বর্ষার আগমনকে ঘিরে জমে উঠতে শুরু করেছে ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী চাইয়ের হাটটি। পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার শ্রীরামকাঠী বন্দর বাজারে সপ্তাহের রোববার ও বুধবার হাট বসলেও চাইয়ের হাট বসে শনিবার ও মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে।
উপকূল হিসেবে পরিচিত বরিশাল বিভাগের সব কয়টি জেলায় পানিতে ডুবে যায় বর্ষার শুরুতে। বরিলালের পিরোজপুর জেলার সিংহভাগ এলাকা বর্ষার শুরুতেই প্লাবিত হওয়ায় গ্রামীণ মানুষের মাছ ধরার ফাঁদ হিসেবে চাইয়ের ব্যবহার করে থাকে।
বিজ্ঞাপন
![]()
বড় বড় নদী আর বিল পিরোজপুর জেলার প্রায় সবকটি উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবহমান থাকায় শত বছর আগে থেকেই কালিগঙ্গা পাড়ের শ্রীরামকাঠী বাজারে চাইয়ের হাট বসে আসছে।
প্রতি রোববার ও বুধবার পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলা সদর থেকে ৫ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণ দিকে কালীগঙ্গা নদীর তীরে শ্রীরামকাঠী বন্দর বাজারে চাইয়ের পসরা সাজিয়ে হাট বসছে এখনও।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এ চাই হাটে সড়ক ও নদীপথে বিক্রির জন্য অর্ধশতাধিক ব্যক্তি চাই নিয়ে হাটে এসেছে তাদের মধ্যে স্থানীয় কৃষক বেশি। নাজিরপুর উপজেলা ছাড়াও বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলা, বানরী পাড়াসহ জেলার অন্য উপজেলা থেকে বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন এই হাটে। দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতারাও ছুটে আসছেন এই হাটে।
বিজ্ঞাপন
![]()
বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক দড়ি, নারকেলের তৈরি এক ধরনের দড়ি (কাতা), বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয় চাই। কুড়ি (বিশটি এক কুড়ি) হিসেবে, পিস হিসেবে বিক্রি করা হয় চাই। ৬ হাজার থেকে শুরু করে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত কুড়ি বিক্রি হচ্ছে এ বাজারে।
বেশ কয়েকজন চাইয়ের কারিগর ও ব্রিক্রতার সঙ্গে কথা হলে জানান, বর্ষা এলেই এ অঞ্চলে চাইয়ের চাহিদা বেড়ে যায়। সারাবছর অন্য কাজ করলেও এসময় তারা শুধু চাই তৈরি করেন। বছরের তিন থেকে চার মাস তাদের এ ব্যস্ততা থাকে। এখন দিন-রাত চাই তৈরিতেই সময় কাটছে তাদের। তাদের সঙ্গে এ কাজে সাহায্য করে থাকে গৃহিণীরা।
এ হাটের চাই পাইকারি কিনে দেশের বিভিন্ন জায়গা বিক্রি করে থাকেন পাইকাররা।
![]()
চাই বিক্রি করতে আসা সুখরঞ্জন মৃধা বলেন, এ বছর প্রথম হাটে এসেছি। ৪ হাজার টাকা কুড়ি বিক্রি হচ্ছে। কুড়ি চাই তৈরিতে হাজার খানেক টাকা খরচ হয়। এখনও কেহ দাম বলে নাই।
সুশীল নামের এক চাই বিক্রেতা জানান, ৩ হাজার টাকা ধরে ১২ পিস বিক্রি করেছি। গত বছরের তুলনায় এ বছর দাম কম।
এক কুড়ি চাই কিনতে আসছেন সুমন শেখ দাম বেশি হওয়া এখনও কিনতে পারেনি তিনি। ৭-৮ বছরে হবে চাই দিয়ে মাছ ধরে বিক্রি করেন বর্ষার সময়ে। আমার বাজেট ২৫ শত টাকা কিন্তু আমি ৩ হাজার থেকে ৩২শত টাকা দাম বলেছি তাতেও কিনতে পারছি না।
![]()
পাইকারি ক্রেতা মিজান ফকির বলেন, গত বছরের তুলনায় কুড়িতে ৪০০-৫০০ টাকা বেশি। এক পিসের দাম ১০০ থেকে ১২৫ টাকা পড়ে। চাইগুলো এ বাজার থেকে কিনে খুচরা বিক্রি করবো কাউখালি, ভান্ডারিয়া, আউমগা, বদ্দিখালী, বরগুনা। ১০০ টাকা পিস ধরে ৪০০ শত পিস কিনেছি। দীর্ঘ বিশ বছর বর্ষার সময়ে এ পেশায় থাকেন তিনি।
সৈয়দ শেখ নামের এক পাইকার জানান, চাইয়ের দাম একটু বেশি সঙ্গে খাজনাও বেশি নেন হাটে। যে চাই কিনছি এটা বিক্রি করব কাউখালি।
শ্রীরামকাঠী বন্দর কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাজেদুল কবির রাসেল জানান, একশ বছরের পুরাতন এই হাটে দূর-দুরান্ত থেকে মানুষ চাই নিয়ে আসে। পিরোজপুর জেলার সব চেয়ে বৃহত্তর চাইয়ের হাট বসে এ বাজারে। এই হাটে চাই বিক্রি করতে ও ক্রয় করতে আসা সকলকে আমরা নিরাপত্তা দিয়ে থাকি। চাই একটি কুঠির শিল্প এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে তাদের সাহায্য করতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাই।
প্রতিনিধি/এসএস

