পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকায় নির্মিত নদী রক্ষা বাঁধের ২০০ মিটার অংশ ধ্বসে পড়েছে পদ্মায়। শনিবার (৭ জুন) সকালে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা জিরো পয়েন্টে এ ভাঙন দেখা দেয়। হঠাৎ করে নদীতে স্রোত বেড়ে যাওয়ায় বাঁধের বিশাল একটি অংশ ভেঙে যায়। এ ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে স্থানীয়দের মাঝে।
ভাঙনের কারণে আশপাশের এলাকা থেকে তিনটি বসতবাড়ি ও দুটি দোকান সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য স্থানীয়রা পার্শ্ববর্তী এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দা হাদিস শেখ বলেন, বাঁধের জন্য এতদিন নিরাপদে ছিলাম। কিন্তু এখন বসতবাড়ি ছেড়ে ফরাজীকান্দি গ্রামে আশ্রয় নিতে হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানিয়েছে, শরীয়তপুরের পদ্মা নদীর অংশ জাজিরার নাওডোবা এলাকা থেকে শুরু হয়েছে। পদ্মা সেতু নাওডোবার ওপর দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে পদ্মা নদীর ৫০০ মিটারের মধ্যে সার্ভিস এরিয়া-২, সেনানিবাস, পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানাসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। ওই সকল অবকাঠামো নির্মাণের জন্য যখন জমি অধিগ্রহণ করা হয় তখন ২০১২ সালের দিকে নাওডোবা এলাকায় পদ্মার ভাঙন শুরু হয়। পদ্মা সেতুর প্রকল্প এলাকা নদী ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা করার জন্য তখন সেতু থেকে ভাটির দিকে (পূর্ব দিকে) ২ কিলোমিটার এলাকায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীর তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। ওই বাঁধের সাথেই পরবর্তীতে নদী শাসনের বাঁধ সংযুক্ত করে দেওয়া হয়।
গত বছর নভেম্বর মাসে নাওডোবার জিরোপয়েন্ট এলাকায় ওই বাঁধের ১০০ মিটার অংশ নদীতে ধ্বসে যায়। এর পর মাঝিরঘাট এলাকায় আরও ১০০ মিটার অংশর বাঁধের নিচে থেকে মাটি সরে গেছে। এছাড়া বাঁধের বিভিন্ন অংশের কাছে নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
গত বছর নভেম্বরে ওই বাঁধের ১০০ মিটার অংশ নদীতে ভেঙে পরার পর বাঁধটিতে সমীক্ষা চালায় পাউবো ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ)। সমীক্ষায় দেখা যায় ১ কিলোমিটার অংশে বাঁধের কাছে নদী গভীর। সেখানে তলদেশ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। আর বাকি ১ কিলোমিটার অংশের বাঁধের কাছে নদী চলে এসেছে। সেখানেও মাটি ভেঙে নদীতে পরছে। তখন পাউবো বাঁধের ভেঙে পড়া অংশে সংস্কারের কাজ শুরু করে। গত মে মাসে জিরো পয়েন্ট এলাকার ১০০ মিটার অংশে ৩৩ হাজার বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধটির কিছু অংশ ভাঙ্গন কবলিত হওয়ায় আমরা সংস্কারের কাজ শুরু করেছিলাম। তার পাশে উজানের দিকে বাঁধের কিছু অংশ শনিবার হঠাৎ করে ভেঙে নদীতে বিলীন হয়েছে। বাঁধটি রক্ষার জন্য দুই-একদিনের মধ্যেই পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ শুরু করবে।
নদী রক্ষা বাঁধে একের পর এক ভাঙন প্রকল্প এলাকার নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলছে। দ্রুত এবং টেকসই সমাধান না হলে পদ্মা সেতু সংলগ্ন এলাকাকে ভবিষ্যতে আরও বড় ঝুঁকির মুখে পড়তে হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
প্রতিনিধি/এফএ