সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

নাটোরে ২০ টাকায় কেনা ছাগলের চামড়া ঢাকায় বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকায়

জেলা প্রতিনিধি, নাটোর 
প্রকাশিত: ১২ জুন ২০২৫, ১০:৫৩ এএম

শেয়ার করুন:

নাটোরে ২০ টাকায় কেনা ছাগলের চামড়া ঢাকায় বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকায়

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চামড়ার আড়ত নাটোরে সরকার নির্ধারিত দামে গরু ও ছাগলের চামড়া বিক্রি করতে পারেননি মৌসুমি ব্যবসায়ী ও বিক্রেতারা। সরকার প্রতি বর্গফুট ছাগলের চামড়ার দাম ২০-২৭ টাকা নির্ধারণ করলেও নাটোরে পুরো একটি ছাগলের চামড়া মাত্র ২০ টাকায় কিনেছেন স্থানীয় আড়তদাররা। অন্যদিকে, গরুর চামড়া আকারভেদে ৫০০ থেকে ১,০০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

তবে মাত্র চারদিনের ব্যবধানে নাটোরের আড়তদাররা এই ২০ টাকায় কেনা চামড়া ঢাকার ট্যানারি ব্যবসায়ীদের কাছে ৮০-৯০ টাকায় বিক্রি করেছেন।


বিজ্ঞাপন


এই খবর জানার পর মঙ্গলবার দুপুরে নাটোরের চামড়ার আড়ত পরিদর্শনে যান বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন।

মৌসুমি ব্যবসায়ী ও বিক্রেতারা অভিযোগ করছেন, সরকার নির্ধারিত দামের তুলনায় অনেক কম দামে আড়তে চামড়া বিক্রি করতে হয়েছে। চামড়ার গুণগত মান খারাপ, আকার ছোট বা রোগাক্রান্ত—এইসব অজুহাতে আড়তদাররা কম দামে চামড়া কিনেছেন। ফলে শেষ পর্যন্ত ক্ষতির আশঙ্কায় বাধ্য হয়ে অর্ধেক দামে চামড়া বিক্রি করতে হয়েছে।

অন্যদিকে, চামড়া ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, দক্ষ কসাইয়ের অভাবে অনেক চামড়া কেটে নষ্ট হয়েছে। আবার অনেকে নির্ধারিত সময়ের পরে চামড়া আড়তে এনেছেন, ফলে অনেক চামড়া পচে গেছে। সবকিছু বিবেচনায় একেক ধরনের কাঁচা চামড়া একই দামে কিনতে হয়েছে, যা সরকারের নির্ধারিত দামে বিক্রি সম্ভব নয়।

তাদের দাবি, ২০ টাকায় একটি ছাগলের চামড়া কেনা হলেও লবণ, শ্রমিক ও পরিবহন খরচ বাদ দিয়ে তারা চামড়া প্রতি ১০-১৫ টাকা লাভে ঢাকার ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেছেন।


বিজ্ঞাপন


বুধবার (১১ জুন) সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, আড়তগুলোতে লবণ দিয়ে চামড়া সংরক্ষণের কাজ চলছে। লবণযুক্ত চামড়া এক গোডাউন থেকে অন্য গোডাউনে ভ্যানে করে নেওয়া হচ্ছে। শ্রমিকরা ব্যস্তভাবে চামড়ায় লবণ ছিটাচ্ছেন। কিছু আড়তে ছাগলের চামড়া কেনাবেচা হলেও গরুর চামড়ার কেনাবেচা এখনো পুরোদমে শুরু হয়নি।

নাটোর চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপ সূত্রে জানা গেছে, ঈদের দিন ও পরদিন নাটোর আড়তে প্রায় ২৫ হাজার গরু এবং ৬০ হাজার ছাগলের চামড়া কেনাবেচা হয়েছে। বুধবার সকাল পর্যন্ত মোট ১ লাখ ৩০ হাজার চামড়া এসেছে। আগামী বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার আশপাশের ২৫-৩০ জেলা থেকে লবণযুক্ত চামড়া আসবে নাটোর আড়তে।

এ বছর মোট ১০-১১ লাখ চামড়া কেনাবেচার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে গরুর চামড়া ৩ লাখ পিস, ছাগলের চামড়া ৭ লাখ পিস, মহিষের চামড়া ১০ হাজার পিস এবং ভেড়ার চামড়া ২০-৩০ হাজার পিস।

মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী সুমন জানান, তিনি গ্রাম থেকে ঘুরে ঘুরে ৩০-৪০ টাকা দামে চামড়া কিনেছেন। কিন্তু আড়তে এসে প্রতিটি চামড়া ২০-৩০ টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে। সরকারের নির্ধারিত দামে আড়তদাররা চামড়া কিনছেন না বলে অভিযোগ করেন তিনি।

স্থানীয় আড়ত ব্যবসায়ী রকিব উদ্দিন কমল বলেন, এ বছর কোরবানির সংখ্যা কম ছিল। সেই সঙ্গে লাম্পি স্কিন রোগে অনেক চামড়ার গুণগত মান খারাপ হয়েছে, যা কেউ কিনতে চায় না।

আড়ত ব্যবসায়ী নান্নু বলেন, হঠাৎ করে প্রতি বস্তা লবণের দাম ২৫০-৩০০ টাকায় পৌঁছেছে। একটি বড় গরুর চামড়ায় ১০-১৩ কেজি লবণ লাগে, ফলে একেকটি চামড়ায় অতিরিক্ত ১০০ টাকার লবণ খরচ হচ্ছে। এর সঙ্গে শ্রমিক ও পরিবহন খরচ যুক্ত হওয়ায় খরচ অনেক বেড়েছে।

চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক হালিম সিকদার ‘ঢাকা মেইল’কে বলেন, ঈদের দিন ছাগলের চামড়া আকারভেদে ২০-৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সংরক্ষণের জন্য প্রতি ছাগলের চামড়ায় ২ কেজি লবণ লাগে। গরুর চামড়ায় ১০-১৩ কেজি পর্যন্ত লবণ লাগে। এর সঙ্গে শ্রমিক ও পরিবহন খরচ যুক্ত হয়ে প্রতি ছাগলের চামড়ায় ৬০-৭০ টাকা খরচ হয়। ব্যবসায়ীরা সেই লবণযুক্ত চামড়া ঢাকায় ১০-১৫ টাকা লাভে বিক্রি করছেন।

তিনি আরও জানান, আগামী বৃহস্পতিবার থেকে বিভিন্ন জেলা থেকে নাটোর আড়তে চামড়া আসতে শুরু করবে। ঢাকার ট্যানারি ব্যবসায়ীরাও নাটোরে এসে চামড়া কিনবেন।

g

নাটোরের পুলিশ সুপার আমজাদ হোসাইন ‘ঢাকা মেইল’কে বলেন, গণমাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরেছি, তবে সরাসরি কোনো অভিযোগ পাইনি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে কাজ করছে এবং গোয়েন্দা পুলিশও বিষয়টি তদন্ত করছে।

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর