শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

শিক্ষক ছায়েদ উল্লাহর ৬ সন্তানই ঢাবির শিক্ষার্থী

জেলা প্রতিনিধি, লক্ষ্মীপুর 
প্রকাশিত: ১৫ জুন ২০২৫, ০৯:১২ পিএম

শেয়ার করুন:

শিক্ষক ছায়েদ উল্লাহর ৬ সন্তানই ঢাবির শিক্ষার্থী

লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের স্কুলশিক্ষক ছায়েদ উল্লাহর ছোট ছেলে আরফাত হোসেন এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ভর্তি হয়েছেন। এর ফলে এই শিক্ষক বাবার ছয় সন্তানই দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। একই পরিবারের ছয়জন সদস্যের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করার ঘটনা দেশে খুবই বিরল। সন্তানদের এ অসামান্য সাফল্যে প্রশংসিত হচ্ছেন ছায়েদ উল্লাহ।

সন্তানদের উচ্চশিক্ষার খরচ চালাতে গিয়ে ছায়েদ উল্লাহকে পারিবারিক সম্পত্তি বিক্রি করতে হয়েছে। তবে এ নিয়ে কোনো অনুশোচনা নেই তাঁর কিংবা তাঁর স্ত্রী শামীমা বেগমের। ছায়েদ উল্লাহ নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার দক্ষিণ ওয়াপদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। সেখান থেকেই তিনি অবসর গ্রহণ করেন।


বিজ্ঞাপন


শিক্ষক ছায়েদ উল্লাহ বলেন, ‘আরফাত আমার ছোট ছেলে। সে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে ‘এ’ ইউনিটের মাধ্যমে ঢাবিতে ভর্তি হয়েছে। আমার একমাত্র মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগে অধ্যয়নরত। একে একে আমার ছয় সন্তানই ঢাবিতে পড়ার সুযোগ পেয়েছে।’

এর আগে ২০২২ সালের ২৯ জুন, ‘শিক্ষক বাবার ৫ সন্তান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী’ শিরোনামে একটি সংবাদ ভিডিওসহ ঢাকা পোস্টে প্রকাশিত হয়েছিল।

ছায়েদ উল্লাহর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শিক্ষকতার সৎ উপার্জনেই তিনি সন্তানদের শিক্ষিত করেছেন। তাঁর বড় ছেলে শামসুল আলম দিপু ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষে ঢাবির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন এবং সাফল্যের সঙ্গে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। পরে তিনি ৩৫তম বিসিএসের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগ দেন এবং বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে (BFIU) পরিচালক হিসেবে কর্মরত।

দ্বিতীয় ছেলে শাজাহান সিরাজ আল মামুন ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে ঢাবির লোক প্রশাসন বিভাগে ভর্তি হন। ২০১৬ সালে তিনি প্রথম শ্রেণিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি কর্মসংস্থান ব্যাংকের হাজীগঞ্জ শাখায় সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মরত।


বিজ্ঞাপন


তৃতীয় ছেলে আশরাফুল ইসলাম শহীদ ঢাবির ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করেন। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক শাখায় সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মরত।

চতুর্থ ছেলে শরীফুল ইসলাম বিজয় ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ঢাবির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাস করেন। বর্তমানে তিনি বিসিএসের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

ছায়েদ উল্লাহ বলেন, ‘৩০ বছর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছি। সন্তানদের সুশিক্ষিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সর্বদা সচেষ্ট ছিলাম। আল্লাহর অশেষ রহমতে তারা দেশের সেরা বিদ্যাপীঠে পড়ার সুযোগ পেয়েছে—এটি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।’

স্থানীয় উদয়ন আদর্শ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আমিন বলেন, ‘শিক্ষক ছায়েদ উল্লাহর সন্তানরা একটি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাদের এই অর্জনে শুধু পরিবার নয়, পুরো কমলনগরবাসী গর্বিত। তাদের কৃতিত্ব সমাজে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে।’

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর