সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

আচারের রাণী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রমী

আশিকুর রহমান মিঠু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
প্রকাশিত: ১৭ জুন ২০২৫, ০২:১৫ পিএম

শেয়ার করুন:

আচারের রাণী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রমী
উদ্যোক্তা হিসেবে ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছেন প্রমীলা রাণী দাস

নানান স্বাদের ও বৈচিত্র্যময় আচারের উদ্যোক্তা হিসেবে ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছেন প্রমীলা রাণী দাস (প্রমী)। টক, মিষ্টি ও ঝালের স্বাদের বৈচিত্র্যে তৈরি আম, তেঁতুল, বড়ই, রসুন, চালতা, আমড়াসহ নানা ফলের সুস্বাদু আচারে মজেছেন ভোক্তারা। তার ‘দিদিস স্টোর’-এ রয়েছে আমের মোরব্বা, কাশ্মিরি, মনোহরণী, আলু বোখারার চাটনি, বোম্বাই মরিচ ও আপেলের আচারও।

শুধু আচার নয়, গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খাবার যেমন নাড়ু, সন্দেশ, ক্ষীর থেকে শুরু করে হারিয়ে যাওয়া নানা রকম পিঠা-পুলিও তৈরি করেন তিনি। আধুনিক রুচির অনুসরণে পুডিংসহ মিষ্টান্ন জাতীয় ঘরোয়া খাবারগুলোও রয়েছে তার পণ্যের তালিকায়।


বিজ্ঞাপন


একেবারে শূন্য থেকে শুরু করা প্রমীলা রাণী আজ অনেক নারীর অনুপ্রেরণার প্রতীক। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের ‘বি-বাড়িয়া টাওয়ার’-এর বাসিন্দা প্রমীলা রাণী এখন ‘আচার প্রমী’ নামেই পরিচিত।

২০১৯ সালে করোনা মহামারির সময়ে পুরো পৃথিবীর মতো প্রমীলা রাণীর সংসারও বিপাকে পড়ে। তখন ছোট্ট একটি আইডিয়া—আচার তৈরির—নিয়ে স্বামী কৃষ্ণ ধন দাসের সঙ্গে পরামর্শ করে একটি ফেসবুক পেজ খোলেন এবং কয়েকটি আচারের প্রচার শুরু করেন। শুরুতে তেমন সাড়া না পেলেও হাল ছাড়েননি। তার বিশ্বাস ছিল, একবার তার তৈরি আচার চেখে দেখলে মানুষ আবার ফিরবেই।

ধৈর্য ও আত্মবিশ্বাসের ফলস্বরূপ ধীরে ধীরে তার আচার জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। এরপর বাড়তে থাকে আইটেমের সংখ্যা। তিনি তৈরি করেন আমের মোরব্বা, কাশ্মিরি, মনোহরণী, আলু বোখারার চাটনি, বোম্বাই মরিচ, আপেলের আচার ইত্যাদি। সময়ের সাথে সাথে তার হাত আরও নিপুণ হয়ে ওঠে।

ভোক্তাদের অনুরোধে তৈরি করেন নাড়ু, সন্দেশ, ক্ষীর, পিঠা-পুলির নানা ধরনের পদ। স্বাদের পাশাপাশি আন্তরিক ব্যবহার ও মানসম্পন্ন পণ্যের কারণে ক্রেতাদের আস্থা অর্জনে সফল হন।


বিজ্ঞাপন


ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চিকিৎসক ডা. মাহফিদা আক্তার হ্যাপি বলেন, ‘প্রমীলা রাণীর আচারের মান খুবই ভালো, স্বাদেও অতুলনীয়। তার ব্যবহারও অত্যন্ত আন্তরিক, যা একজন বিক্রেতার গুরুত্বপূর্ণ গুণ।’

দিদি স্টোরের নিয়মিত ক্রেতা গৃহিণী জান্নাতুল মাওয়া বলেন, ‘এমন স্বাদের আচার খুব কমই পাওয়া যায়। আমি নিজেও বাড়িতে আচার তৈরি করি, কিন্তু প্রমীলা রাণীর আচারের স্বাদ একেবারে আলাদা।’

আচারপ্রেমী সুমন মিয়া বলেন, ‘ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের আচার আর প্রমীলা রাণীর আচারের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। বোম্বাই মরিচ, আপেলের আচার, নাড়ু, সন্দেশ, পুডিং—সবই দারুণ মানসম্পন্ন ও স্বাদে অনন্য।’

প্রমীলা রাণী জানান, এই পথচলায় তার স্বামীর উৎসাহ, পরিবারের সমর্থন ও আত্মীয়দের সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তিনি বলেন, ‘করোনাকালে যখন সবকিছু বন্ধ হয়ে গেল, তখন জীবন এক ধরনের অচল হয়ে পড়েছিল। তখনই সাহস করে আচারের ব্যবসা শুরু করি। স্বামী, সন্তান, আত্মীয়স্বজন ও ক্রেতাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।’

আচার তৈরির শিক্ষা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ছোটবেলায় মা’কে দেখে আচার তৈরি শিখেছি। তখন থেকেই আগ্রহ তৈরি হয়। পরবর্তীতে নিজের বাড়ি ও শ্বশুরবাড়িতেও আচার তৈরি করতাম, সবাই প্রশংসা করত। করোনাকালে সেই পুরনো অভ্যাস কাজে লাগিয়ে আজকের অবস্থানে এসেছি।’

ss

বর্তমানে অনলাইন হোমমেড ফুড উদ্যোগই তার জীবনধারার অন্যতম শক্তি। তার আত্মবিশ্বাস ও দক্ষতা অনেক নারীর অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছে। অনেকেই তার কাছ থেকে রান্নার কৌশল শিখতে আসেন, কেউ কেউ জানেন কোন আচারে কী উপাদান কতটা ব্যবহার হয়।

প্রমীলা রাণী বিশ্বাস করেন—‘দক্ষতা, আত্মবিশ্বাস ও ধৈর্য থাকলে খুব ছোট একটি উদ্যোগ থেকেও বড় সফলতা পাওয়া সম্ভব।’

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর