নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার বুড়ির চর ইউনিয়ন পরিষদের ভিজিএফ ও জেলে কার্ডের চাল আত্মসাতের ঘটনায় এলাকাবাসীর হাতে সচিব ইয়াসিন আরাফাত ও তথ্য উদ্যোক্তা রাসেল অবরুদ্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং নৌবাহিনীর একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে সচিব এবং তার সহযোগী তথ্য উদ্যোক্তাকে উদ্ধার করে নেন। এসময় জব্দকৃত ৪০ বস্তা চাল ইউনিয়ন পরিষদের গুদামঘরে রাখা হয় বলে জানান বিক্ষুব্ধরা।
বৃহস্পতিবার (০৫ জুন) বিকেলে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির চাল বিতরণ শেষ হওয়ার আগে স্থানীয় রাজিব চৌকিদারের বাড়িতে সরকারি এ চাল ঢুকানোর সময় ঘটনার সূত্রপাত হয়।
বিজ্ঞাপন
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রিলিফের চাল আত্মসাতের খবর চারদিকে জানাজানি হওয়ার পর সন্ধ্যায় পাঁচ শতাধিক বিক্ষুব্ধ জনতা ইউনিয়ন পরিষদ ঘেরাও করে ফেলেন। এসময় রাজিব চৌকিদার ও মিরাজ চৌকিদার পালিয়ে যান। ইউনিয়ন পরিষদে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন সচিব ইয়াসিন আরাফাত এবং তথ্য উদ্যোক্তা রাসেল। খবর পেয়ে সন্ধ্যা সাতটার সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং হাতিয়ায় অবস্থানরত নৌবাহিনীর একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষুব্ধদের হাতে আটক ৪০ বস্তা চাল জব্দ করে ইউনিয়ন পরিষদের গুদামঘরে হেফাজত করেন। চাল আত্মসাতের সঙ্গে সম্পৃক্তদের উদ্ধার করে নেওয়ার সময় এদের (দোষীদের) বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দেন ইউএনও। পাশাপাশি উপস্থিত জনতাকে চৌকিদার-দফাদারসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে সরকারি আর কোনো মালামাল আছে কিনা তার খোঁজ খবর নিতে বলেন ইউএনও মো. আলাউদ্দিন।

স্থানীয় ফিরোজ মাহমুদসহ একাধিক ব্যক্তি ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেন। যেখানে ভুক্তভোগী বাসীন্দারা দীর্ঘদিন ধরে সচিব, তথ্য উদ্যোক্তা এবং দফাদার-চৌকিদারদের দ্বারা নানাভাবে হয়রানি হওয়ার কথা তুলে ধরেন।
এদিকে, প্রত্যক্ষদর্শী আমজাদ হোসেন নামের একজনে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ সচিব ইয়াসিন আরাফাত সব দুর্নীতি এবং লুটের ক্ষেত্রে সহযোগী হিসেবে ব্যবহার করেন তথ্য উদ্যোক্তা রাসেলকে। যিনি তার খালাতো ভাই। সেবার ক্ষেত্রে মানুষজন থেকে অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে টাকা নিয়ে থাকেন তথ্য উদ্যোক্তা রাসেল। যা সচিবসহ ভাগবাটোয়ারা করে খান। মালামাল লুটের ক্ষেত্রে ব্যবহার করে থাকেন দফাদার-চৌকিদারদের।
বিজ্ঞাপন
বুড়িরচর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি কাফি ফরাজি জানান, সচিব তার চৌকিদার-দফাদারদের মাধ্যমে প্রায় সময় সরকারি মালামাল লুট করে থাকেন। আজ হাতেনাতে ধরা পড়েছে।
তিনি আরও জানান, এলাকার ২২০ জন দুস্থ মানুষের জন্য দুই বছর মেয়াদি এক প্রকল্প সহায়তা আসে। অথচ এর জন্য সচিব তার খালাতো ভাই (তথ্য উদ্যোক্তা) রাসেলকে দিয়ে পাঁচ হাজার মানুষ থেকে একশ' টাকা করে নিয়ে আবেদন করান। সরকারি যেকোনো সহায়তা বিলির সময় অল্পকিছু কার্ড/স্লিপ ধারীদের দিয়ে বাকিসব চৌকিদারদের মাধ্যমে সরিয়ে ফেলেন সচিব ইয়াসিন আরাফাত। সচিব বুড়িরচর ইউনিয়ন পরিষদকে এক অনিয়ম-দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করে ফেলেছেন বলে জানান ইউনিয়ন বিএনপির এ নেতা।
সচিব এবং তথ্য উদ্যোক্তার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় প্রতিবেদক ঘটনার বিষয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি।
এবিষয়ে হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন জানান, চাল আত্মসাতে দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

