টানা ১০ দিনের ঈদুল আজহার ছুটি শেষে রাজধানীমুখী মানুষের স্রোতে চাপ বেড়েছে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে। ছুটির শেষ দিন শনিবার (১৪ জুন) কয়েকগুণ বেড়েছে যানবাহনের সংখ্যা। এর ফলে সড়কে তৈরি হয়েছে তীব্র যানজট, আর পরিবহনগুলোর নিয়ন্ত্রণহীন গতির কারণে বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি।
শুক্রবার দিবাগত রাতে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে একটি যাত্রীবাহী বাস ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুইজন নিহত এবং অন্তত ১০ জন আহত হন। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, প্রতিমাসেই এক্সপ্রেসওয়েতে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটছে, যার প্রধান কারণ অতিরিক্ত গতি ও যাত্রীবাহী যানবাহনের অবাধ চলাচল।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ ঈদ শেষে ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছেন গত কয়েকদিন ধরে। বাড়তি যাত্রীর চাপ সামলাতে বাসগুলো ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন করছে। লোকাল বাসগুলো দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থাতেও যাত্রী তুলছে।
পরিবহন মালিকরা চাহিদা ও সুযোগ বুঝে ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন। দ্রুত যাত্রী পরিবহনের জন্য বাসগুলো ঢাকা থেকে ফেরার পর আবার অতিরিক্ত গতিতে দক্ষিণাঞ্চলে ছুটছে। এই অস্বাভাবিক গতি নিয়ন্ত্রণহীন পরিস্থিতির জন্ম দিচ্ছে।
বাসচালক ও সংশ্লিষ্টরা জানান, ঈদের মৌসুমে যাত্রী বাড়ার কারণে ট্রিপের সংখ্যাও বাড়ে। ফলে সময় বাঁচাতে গতি বাড়ানো ছাড়া উপায় থাকে না।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা
বিজ্ঞাপন
শিবচর হাইওয়ে থানার তথ্য অনুযায়ী, দেশের মহাসড়কগুলোতে সর্বোচ্চ গতিসীমা ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার নির্ধারিত। তবে বাস্তবে তা মানছেন না চালকরা। গত তিন দিনে শিবচর অংশে ৪৫টি যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
বিশেষ করে বাস, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসের চালকেরা বেশি গতিতে গাড়ি চালাচ্ছেন।
পদ্মা সেতুতে নেই স্পিডগান
যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, পদ্মা সেতুর ওপরও বাসগুলো নিয়ন্ত্রিত গতিতে চলে না। সেখানে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। সেতুর ওপর স্পিডগান না থাকায় চালকেরা নিয়ন্ত্রণহীন গতিতে গাড়ি চালাচ্ছেন।
ভুক্তভোগীদের অভিজ্ঞতা
ঢাকাগামী যাত্রী মো. কাওসার বলেন, ‘শনিবার যাত্রীদের চাপ অনেক বেশি। গাড়িতে জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। দাঁড়িয়ে থেকেও ঢাকা যেতে হচ্ছে।’
আরেক যাত্রী মো. মোতালেব মিয়া জানান, ‘হাইওয়েতে গাড়িগুলো এত দ্রুত চলে যে ভয় লাগে। ড্রাইভারকে আস্তে চালাতে বললেও কেউ কথা শোনে না।’
প্রাইভেটকার চালক মো. মিতুল বলেন, ‘আমরা ৮০ কিলোমিটার গতিতে চলার চেষ্টা করি, কিন্তু অন্য গাড়িগুলোর গতি অনেক বেশি। তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে আমাদেরও গতি বাড়াতে হয়।’
শিবচর হাইওয়ে থানার সার্জেন্ট আশিকুর রহমান জানান, ‘সুযোগ পেলেই প্রাইভেটকার, বাস ও মোটরসাইকেল অতিরিক্ত গতিতে চলাচল করে। গত তিন দিনে শুধু অতিরিক্ত গতির কারণে ৪৫টি যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা হাইওয়েতে স্পিডগানের মাধ্যমে যানবাহনের গতি নির্ণয় করি। তবে পদ্মা সেতুর ওপর স্পিডগান নেই, ফলে চালকেরা সেখানে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাচ্ছেন।’
ছুটির পর রাজধানীমুখী জনস্রোত সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে পরিবহন ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা। দ্রুত নিয়ন্ত্রণ না আনলে দুর্ঘটনা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
প্রতিনিধি/একেবি

