সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

সুদিন ফেরেনি রাজারহাটের চামড়া বাজারে

জেলা প্রতিনিধি, যশোর 
প্রকাশিত: ১৪ জুন ২০২৫, ০৬:১৩ পিএম

শেয়ার করুন:

সুদিন ফেরেনি রাজারহাটের চামড়া বাজারে

সুদিন ফেরেনি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ চামড়ার মোকাম রাজারহাটে। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট, ঢাকার আড়তদার ও ট্যানারি সংশ্লিষ্টদের হাটে না আসা এবং নগদ টাকার সংকটে বাজারে চামড়ার দাম নেই বললেই চলে। ফলে ক্ষুদ্র ও মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীদের লোকসানেই চামড়া বিক্রি করে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।

শনিবার (১৪ জুন) কোরবানির ঈদ-পরবর্তী সর্ববৃহৎ হাটে এ চিত্র দেখা গেছে। এদিন প্রায় ২০ হাজার গরুর চামড়া আমদানি হলেও ক্রেতার সংকটে হাটে মন্দাভাব বিরাজ করে।


বিজ্ঞাপন


ক্ষুদ্র ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা জানান, সরকারের নির্ধারিত দামে চামড়া কিনলেও বাজারে সেই দামে বিক্রি সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে পাইকারি ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা বলছেন, ‘সরকার দাম নির্ধারণ করলেও সরকার তো চামড়া কেনে না। ট্যানারি মালিকরা যেভাবে দাম নির্ধারণ করে, সেই দামেই বেচাকেনা করতে হয়।’

রাজারহাট ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোরবানির ঈদ হয়েছিল গত ৭ জুন (শনিবার)। সেই হিসেবে ১০ জুন (মঙ্গলবার) ছিল ঈদ-পরবর্তী প্রথম হাট। ওইদিন কিছু বেচাকেনা হলেও সবাই মূলত অপেক্ষা করছিলেন শনিবারের বড় হাটের জন্য। এ কারণে শনিবারের হাটে প্রায় ২০ হাজার গরুর চামড়া এবং কয়েক হাজার ছাগলের চামড়া আমদানি হয়েছিল। সব মিলিয়ে প্রায় দেড় কোটি টাকার চামড়া বেচাকেনা হয়েছে বলে জানা যায়।

শনিবার রাজারহাট হাট ঘুরে দেখা গেছে, ক্ষুদ্র ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা স্থানীয় পরিবহনে করে চামড়া এনে স্তুপ করে রেখেছেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার চামড়া নিয়ে বিক্রেতারা হাটে আসতে থাকেন। তবে চামড়ার আমদানি ও বিক্রেতার তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা ছিল কম। ফলে প্রতিযোগিতা না থাকায় চামড়ার দাম বাড়েনি।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক কম দামে চামড়া বিক্রি করতে হচ্ছে। ট্যানারি মালিক ও আড়তদারদের গড়ে তোলা সিন্ডিকেটই চামড়ার দাম নিয়ন্ত্রণ করছে। এই সিন্ডিকেটের কারণেই তারা মূলধন হারিয়ে লোকসানে পড়ছেন।


বিজ্ঞাপন


এদিকে স্থানীয় আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার ঢাকার বড় ব্যবসায়ী ও ট্যানারি মালিকদের প্রতিনিধি রাজারহাটে আসেননি। ফলে ক্রেতার সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। এছাড়া ঈদের পর টানা দশদিন ব্যাংক বন্ধ থাকায় বাজারে নগদ টাকার সংকট দেখা দিয়েছে। ঢাকার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পাওনা টাকাও না পাওয়ায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা পুঁজির সংকটে রয়েছেন। এর প্রভাব বাজারে পড়েছে।

যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি এলাকা থেকে ৩০০টি গরুর চামড়া নিয়ে এসেছিলেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী পুলিন দাশ। তিনি জানান, সাড়ে ৭০০ টাকা দরে ১৫০টি চামড়া বিক্রি করেছেন, যার প্রতিটির সংগ্রহমূল্য খরচসহ এক হাজার টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ফলে প্রতি চামড়ায় ২৫০ টাকা করে লোকসান গুনতে হয়েছে। বাকি ১৫০টির দাম কেউ ৪০০-৫০০ টাকার বেশি বলছে না। তিনি আরও জানান, ৩০০টি ছাগলের চামড়াও এনেছিলেন, যা ৫০-৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

নড়াইলের লোহাগড়া থেকে আসা শুভ বিশ্বাস জানান, তিনি ভালো মানের ১০২টি চামড়া এনেছেন। পাইকাররা প্রতিটি চামড়ার দাম বলছে এক হাজার টাকা করে, অথচ লবণ, শ্রমিক ও পরিবহন খরচসহ তার প্রতি চামড়ার খরচই এক হাজার টাকা হয়েছে। তিনি আশাবাদী, কিছুটা দাম বাড়লে অন্তত পরিবহন খরচটা উঠে আসবে।

অন্যদিকে লোহাগড়া থেকেই আসা পাইকারি ব্যবসায়ী আব্দুল হান্নান জানান, তিনি রাজারহাট থেকে ৪০০ থেকে ১ হাজার ৭৫ টাকা দরে প্রায় ১ হাজারটি চামড়া কিনেছেন এবং আরও কিনবেন।

রাজারহাটের ব্যবসায়ী খুরশীদ আলম বাবু বলেন, ‘সরকার দাম নির্ধারণ করলেও সরকার চামড়া কেনে না। ট্যানারি মালিকদের সঙ্গে সমন্বয় করে দাম নির্ধারণ করা হয়নি বলেই মনে হচ্ছে। তারা যেভাবে দাম দিচ্ছে, হাটেও সেই দামে বিক্রি হচ্ছে।’

chamra

বৃহত্তর যশোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি সাঈদ আহমেদ নাসির শেফার্ড জানান, মঙ্গলবার প্রথম হাটে প্রায় ৬ হাজার গরুর চামড়া এসেছিল। আর শনিবার প্রায় ২০ হাজার গরুর চামড়া ও কিছু ছাগলের চামড়া আমদানি হয়। তবে দাম বাড়েনি। অধিকাংশ চামড়া ৫০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় দেড় কোটি টাকার বেচাকেনা হলেও ছোট ব্যবসায়ীরা লোকসানে পড়েছেন। সরকারের নির্ধারিত দামের সঙ্গে বাজারের বাস্তবতার মিল না থাকায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর