নতুন রূপে সেজেছে খাগড়াছড়ির আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র। দুই মাস আগে নতুন করে আলোকসজ্জা করা হয়েছে এই পর্যটন কেন্দ্রে। এখন দিনে পাহাড়ের সৌন্দর্য আর সন্ধ্যে নামলেই বর্ণিল আলোকসজ্জায় নৈসর্গিক হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।
ভোরে মেঘের ছোটাছুটি। সকাল হলে সূর্যের রৌদ্রোজ্জ্বল হাসি। এ ধরনের মনোরম অপরুপ দৃশ্য কেবল অলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রেই দেখা সম্ভব। এখন আগের চেয়ে অনেক আকর্ষণীয় আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র।
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি এক সন্ধ্যায় গিয়ে দেখা যায়, আলুটিলা পর্যটন এলাকায় চোখ জুড়ানো আলোকসজ্জা করা হয়েছে। বৌদ্ধ বিহার আদলে গড়া দৃষ্টিনন্দন তোরণও করা হয়েছে। নামলেই দুই পাহাড় নিয়ে গড়ে ওঠা পর্যটনকেন্দ্র। ১৮৪ ফুট দীর্ঘ ঝুলন্ত সেতু দুই পাহাড়কে যুক্ত করেছে। এই সেতুতে আছে কাঁচের ব্যালকনি। পাহাড়ের বাঁ দিকে সড়ক ধরে নামলে দেখা মিলবে প্রাকৃতিক গুহার। ডান দিকের সড়ক দিয়ে নামলে দেখতে পাবেন ভিউ পয়েন্ট কুঞ্জছায়া, আড্ডা দেওয়ার স্থান নন্দনকানন। কুঞ্জছায়া আর নন্দনকাননের সাদা গোলচত্বর বসে খাগড়াছড়ি শহরের নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করতে পারে পর্যটকেরা। সবখানে রঙিন আলোয় রাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে।
খাগড়াছড়ি শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম সড়কের পাশে সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৬শ ফুট উঁচু পাহাড়ের পাদদেশে আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্রে অবস্থিত। প্রায় দুইশ একর এলাকা জুড়ে অবস্থিত এই পর্যটনকেন্দ্র।
প্রায় ৩৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের প্রাকৃতিক গুহা পর্যটনকেন্দ্রের আকর্ষণ। গুহা থেকে বেরিয়ে সেতু পার হয়ে নান্দনিক সিঁড়ি বেয়ে দর্শনার্থীরা আসবেন নন্দন কানন ও কুঞ্জছায়ায়। আলুটিলাকে নতুন রূপে দেখে পর্যটকরাও মুগ্ধ। এছাড়া চার তলাবিশিষ্ট একটি রেস্ট হাউসও নির্মাণাধীন রয়েছে।
আলুটিলা পর্যটন সূত্রে জানা যায়, জেলা প্রশাসনের অর্থায়নে সাত কোটি টাকা ব্যয়ে দুই পাহাড়ের মাঝে নির্মাণ করা হয়েছে আলুটিলা প্রবেশ মুখে তৈরি করা হয়েছে দৃষ্টি নন্দন গেইট, নয়নাভিরাম হাঁটাপথ আর পাহাড়ে ধাপ কেটে তৈরি করা সিঁড়ি, ঝুলন্ত ব্রিজ, নন্দনকানন পার্ক, কুঞ্জছায়া ভিউ পয়েন্ট ও স্বর্ণতোরণ। এছাড়া আম্ফি থিয়েটার ও খুমপুইরেস্ট হাউস নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে। এসব নান্দনিক স্থাপনা নির্মাণ হওয়ায় পর্যটকদের বাড়তি আর্কষণে পরিণত হয়েছে আলুটিলা।
স্থানীয় বাসিন্দা মল্লিকা চাকমা বলেন, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে নয়নাভিরাম নানান দৃশ্য। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বৈচিত্রময় জীবনধারা, সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য, প্রকৃতি তৈরির নজরকাড়া হাজারো চিত্র। চারপাশে বিছিয়ে রাখা শুভ্র মেঘের চাদরের নীচে রয়েছে সবুজ বনারাজিতে ঘেরা ঢেউ খেলানো অসংখ্য ছোট-বড় পাহাড় আলুটিলায়। সন্ধ্যার পর পর আলুটিলা এক ভিন্ন রুপ ধারণ করে। যা পর্যটকদের জন্য নতুন আকর্ষণ।
পর্যটনকেন্দ্রের সৌন্দর্য বাড়াতে জন্য জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাসের উদ্যোগে পর্যটন মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনে অর্থায়নে আলুটিলার উন্নয়ন চলছে।
বিজ্ঞাপন
২০২০ সালে ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে তৈরি করা হয় ভিউ পয়েন্ট কুঞ্জছায়া। এরপর তৈরি করা তোরণসহ নানা স্থাপনা। ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে তৈরি করা হয়েছে ঝুলন্ত সেতু। আর ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে অ্যাম্ফিথিয়েটারের কাজ চলছে। এছাড়া কোটি টাকা ব্যয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে চারতলার একটি গেস্টহাউসের কাজও এগিয়ে যাচ্ছে।
ঢাকা শ্যামলী থেকে বেড়াতে আসা আফিয়া, রাফিয়া, মেহরীন বলেন, খাগড়াছড়িতে ঘুরে বেড়াতে আমরা (বন্ধুরা) দুই দিনের জন্য এক পিকআপ ভাড়া করেছি। পিকআপ চালক প্রদীপ ত্রিপুরা জানালেন আলুটিলায় সন্ধ্যায় যেতে। কারণ সন্ধ্যার আলুটিলার চারপাশে আলোকসজ্জা করা হয়েছে দেখতে সুন্দর। বিকেলে রিসাং ঝরনা ঘুরে সন্ধ্যায় এসে দেখি ভিন্ন জগৎ। রঙিন আলো ঝলমলে। আমাদের মুগ্ধ করেছে। ছবি দারুণ হয়। তারা জানান, আমরা দেশের বেশ কয়েকটা পর্যটন কেন্দ্র ঘুরে দেখার সুযোগ হয়েছে। আলুটিলা এক দারুণ অভিজ্ঞতা।
টিকেট কাউন্টার সূত্রে জানা যায়, প্রতি মাসে অন্তত ৪৫ হাজার পর্যটক আলুটিলা ভ্রমণ করে। বিশেষ সময়ে তা বেড়ে যায় কয়েকগুন।
চট্টগ্রাম থেকে দলবেঁধে বেড়াতে আসা কয়েকজন কিশোর বলেন, ‘আগের তুলনায় অনেক পরির্বতন হয়েছে। পরিবেশটা পুরোপুরি পাল্টে গেছে। বিশেষ করে গেইট খুবই সুন্দর হয়েছে। ঝুলন্ত ব্রিজ সুন্দর।’
খাগড়াছড়ি হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এস অনন্ত ত্রিপুরা বলেন, মানুষের ইচ্ছা শক্তি থাকলে দায়িত্বের বাইরেও অনেক কিছু করা যায়। যার প্রমাণ খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস। তিনি রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি খাগড়াছড়ি জেলাবাসীর জীবনমান উন্নয়নের অনেক পদক্ষেপ নিয়েছেন। যা স্বার্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, খাগড়াছড়িতে যে সমস্ত পর্যটক আসেন। তারা আলুটিলায় ভালো একটা পরিবেশ পান, ভালো ঘুরে বেড়ানোর জায়গা পান। তারা আনন্দ উপভোগ করেন। এই মধ্যে যে সমস্ত কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে সেটিতেই আলুটিলায় যে রূপ দাঁড়িয়েছে পর্যটকেরা খুবই পছন্দ করেন বলে আশা করি।
প্রতিনিধি/এএ