সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ইলিশের মূল্য নির্ধারণে ব্যবসায়ীদের বিরূপ প্রতিক্রিয়া

জেলা প্রতিনিধি, চাঁদপুর
প্রকাশিত: ২০ জুন ২০২৫, ১১:৪৯ এএম

শেয়ার করুন:

ইলিশের মূল্য নির্ধারণে ব্যবসায়ীদের বিরূপ প্রতিক্রিয়া

চড়া দামের কারণে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে জাতীয় মাছ ইলিশ। চাঁদপুরসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সিন্ডিকেটে বছরজুড়ে ইলিশের মূল্য থাকে ঊর্ধ্বগতি। তবে প্রশাসনের ইলিশের দাম নির্ধারণের উদ্যোগ নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন পদ্মা-মেঘনায় নানা কারণে ইলিশের প্রাপ্যতা কম। এরপর দাম কমানো হলে জেলেরা ইলিশ শিকারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।

গত ১৭ জুন ইলিশের দাম নির্ধারণ নিয়ে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন স্বাক্ষরিত চিঠি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়। এরপরেই ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এমন প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করে।


বিজ্ঞাপন


thumbnail_1000154674_20250617_171038924

বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) দুপুরে দেশের অন্যতম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র চাঁদপুর মাছঘাটে গিয়ে দেখা গেছে ইলিশের সরবরাহ খুবই কম। এরমধ্যে প্রশাসনের দাম নির্ধারণের কথা শুনে মেনে নিতে পারছে না ঘাটের ব্যবসায়ীরা। ইলিশের দাম নির্ধারণ করলে সরবরাহ আরো কমে আসবে বলে মন্তব্য করেন কয়েকজন ব্যবসায়ী

ঘাটের শান্তি ফিস আড়তের স্বত্বাধিকারী সম্রাট ব্যাপারী বলেন, আমরা জানতে পেরেছি জেলা প্রশাসন ইলিশ দাম নির্ধারণ করে দিতে উদ্যোগ নিয়েছেন। এটা আমাদের কাছে অযৌক্তিক মনে হচ্ছে। দাম নির্ধারণ করে বিক্রি করা সম্ভব না। খরচ এবং সরবরাহের ওপর দাম নির্ধারণ হয়। প্রশাসন যদি দাম নির্ধারণ করে, তাহলে ঘাটে আর মাছ আসবে না। মাছের সরবরাহ বৃদ্ধি করতে হলে কারেন্ট জাল বন্ধ করতে হবে। আর কারেন্ট জাল থাকলে চার আঙুল পরিমাণ ফাঁক নির্ধারণ করে দিতে হবে। যাতে শুধু বড় মাছ ধরা পড়ে। জালের ফাঁক আকারে ছোট হলে জাটকাসহ সব দেশীয় মাছ নিধন হয়।

thumbnail_1000155726


বিজ্ঞাপন


মেসার্স আনোয়ার হোসেন জমাদার আড়তের ব্যবসায়ী মনছুর আহমেদ মাহিন বলেন, আড়তে এখন বড় ইলিশ আছে। ছোট আকারের ইলিশ কম। তবে দাম কেজিতে ২০০-৩০০ টাকা কমেছে। আজকের বাজারে ১ কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৩০০ থেকে ২৫০০ টাকা। দেড় কেজি ২৭০০ থেকে ৩ হাজার টাকা। আর ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৬০০ খেকে ১৭০০ টাকা। ইলিশ কম পেয়ে জেলেরা এমনিতেই লোকসানে মুখে। দাম নির্ধারণ করলে ইলিশ শিকারে তাদের আগ্রহ হারাবে।

ঘাটে ইলিশ কিনতে আসা ক্রেতা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে ইলিশের দাম বেশি। দাম বাড়ার প্রবণতা বেশি। কি কারণে দাম বাড়ে আমাদের জানা নেই। ইলিশ উৎপাদনে জেলে কিংবা ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ করতে হয় না। আল্লাহ প্রদত্ত প্রাকৃতিক সম্পদ। তাহলে কেনো দাম বাড়বে ইলিশের প্রশ্ন এই ক্রেতার। সিন্ডিকেট ভেঙে ইলিশের দাম নির্ধারণ করাই যৌক্তিক বলে মনে করেন এই ক্রেতা।

আরও পড়ুন

চাঁদপুরে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটে ইলিশ, মূল্য নির্ধারণ চায় প্রশাসন

চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক শবে বরাত সরকার বলেন, প্রশাসন থেকে ইলিশের যে দাম নির্ধারণ করতে চাচ্ছে, তা আমাদের কাছে অযৌক্তিক বলে মনে হচ্ছে। কারণ কাঁচামালের দাম নির্ধারণ করে বিক্রি হয় না। সরবরাহের উপর নির্ভর করে দাম বাড়বে নাকি কমবে। প্রশাসনের উচিত বিষয়টি ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়া। কারণ হঠাৎ করে দাম নির্ধারণ করলে ব্যবসায়ীরা মেনে নেবে না। আগে যেখানে ইলিশ সরবরাহ হতো ৫০০ থেকে এক হাজার মণ। এখন এক-দেড়শো মণ ইলিশ ঘাটে আসে না।

thumbnail_1000154676_20250617_171050509

সমিতির সভাপতি আব্দুল বারি জমাদার মানিক বলেন, এভাবে ইলিশের মূল্য নির্ধারণ না করে, কীভাবে ইলিশের উৎপাদন বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে সরকারের প্রদক্ষেপ নেওয়া উচিত। আমরা বিগত তিন বছর দেখে আসছি ইলিশের উৎপাদন কমছে। উৎপাদন কেন কমছে এই বিষয়ে গবেষণা বাড়ানো প্রয়োজন।

জেলা প্রশাসক বলেন, চাঁদপুরসহ দেশের ১০ থেকে ১২ জেলায় ইলিশ ধরা পড়ে এবং ক্রয়-বিক্রয় হয়। আমরা মনে করছি চাঁদপুরে অংশীজনদের নিয়ে ইলিশের দাম নির্ধারণ করে দেই, তখন এই ইলিশ অন্য জেলায় গিয়ে বিক্রি হবে। এরই ভিত্তিতে আমি মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছি। ইলিশের বাজার মূল্য যাতে করে সিন্ডিকেটের খপ্পরে না পড়ে এবং উচ্চ মূল্য না হয়।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর