বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন, ২০২৫, ঢাকা

ঈদেও অটল সীমান্ত প্রহরা, বিজিবির অঙ্গীকার দেশপ্রেমে

জেলা প্রতিনিধি, হবিগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৯ জুন ২০২৫, ১০:১১ পিএম

শেয়ার করুন:

ঈদেও অটল সীমান্ত প্রহরা, বিজিবির অঙ্গীকার দেশপ্রেমে

যখন ঈদের খুশি ঘরে ঘরে, তখন দেশের সীমান্তে বিজিবি সদস্যদের দিন কাটে দায়িত্ব, সতর্কতা ও ত্যাগের মহিমায়। হবিগঞ্জ ব্যাটালিয়ন (৫৫ বিজিবি)-এর অধীন ১০৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত ১৬টি বিওপির প্রতিটিতে ঈদের দিনেও ছিল টানা নজরদারি ও অপারেশনাল কার্যক্রম। ঈদের তৃতীয় দিনেও সীমান্ত এলাকায় টহল অব্যাহত রয়েছে। বিজিবির এই কঠোর নজরদারিতে সীমান্ত অঞ্চল রয়েছে সম্পূর্ণ সুরক্ষিত।

চুনারুঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী বাল্লা বিওপিতে ঈদের দিন সকাল থেকেই ছিল বিশেষ নজরদারি। দায়িত্বে থাকা বিওপি কমান্ডার নায়েব সুবেদার মো. তোফাজ্জল হোসেন জানান, ‘ঈদের নামাজ আমাদের দুই ভাগে পড়তে হয়, যাতে দায়িত্বে ব্যাঘাত না ঘটে। আমাদের সবার পক্ষে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করা সম্ভব হয় না, তবে আমরা বিশ্বাস করি—‘সবার আগে দেশ, তারপর পরিবার’।’


বিজ্ঞাপন


চাকরিজীবনের ৩০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘চাকরিজীবনে অন্তত ২০টি ঈদ আমি পরিবার থেকে দূরে কাটিয়েছি। কিন্তু এতে আমার কোনো দুঃখ নেই, বরং গর্ব অনুভব করি। সহকর্মীদের সঙ্গে যে বন্ধন গড়ে উঠেছে, সেটাই হয়ে উঠেছে আমার নতুন পরিবার। এই আত্মিক শক্তিই আমাদের এগিয়ে নেয় দেশমাতৃকার সেবায়।’

মনতলা বিওপির কমান্ডার নায়েব সুবেদার জাফরুল্লাহ একই অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, ‘দেশের প্রতিটি মানুষই আমাদের আপনজন। সীমান্ত সুরক্ষা নিশ্চিত করে তাদের নিরাপত্তা দেওয়া—এটাই আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় ঈদের উপহার।’

ঈদের সময় ৫৫ বিজিবির পক্ষ থেকে সীমান্ত এলাকায় নেওয়া হয় বিশেষ নজরদারি ও অতিরিক্ত টহল ব্যবস্থা। সীমান্তবর্তী জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিজিবি সদা প্রস্তুত।

সরাইল রিজিয়নের শ্রীমঙ্গল সেক্টরের অধীন হবিগঞ্জ ব্যাটালিয়নের আওতায় থাকা পাহাড়ি বনাঞ্চল, টিলা, চা-বাগান ও দুর্গম সীমান্ত এলাকায় বিজিবি সারা বছর ধরে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ঈদেও এর কোনো ব্যতিক্রম হয়নি। রেমা, কালেঙ্গা ও সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে সংলগ্ন এলাকায় চোরাকারবারীরা সুযোগ খোঁজে—তবে বিজিবির সতর্ক দৃষ্টিতে তাদের সব অপতৎপরতা প্রতিহত করা হচ্ছে।


বিজ্ঞাপন


এই প্রসঙ্গে ৫৫ বিজিবি’র অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. তানজিলুর রহমান বলেন, ‘বিজিবির প্রতিটি সদস্য জানেন—ঈদের আনন্দ তখনই পরিপূর্ণ, যখন দেশের সীমান্ত নিরাপদ থাকে। পরিবার থেকে দূরে থাকা কষ্টের হলেও এই ত্যাগেই রয়েছে গর্ব ও দেশপ্রেম। বিজিবির অন্যান্য ব্যাটালিয়নের মতো ৫৫ বিজিবির সদস্যরাও একে অপরের পরিবার হয়ে দিনগুলো পার করেন। তাঁদের নিষ্ঠা ও আত্মত্যাগ আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। একজন অধিনায়ক হিসেবে আমি তাঁদের জন্য গর্বিত।’

৫৫ বিজিবির তত্ত্বাবধানে এ বছর চোরাচালান ও মাদকদ্রব্য আটকের পরিমাণ ১৭ কোটি ৭৪ লাখ ৫৭ হাজার ৯১৯ টাকা।

ঈদের দিনেও সাতছড়ি ও তেলিয়াপাড়া বিওপি অভিযান চালিয়ে ৩৪ লাখ ৪১ হাজার ২৫০ টাকা মূল্যের ভারতীয় বিভিন্ন ধরনের শাড়ি, ১০৮ কেজি গাঁজা, ৭ বোতল বিয়ার এবং ১ বোতল মদ জব্দ করে।

হবিগঞ্জ ব্যাটালিয়ন (৫৫ বিজিবি)-এর এই নীরব, অথচ গভীর দেশসেবার প্রতিচ্ছবি ঈদের দিনেও আমাদের মনে করিয়ে দেয়—‘সবার আগে দেশ’।

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর