সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

কুমিল্লায় জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট 

জেলা প্রতিনিধি, কুমিল্লা
প্রকাশিত: ০২ জুন ২০২৫, ০৫:৪৭ পিএম

শেয়ার করুন:

কুমিল্লায় জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট 

পবিত্র ঈদুল আজহার আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। ঈদকে সামনে রেখে বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে কুমিল্লা জমতে শুরু করেছে কোরবানির পশুর হাটগুলো। বাজারে বিক্রেতা ও ক্রেতাদের জন্য বিভিন্ন প্ররকারের লোভনীয় সুযোগ সুবিধার কথা বলে কুমিল্লায় করা হচ্ছে মাইকিং। এ বছর কুমিল্লার ১৭টি উপজেলায় মোট ৪০১টি স্থানে কোরবানির পশুর হাট বসছে।

সোমবার (২ জুন) কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন এবং বরুড়া পৌরসভা এলাকায় এবার কোনো পশুর হাট বসছে না বলে জানা গেছে।


বিজ্ঞাপন


comilla_1

ঈদকে সামনে রেখে এ বছর কুমিল্লায় বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাট স্থাপন করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী এসব হাটের মেয়াদকাল হবে ঈদের আগ থেকে দিনসহ ঈদের পরের দুই দিন  বাজার থাকে কোন কোন স্থানে। 

তবে এখনও আশানুরূপ বিক্রি শুরু হয়নি বলে জানিয়েছেন পশু বিক্রেতারা। আগামী দু-এক দিনের মধ্যেই হাটগুলোতে জমজমাট বেচাকেনা শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিক্রেতারা।

comilla_2


বিজ্ঞাপন


জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় জানায়, কুমিল্লায় কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে- গরু ১ লাখ ৯১ হাজার ৮২টি, মহিষ ৬০৮, ছাগল ৫৬ হাজার ৯৪০, ভেড়া ১১ হাজার ৮০৫ ও অন্যান্য পশু ৩১৭টি। চাহিদার চেয়ে ২৩ হাজার ১৬৬টি পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। এসব পশু অন্য জেলাগুলোতে সরবরাহ করা যাবে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় আরও জানায়, উপজেলাভিত্তিক পশুর সংখ্যা হলো- আদর্শ সদরে ১৬ হাজার ৭৬৩টি, সদর দক্ষিণে ৯ হাজার ৬৪৯, চৌদ্দগ্রামে ১৩ হাজার ৩৯৯, নাঙ্গলকোটে ২৭ হাজার ১৭৪, লাকসামে ৩৩ হাজার ৮৬৭, বরুড়ায় ২৩ হাজার ১২, চান্দিনায় ১৫ হাজার ২১০, মনোহরগঞ্জে ১১ হাজার ৯১১, লালমাইয়ে ১৯ হাজার ২৩৮, দাউদকান্দি ৯ হাজার ২৫০, দেবিদ্বারে ১৪ হাজার ৮৪২, মুরাদনগরে ১৯ হাজার ৪৯, বুড়িচংয়ে ৯ হাজার ৬৬৪, ব্রাহ্মণপাড়ায় ৮ হাজার ৭৬৪, হোমনায় ১৩ হাজার ৩৬২, মেঘনায় ৮ হাজার ৭২৭ ও তিতাসে ৬ হাজার ৮৭১টি পশু।

comilla_3

খামারিরা বলছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও গোখাদ্যের সংকটের মধ্যেও প্রান্তিক খামারি ও কৃষকরা পশু লালন করেছেন। তবে তারা শঙ্কায় রয়েছেন ভারতীয় গরুর অনুপ্রবেশ নিয়ে। তারা বলছেন, যদি ভারতীয় গরুর আধিপত্য বাড়ে, তবে লোকসানে পড়বেন তারা।

বিজিবি জানিয়েছে, সীমান্তে টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। চোরাচালান ঠেকাতে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে।

আদর্শ সদর উপজেলার আবদুল বারেক  মিয়া, জানান ‘তিনটি কোরবানিযোগ্য গরু খামারে আছে। সব খাবার কিনে দিতে হয়, খরচ বেড়েছে অনেক। প্রতিবছরই আমরা অন্তত ৮-১০টি গরু পালন করি। গোখাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে পশুর লালনপালন খরচও বেড়েছে। এবারও ৩টি গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করছি। তাই প্রত্যাশিত দাম না পাওয়া পর্যন্ত বিক্রি করছি না। ঈদ আসতে আরও বেশ কিছুদিন সময় আছে। এর মধ্যে কিছুটা লাভ পেলেই বিক্রি করে দেব।’

comilla_4

 বাজারে গরু ব্যবসায়ী গোলাম মোস্তফা  বলেন, ‘খামারের গরুর চেয়ে বাড়িতে লালনপালন করা গরুর চাহিদা বেশি। তাই গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে গরু দেখছি। তবে এবার দাম অনেক বেশি চাচ্ছেন খামারিরা। ফলে আগের বছরগুলোর চেয়ে এবার বেশি দামে পশু কিনতে হবে ক্রেতাদের।’

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা চন্দন কুমার পোদ্দার বলেন, গ্রামাঞ্চলে এখনও অনেক খামারি নিজ নিজ ঘরে এক থেকে দুটি করে দেশি জাতের পশু লালনপালন করছেন। ‘১৭টি উপজেলায় ৩৬ হাজার খামারি রয়েছেন। তাদের পশু দিয়ে জেলার চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত পশু পার্শ্ববর্তী জেলায় বিক্রি করা যাবে।’ হাটগুলোতে নিয়মিত মনিটরিং করছি।

বিজিবির-১০ অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মীর আলী এজাজ বলেন, ‘সীমান্তে চোরাচালান অনেক কমেছে। শাহপুর, চৌদ্দগ্রাম ও শিবের বাজার এলাকাগুলোতে বিজিবি টহলে রয়েছে। এবার ভারতীয় গরু ঢুকতে পারবে না।’

comilla_5

এদিকে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে হাটগুলোতে পশুর স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধান ও রোগনির্ণয়ের জন্য ভেটেরিনারি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে। এ ছাড়া নগরীতে হাটগুলোতে জাল টাকা শনাক্তকরণ ব্যবস্থা, ব্যাংকের বুথ ও ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরাও রাখা হয়েছে।

কুমিল্লা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খাঁন বলেন, বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি ও হয়রানি যাতে না হতে পারে, সেদিকে আমাদের বিভিন্ন পরিকল্পনা রয়েছে। গেল ঈদের মত এবারও শান্তিপূর্ণভাবে মানুষ ঈদ উদ্‌যাপন করবে।

এছাড়া জাল টাকা শনাক্তকরণ ও লেনদেন-সংক্রান্ত বুথ স্থাপনে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘হাটে চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি প্রতিরোধে টহল বৃদ্ধির পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হবে। সার্বিক নিরাপত্তায় হাটকেন্দ্রিক পুলিশের কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। কোনো পশুবাহী গাড়ি জোরপূর্বক হাটে আনা যাবে না।

dijpur_1

এর আগে  জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত পবিত্র ঈদ উল আযহার প্রস্তুতি সভায় সভার সভাপতি কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো: আমিরুল কায়সার জানান, পশুবাহী ট্রাক যেন কোনোভাবেই কোনো বাজারের ইজারাদার কর্তৃক থামানো না হয়, সেদিকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সজাগ দৃষ্টি রাখবে। এছাড়া মহাসড়কের পাশে যেন কোনো হাটবাজার অবৈধভাবে বসতে না পারে, সেদিকেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নজর রাখবে।

কুমিল্লা চৌয়ারা  শহরের কাছাকাছি সবচেয়ে বড় গরু বাজার।  র‍্যাব ১১ সিপিসি ২ কোম্পানি কমান্ডার মাহমুদুল চৌয়ারা বাজার পরিদর্শন করে বলেন, আমরা র‍্যাবের পক্ষ থেকে বাজার এগুলোতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেয়া হবে যাতে করে কোন প্রকার চাঁদাবাজি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে।তাছাড়া র‍্যাবের বিশেষ টিম সার্বক্ষণিক টহল ও নজরদারি রাখবে।

প্রতিনিধি/ এজে

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর