সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

‘জাতীয় পরিবেশ পদক ২০২৪’ পাচ্ছেন তেঁতুলিয়ার পরিবেশকর্মী মামুন

জেলা প্রতিনিধি, পঞ্চগড়
প্রকাশিত: ০৫ জুন ২০২৫, ০৬:১১ পিএম

শেয়ার করুন:

জাতীয় পরিবেশ পদক ২০২৪ পাচ্ছেন তেঁতুলিয়ার পরিবেশকর্মী মামুন
গ্রামের শিশুদের চারাগাছ উপহার দিচ্ছেন মাহমুদুল ইসলাম মামুন। ছবি: ঢাকা মেইল

দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে ব্যক্তিগত উদ্যোগে পরিবেশ রক্ষায় কাজ করে চলেছেন পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার পরিবেশকর্মী মাহমুদুল ইসলাম মামুন। নিঃস্বার্থভাবে চারাগাছ উপহার, প্লাস্টিক রিসাইকেল, বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা ও পথঘাট পরিচ্ছন্ন রাখার কাজে অসামান্য অবদান রাখায় এবার তিনি পাচ্ছেন জাতীয় পরিবেশ পদক ২০২৪।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণে ব্যক্তিগত উদ্যোগ ক্যাটাগরিতে এ বছর এই পদক দেওয়া হচ্ছে মাহমুদুল ইসলাম মামুনকে।


বিজ্ঞাপন


মামুনের বাড়ি পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার আজিজনগর গ্রামে। তিনি মৃত আজাহারুল ইসলাম ও মাহমুদা বেগমের সন্তান। রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করা এই তরুণ কোনোদিনও পেট্রোলচালিত যান ব্যবহার করেননি। পুরোনো একটি বাইসাইকেলই তার পরিবেশ-সংরক্ষণের যাত্রাসঙ্গী।

সাইকেলের সামনে বইয়ের ঝুড়ি, পেছনে চারাগাছ ও প্লাস্টিক সংগ্রহের ব্যাগ—এই নিয়েই ছুটে চলেন গ্রাম থেকে গ্রাম। ‘একজনের মাঝে দশ’ স্লোগানে শিশু-কিশোরদের মাঝে বই পড়ার আগ্রহ তৈরি করছেন, পাশাপাশি উপহার দিচ্ছেন ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা।

নিজ বাড়ির উঠোনে গড়ে তুলেছেন ‘প্রকৃতির পাঠাগার’। এখানে নিয়মিত বই পড়া শিশুদের চারাগাছ ও সবজির বীজ উপহার হিসেবে দেওয়া হয়। প্রতিদিন বিকেলে নিজ হাতে চারা তৈরি ও প্যাকেট প্রস্তুতের কাজ করেন।

মামুন বলেন, ‘আমি চাই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নিজ হাতে চারা তৈরি করে মানুষকে উপহার দিতে। এটা আমার ইবাদতের মতো। আমি বিশ্বাস করি, প্রকৃতির সেবা মানেই মানুষের সেবা।’


বিজ্ঞাপন


তিনি আরও জানান, ‘শিশুদের বই পড়ার অভ্যাস গড়তে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বই পৌঁছে দিই। তারা যখন বই পড়ে শেষ করে, আমি আবার গিয়ে নতুন বই দিয়ে আসি। সঙ্গে উপহার দেই একটি গাছ। এখন অনেকেই আমার দেওয়া গাছের ফল খাচ্ছেন—এটাই আমার আনন্দ।’

তাঁর এই উদ্যোগে ইতোমধ্যে বিতরণ করেছেন প্রায় পাঁচ লাখ চারা। রাস্তার পাশে জঙ্গল ও আগাছার কারণে দুর্ঘটনা কমাতে নিজ হাতে প্রতিদিন তা পরিষ্কার করেন তিনি।

পরিবেশ সচেতনতা তৈরির অংশ হিসেবে বাজারের ফেলা দেওয়া প্লাস্টিক ও ময়লা সংগ্রহ করে তা রিসাইকেল করে চারা প্যাকেজিংয়ে ব্যবহার করছেন মামুন।

যদিও এই দীর্ঘ পথ চলায় সামাজিক প্রতিকূলতাও পোহাতে হয়েছে তাকে। প্রতারণা ও অবহেলার শিকারও হয়েছেন বহুবার। কিন্তু কখনও দমে যাননি। বলেন,

‘লোভী ও স্বার্থপরদের আচরণে কষ্ট পেয়েছি, তবুও তাদের সুস্থতা কামনা করেছি। আমি বিশ্বাস করি, প্রকৃতি কাউকে ছেড়ে দেয় না।’

evn

জাতীয় পরিবেশ পদক প্রসঙ্গে মামুন বলেন, ‘বছরের পর বছর পরিবেশ অধিদফতরের পরামর্শে আবেদন করে গেছি। অবশেষে ২ জুন পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে ফোন পেয়ে জানতে পারি, এবার পদক পাচ্ছি। এটা আমার জন্য মানসিক শক্তি। আমি কৃতজ্ঞ। আল্লাহর কাছে দোয়া করি, যেন আমৃত্যু পরিবেশ ও মানুষের জন্য কাজ করে যেতে পারি।’

মাহমুদুল ইসলাম মামুনের কর্ম ও অবদান আজ শুধুমাত্র তেঁতুলিয়া নয়, গোটা দেশের জন্যই এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। এমন পরিবেশকর্মীর হাতে জাতীয় পরিবেশ পদক তুলে দেওয়া নিঃসন্দেহে দেশের পরিবেশ আন্দোলনকে আরও উৎসাহিত করবে।

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর