্রম পৌরসভার তত্ত্বাবধানে অর্থাৎ খাস হিসেবে আদায় হবে।
চৌগাছার ঠিকাদার আতিকুর রহমান লেন্টু বলেন, পৌরসভার সাবেক মেয়র নূর উদ্দীন আলম মামুন হিমেল, ইয়ামুল অর রশীদ টিটো, শামীম রেজা, আসিফ ইকবাল ভুট্টো, মিজানুর রহমান এবং পাতিবিলা ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান লাল বিগত চার বছরে হাটের ইজারা প্রায় দেড় কোটি টাকা লোপাট করেছে। তারা ডাকের টাকা পরিশোধ না করে হাট থেকে টাকা তুলেছে। এবং বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে টাকা পকেটস্থ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, সাবেক মেয়র হিমেলের খাস লোক আবিদুর রহমান ও বিএনপি নেতা লাল। তারা আইনের মাধ্যমে হাট দখল নেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।
এ বিষয়ে চৌগাছা পৌর প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসমিন জাহান বলেন, চৌগাছা পশুহাট নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। মামলা রায় হাতে পেলে নির্দেশ অনুযায়ী হাটের পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
প্রতিনিধি/এসএস

