সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

জামালপুরে ঢাকঢোল পিটিয়ে সমাজচ্যুতি: সাত পরিবার একঘরে, চরম বিপর্যয়

জেলা প্রতিনিধি, জামালপুর
প্রকাশিত: ১৫ জুন ২০২৫, ০২:২০ পিএম

শেয়ার করুন:

Village Crime

ঢাকঢোল পিটিয়ে, মাইকে ঘোষণা দিয়ে জামালপুর শহরের দাপুনিয়া পশ্চিমপাড়ায় সাতটি পরিবারকে সমাজচ্যুত ঘোষণা করা হয়েছে। এই বর্বরোচিত ও অবৈধ সিদ্ধান্তের ফলে পরিবারগুলো পড়েছে চরম আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতায়। শিশুদের কান্না, বাচ্চাদের স্কুল বন্ধ, বিয়ে স্থগিতসহ স্বাভাবিক জীবনযাত্রা হয়েছে বিপর্যস্ত।

শুক্রবার (১৩ জুন) রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঘটনাটি ঘটে। পরদিন শনিবার (১৪ জুন) ভুক্তভোগীরা জামালপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দেন।


বিজ্ঞাপন


স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মুনসুর মিয়ার পরিবারের সঙ্গে একই এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির দীর্ঘদিনের পারিবারিক বিরোধ ছিল। শুক্রবার জুমার নামাজের পর মুনসুর মিয়ার সঙ্গে প্রতিবেশী মন্টু মিয়ার মারামারির ঘটনা ঘটে। এর জেরে স্থানীয় মাতব্বররা এক সালিশে বসে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। মুনসুর টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তার এবং আরও ছয় আত্মীয় পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে 'একঘরে' করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

village

পরদিন এলাকার বিভিন্ন স্থানে ঢাকঢোল পিটিয়ে এবং মাইকে ঘোষণা দিয়ে বলা হয়, 'আজ হতে মরহুম আজিজুল হক, ইসমাইল হোসেন মৌলভি, মনসুর মিয়া, মানিক, জানিক, মজিবর ও নান্নুর পরিবার সমাজচ্যুত। তাদের সঙ্গে কেউ মেলামেশা, লেনদেন কিংবা উঠাবসা করতে পারবে না। কেউ নিয়ম ভাঙলে তাকেও একঘরে ঘোষণা করা হবে।

এই ঘোষণার পর সাতটি পরিবার তাদের বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না। শিশুরা স্কুলে যেতে পারছে না, বাজারে কেউ তাদের কিছু বিক্রি করছে না, এমনকি নির্ধারিত একটি বিয়েও স্থগিত করা হয়েছে।


বিজ্ঞাপন


ভুক্তভোগী ইসমাইল হোসেন মৌলভি বলেন, আমরা কোনো অপরাধ করিনি। শুধু পারিবারিক একটি বিষয়ে মতবিরোধ ছিল। অথচ আমাদের সাতটি পরিবারকে সমাজচ্যুত করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

ভারত সীমান্তে বাংলাদেশিদের গরু আটকে রেখেছে বিএসএফ

আজিজুল হকের ছেলে ফারুক হোসেন জানান, আমরা মসজিদে পর্যন্ত যেতে পারছি না। দোকান থেকে কিছু কিনতে পারছি না। এমন পরিস্থিতিতে আমরা কি করব?

একই অবস্থা হুসনা বেগমের পরিবারেরও। তিনি বলেন, ছোট ছোট বাচ্চারা কান্নাকাটি করছে। বাজারে যেতে পারি না, ওদের কিছু কিনে দিতে পারি না। আমাদের দোষ কী?

ঘটনার সঙ্গে জড়িত মাইকিং করা নাজমুল হাসান স্বীকার করেন, প্রথমে আমি মাইকিং করতে রাজি হইনি। কিন্তু গণ্যমান্যদের চাপে বাধ্য হই। এটা ভুল হয়েছে।

village--

অভিযুক্ত মাতব্বর শামীম আহমেদ দাবি করেন, এলাকার প্রায় ৫০০ লোকের উপস্থিতিতে এই সিদ্ধান্ত হয়। আমাদের এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না। তবে আজ রাতেই আবার একটি সালিশ হবে বিষয়টি মীমাংসার জন্য।

এদিকে এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন জামালপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান। তিনি বলেন, এটি সম্পূর্ণ মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বর্বরোচিত কাজ। প্রশাসনের উচিত দ্রুত হস্তক্ষেপ করা।

জামালপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ইয়াহিয়া আল মামুন বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়েছি এবং তদন্ত করছি। যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর