ঈদের দিন সকালে গোসল সেরে ঈদ জামাতে হাজির কারাবন্দীরা। নামাজ শেষে চিনিগুড়া পোলাও চালের পায়েস ও মুড়ি দিয়ে সকালের নাস্তা। নাস্তার পর নিজেদের মধ্যে কুশল বিনিময় এবং ক্ষণিক বিশ্রাম। তারপর সাড়ে ১১টার দিকে জেল সুপার কারাবন্দীদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। পরে তাদের দলনেতাদের মাঝে লুডু ও দাবা বিতরণ করেন।
এ দিন ঠিক দুপুর ১২টার দিকে ঘণ্টা বেজে উঠলো এবং মাইকে ঘোষণা দিয়ে দুপুরের খাবার নেওয়ার ডাক এলো। নানান বয়সী কারাবন্দীরা সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়ালেন খাবার সংগ্রহের জন্য। সেখানে পোলাও, মুরগির রোস্ট, গরুর মাংস, খাসির মাংস, সালাদ, পান, সুপারি ও মিষ্টি সাজানো ছিল। প্রথমেই সেলের পাঁচ কয়েদি (ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত) ও নারী বন্দীদের খাবার পাঠানো হয়। পরে সারিবদ্ধভাবে খাবার সংগ্রহ করেন কারাবন্দীরা। ঈদের দিন নড়াইল জেলা কারাগারে এ চিত্র দেখা গেছে ।
বিজ্ঞাপন
ঈদ মানে আনন্দ আর খুশি। আর এই ঈদের দিনে স্বজনদের ছেড়ে চার দেয়ালের মাঝে ঈদ কাটছে নড়াইল জেলা কারাগারের বন্দীদের! স্বজনদের ছেড়ে তাদের বেদনাবিধুর ঈদুল আযহাকে আনন্দে রূপ দিতে কারা কর্তৃপক্ষের চেষ্টার কমতি ছিল না।
কারাবন্দী বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, চার দেয়ালের মাঝে পরিবার ছাড়া ঈদ করাটা বেশ কষ্টের। ঈদের দিন পরিবারের লোকজন আসেন সাক্ষাতের জন্য, তাদের সঙ্গে দেখা করা ছাড়াও ফোনে পাঁচ মিনিট করে কথা বলার সুযোগ পাই। এর ফলে আমাদের কষ্টটা আমরা সাময়িক সময়ের জন্য ভুলে যাই। ঈদে কারাগারে ভালো খাবারের আয়োজন করা হয়। আমরা এই বিশেষ দিনে উন্নতমানের খাবার খাই, যেটাতে কিছুটা হলেও বাড়িতে থাকার অনুভূতি আসে। এরপর কারাগারে সবার সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করি। এছাড়া যাদের পরিবার দেখা করার জন্য আসেন, তাদের তো খুশির সীমানা থাকে না।
তারা আরও বলেন, কারাগারের পরিবেশ এখন পরিচ্ছন্ন। আমাদের খাবারও আগের তুলনায় অনেক ভালো। তবে বাইরে যারা আছেন, তাদের প্রতি আহ্বান যে কেউ অপরাধ কর্মের সঙ্গে জড়াবেন না। দেশের আইন মেনে চলুন ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকুন। জীবনটা অনেক সুন্দর, পরিবারের সঙ্গে জীবনটা উপভোগ করুন।
নড়াইল জেলা কারাগারের জেল সুপার সঞ্জয় ঘোষ বলেন, বিশেষ দিনে ২৯৫ জন কারাবন্দীর জন্য উন্নতমানের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই বিশেষ দিনে তাদের পরিবারের লোকজন সাক্ষাৎ করছেন, তারা নিয়ম মেনে ফোনে কথাও বলছেন। তাদের খেলাধুলাসহ সাংস্কৃতিক বিষয়ে অংশগ্রহণমূলক কার্যক্রম আমরা পরিচালনা করি। কারাগারের পরিবেশ আগের চেয়ে অনেক ভালো। আমরা চাই আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে তারা তাদের বাইরের জীবনটা সুন্দরভাবে গড়ে তুলক।
বিজ্ঞাপন
প্রতিনিধি/ এমইউ