ঈদের ছুটিকে কেন্দ্র করে একঘেয়েমি কাটিয়ে প্রাণের উচ্ছ্বাসে দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে ব্যতিক্রমী এক মিলনমেলার আয়োজন করেন নীলফামারীর ডোমার ও ডিমলা উপজেলার তরুণরা। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী ও পেশাজীবী তরুণদের উদ্যোগে আয়োজিত এই আয়োজনের নাম—‘কলাপাতায় পিকনিক’।
মঙ্গলবার (১০ জুন) দিনব্যাপী ডিমলা ফরেস্টের সবুজ-শ্যামল প্রাকৃতিক পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় এই পিকনিক। কোনো ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই, সম্পূর্ণ নিজেদের অর্থায়নে এবং আন্তরিক অংশগ্রহণে এটি পরিণত হয় এক প্রাণবন্ত সামাজিক উৎসবে।
বিজ্ঞাপন
সকালের নাশতা দিয়ে শুরু হয় দিনের আয়োজন। এরপর একে একে অনুষ্ঠিত হয় ফুটবল, ক্রিকেট ও কাবাডি খেলা, পুকুরে সাঁতার, গান, কৌতুকসহ নানা বিনোদনমূলক কার্যক্রম। দুপুরে পরিবেশিত হয় ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবার—কলাপাতায় সাদা ভাত, সবজি, মাংস ও মিষ্টান্ন।
দুপুরের পর চলে পরিচিতিমূলক পর্ব। অংশগ্রহণকারীরা নিজেদের পরিচয় তুলে ধরেন, জীবনের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করেন এবং স্মৃতিচারণায় মেতে ওঠেন। বিকেলের শেষ প্রান্তে ছবি তোলা, প্রকৃতির মাঝে হাঁটাহাঁটি এবং কোল্ড ড্রিংকসের আড্ডায় জমে ওঠে পিকনিকের শেষ অংশ।
ঢাকা কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী নিয়াজ মোর্শেদ তুহাদ বলেন, “ঈদের আনন্দ ভাগাভাগির পাশাপাশি আমরা এই আয়োজনের মাধ্যমে বাঙালির হারিয়ে যেতে বসা ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছি। কলাপাতায় খাবার পরিবেশন, খেলাধুলা, আড্ডা—সব মিলিয়ে দিনটি ছিল অসাধারণ।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল বাতেন নয়ন বলেন, “এই আয়োজনের জন্য আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। রাজনীতি বা মতাদর্শ যাই থাকুক না কেন, এখানে সবাই একসঙ্গে দিন কাটিয়েছে। কলাপাতায় খাবার খাওয়ার সেই ফেলে আসা গ্রামের দিনের কথা মনে পড়ে গেল। চাই, এমন আয়োজন প্রতিবছর হোক।”
বিজ্ঞাপন
ডোমার পাইলট হাইস্কুলের শিক্ষক ওমর আলী বলেন, “প্রতিদিনের ক্লান্তিকর জীবন থেকে একটু বাইরে এসে প্রকৃতির মাঝে এমন আনন্দে মেতে ওঠা সত্যিই প্রয়োজন। এটা শুধু বিনোদন নয়, এটি সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করার একটি মাধ্যম।”
আয়োজক দলের অন্যতম সদস্য ইছা আলী বলেন, “আমাদের সমাজে যখন বিভক্তির রেখা স্পষ্ট, তখন এমন উদ্যোগ আমাদের ঐতিহ্য ও ভ্রাতৃত্ববোধকে নতুন করে জাগিয়ে তোলে। এই মিলনমেলা শুধু একটি পিকনিক নয়, এটি এক ধরনের সামাজিক আন্দোলন—বন্ধন গড়ার আহ্বান।”
প্রতিনিধি/একেবি